বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কচুরিপানায় স্বাবলম্বী শত নারী

  •    
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:২৬

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার কালুরপার এলাকায় ‘প্রকৃতি’ নামের একটি সংগঠনের প্রকল্প ‘বিবর্তন হ্যান্ড মেইড পেপার প্রজেক্ট’ কচুরিপানা থেকে এই কাগজ তৈরি করছে। এই প্রকল্পে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন গ্রামের সাধারণ অনেক নারী।

একসময় এটি আগাছা হিসেবে পরিচিত ছিল । এখন গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেই সবাই এ উদ্ভিদটিকে চেনে। তবে সার হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। হ্যাঁ কচুরিপানার কথাই বলা হচ্ছে।

জলাশয়ে জন্ম নেয়া এ উদ্ভিদটি এখন বরিশালের প্রায় এক শ নারীর জীবিকার প্রধান উৎস। কচুরিপানা দিয়ে তারা তৈরি করছেন কাগজ। দেশের বাজারে খুব একটা চাহিদা না থাকলেও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এই কাগজ। শুধু কাগজই নয় সেই কাগজ দিয়ে তৈরি নানা ধরনের কার্ড, নোট বুকসহ বিভিন্ন গহনা। এইসব পণ্য যাচ্ছে ইতালি, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার কালুরপার এলাকায় ‘প্রকৃতি’ নামের একটি সংগঠনের প্রকল্প ‘বিবর্তন হ্যান্ড মেইড পেপার প্রজেক্ট’ কচুরিপানা থেকে এই কাগজ তৈরি করছে। এই প্রকল্পে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন গ্রামের সাধারণ অনেক নারী।

এই প্রকল্প শুধু কচুরিপানাই নয়, পাট ও হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করছে ঝুড়িসহ নানা কিছু।

বিবর্তন হ্যান্ড মেইড পেপার প্রজেক্ট ১৯৯৩ সাল থেকে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করে। শুরুটা ১১/১২ জনকে নিয়ে হলেও এখন কাজ করছেন প্রায় এক শ নারী। বিদেশি একটি সংস্থা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছিল এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

‘প্রকৃতি’ সংগঠনের নারী কর্মীরা পাট ও হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করছে ঝুড়িসহ

সেখানে কর্মরত নীতি রানী বলেন, ‘প্রথমে আমরা কচুরিপানা আনি। তারপর সেইটা কুচি কুচি করে টুকরা করি। এরপর সিদ্ধ করি।

‘সিদ্ধ করার পর ওই কচুরি আইন্যা ধোয়া হয়। ধুইয়া কিছু নষ্ট কাগজ মানে ফালানো কাগজ দিয়া মেশাই। হেরপর তা চাপা দিতে হয়। চাপা দিয়া জল ঝরাইয়া কাপড়ের সঙ্গে শুকাইতে হয়।

‘শুকানোর পরেই কাপড়টা কাগজ থেকে আলগা হইয়্যে যায়। এরপর কাগজ পেলেইন মেশিনে দিয়া পেলেইন কইর‌্যে সাইজ আর রং দিই। আর মাল বানানের পর ওইয়া বিদেশে যায়।’

কচুরিপানা থেকে তৈরি কাগজ দিয়ে সাজানো ঘর

এখানে টানা ২৭ বছর ধরে কাজ করছেন পশ্চিম সুজনকাঠি এলাকার সুনীতি কর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কচুরিপানা দিয়া কাগজ তৈরি হয়। এ কাজ কইরাই আমার ছেলেদের পড়াশুনা করাইছি। এদের মধ্যে ছোট ছেলে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। আমরা ভালোই আছি।

‘আমাদের এই কাজগুলা সব বিদেশে নিয়া যায়। হাজার হাজার আইটেম বানাই। যার মধ্যে জুয়েলারি আইটেম বেশি। সেগুলোও কচুরিপানার কাগজ দিয়েই তৈরি হয়।’

দেশে এর বাজার কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এগুলোর সেল খুব কম। তবুও সোর্স আছে। তারা কিছু নেয়।’

এখানে ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন শীলা কীর্তনীয়া। বিধবা এই নারী জানান, তিনি এখানে কার্ড, ছবি ফ্রেম, নোট বুক, বক্স আর অ্যালবাম বানান। এই কাজ করেই তার সংসার চলে।

কচুরিপানার কাগজ থেকে ঘর সাজানোর দ্রব্য তৈরিতে ব্যস্ত এক নারী

বিবর্তন হ্যান্ড মেইড পেপার প্রজেক্টের ম্যানেজার অঞ্জন কুমার বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে জিনিসগুলো সবাই ফেলে দিচ্ছে, ব্যবহার করছে না সেগুলো ব্যবহার করে আমরা নানা পণ্য তৈরি করছি।

‘ক্রিসমাসের আগে আমাদের কাজের খুব চাপ থাকে। এ ছাড়া আমরা হোগলা পাতা ও জুট দিয়ে বাস্কেট তৈরি করে থাকি। তবে আমাদের মূল প্রকল্প হচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে কাগজ তৈরি করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রায় এক শ নারী কাজ করেন। তবে স্থায়ীভাবে কাজ করছেন ৬০ জন। ইতালি, জার্মানি, কানাডা, কোরিয়াসহ প্রায় ২৩টি দেশ থেকে অর্ডার আসে। আমরা তাদের চাহিদা মোতাবেক কাজ করে থাকি। আমাদের যে ক্রিয়েটিভ কাজগুলো রয়েছে সেগুলোও তারা নিয়ে থাকে।

চলছে কাগজ তৈরির কাজ

‘এখানে যারা কাজ করেন তারা প্রায় সবাই প্রত্যন্ত এলাকার নারী। অনেকের অনেক ট্র্যাজেডি আছে জীবনে। আমরা পাঁচ থেকে নয় হাজার টাকা বেতন দিয়ে থাকি। আর এই প্রজেক্ট থেকে আমাদের মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে।’

এ বিভাগের আরো খবর