কোনো খাঁচায় ব্রাজিলের একজোড়া ম্যাকাও বসে আছে। আবার কোনো খাঁচায় ধবধবে সাদা অ্যালবিনো রিং নেক। আছে ইউরোপের ময়ূরও।
এগুলো কোনো চিড়িয়াখানার খাঁচার পাখি নয়। পাখি ভালোবেসে বাড়ির ছাদে গড়ে তোলা সংগ্রহশালার।
এই সংগ্রহশালা নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজারের থানা পুকুড়পার এলাকার বজলুল রশিদ সেলিমের। ছোটবেলা থেকেই রংবেরঙের পাখির প্রতি তার ছিল বিশেষ আগ্রহ।
নিজের সংগ্রহের পাখি হাতে সেলিম। ছবি: নিউজবাংলাসেলিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাখির প্রতি প্রেম ছোটবেলা থেকেই। বনের শালিক ছাড়াও বেজি, বিড়াল, কুকুর, বানর, সাপও পুষেছি ছোটবেলায়।’
একসময় তার গার্মেন্টসের ব্যবসা ছিল। ২০১১ সালে হার্টের অপারেশনের পর কাজ থেকে নিয়েছেন ছুটি। তখন শুরু করেন এই বিশেষ পাখি সংগ্রহশালা তৈরির কাজ।
তবে তার সংগ্রহশালায় নেই কোনো দেশি প্রজাতির পাখি। আছে ৫০ প্রজাতির বেশি তিন শতাধিক জোড়া বিদেশি পাখি।
পাশাপাশি দুই বাড়ির ছাদে প্রথমে ৫০ জোড়া বাজরিগার দিয়ে শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে আনেন অন্য পাখি।
সেলিম নিউজবাংলাকে জানান, পাখিগুলো তিনি আমদানিকারক ও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ম্যান্ডারিন ডার্ক ব্রিড করাতে সফল হয়েছেন।
তিনি জানান, মূলত শাকসবজি ও বিভিন্ন শস্যের দানা পাখির প্রিয় খাবার। তবে কিছু পাখিকে বাড়তি খাবারও দিতে হয়।
পুরো এলাকা থেকে কৌতূহলী মানুষ আসেন তার সংগ্রহ দেখতে। নারায়ণগঞ্জের বাইরের মানুষও আসেন। সেলিমের কাছে তারা জানতে পারেন এসব পাখির নানা তথ্য।
সেলিম বলেন, ‘দর্শনার্থীরা আমার অতিথি। খোলা জায়গায় পাখির উড়ে বেড়ানো দেখতে তারা ভীষণ ভালোবাসেন। আমারও ভালো লাগে তাদের আনন্দ দেখতে। খাঁচায় রাখা এবং খাঁচার বাইরে ছেড়ে দেয়া পাখির সঙ্গে তারা ছবিও তোলেন।’
তবে সেলিমের সংগ্রহের পাখি দেখতে আসলে মানতে হবে একটি শর্ত। সেই শর্ত হলো তার সঙ্গে একবেলা খেয়ে যেতে হবে।
এখন তার ছাদে আর পাখির জায়গা না হওয়ায় পাখিপ্রেমীদের কাছে বিক্রি করেন পাখির ছানা।
কী কী পাখি আছে সেলিমের সংগ্রহে
সেলিম জানান, তার সংগ্রহে আছে ব্রাজিলের ম্যাকাও, মলক্কান কাকাতুয়া, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, অমাজন, ইলেকটাস প্যারট, গোল্ড ম্যাকাও, ক্যাটাগনিয়ান কনুর, গালা কাকাতুয়া, অস্ট্রেলিয়ান কিং প্যারট, বসুপার প্যারাকিট, ক্রিমসন বেলি কনুর, ককাটেল, ইংলিশ বাজরিগার, অস্ট্রেলিয়ান বাজরিগার, জাপানিজ ক্রিস্টেট বাজরিগার, টারকুইজিন, ম্যান্ডারিন ডার্ক, উট ডার্ক, ডায়মন্ড ডাভ, লাভবার্ড, গ্রিন চিক কনুর, চ্যাটারিং লরি, ইয়োলো বিপ লরি, রেড লরি, মলক্কান রেড লরি, ব্লু মাউন্টেন লরি, রেইনবো রেড কালার লরি, পারফেক্ট লরি, কার্ডিনাল লরি, সান কনুর, গোল্ডেন হেড কনুর, ইয়েলো সাইডেড কনুর, পাইনঅ্যাপল কনুর, ব্লু কনুর, লুটিনো রিংনেক, এলবিনো রিংনেক, টেল রিং নেক, এলবিনো ক্রিস্টেট ফিঞ্চ, প্যারাডাইজ ওয়েদা, জেব্রা ফিঞ্চ, পাইড, হল্যান্ডের মোরগ, ইউরোপের ময়ুর, মেন্ডেলীয় হাঁস।
সেলিম মনে করেন, সরকারি সহায়তা পেলে অনেকেই গড়ে তুলতে পারবে পাখির এমন সংগ্রহশালা।