জীবিকার জন্য কত বিচিত্র কাজই না করে মানুষ।
এই যেমন শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সী টেমাল সাংমা।
করোনায় আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি খুঁজে পেয়েছেন নতুন এক পন্থা, যেটি আগে কখনও করেননি, যদিও বিষয়টি এলাকায় একেবারে নতুন এমনও না।
পিঁপড়ার ডিম বেচে আয় করেন টেমাল। তিনি ছাড়াও ওই এলাকার গারো পাহাড়ের আরও অন্তত ১০০ ব্যক্তি একই কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করছেন গাড়ো পাহাড়ের এক যুবক। ছবি: নিউজবাংলা
টেমাল সাংমা বলছিলেন তার গল্পটি।
‘পাহাড়ে আমাগো বাড়ি। অনেক কষ্ট কইরা জীবন সংগ্রাম কইরাই আমরা থাহি। আমাগো বাবা-মা অনেক কষ্ট কইরা আমগরে নিয়া সংসার চালায়। বাবা-মা স্পটে কাজ কাম কইরা সংসার চালায়। এমনিতে কাজকাম নাই পাহাড়ে।
‘করোনা আওয়ার পর পিকনিক স্পটও বন্ধ আছিল অনেক দিন। তাই সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়ছিল। এহন স্পট খুললেও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় লোকজনও তো আগের মতো আহে না। এহন পিঁপড়ার ডিম বেইচ্যা সংসার চালাই।
‘আমগোর এলাকার ২০ থেকে ২৫ জন পাহাড়ের গাছগাছালি থেইক্যা পিঁপড়ার ডিম পাইড়া বেইচ্যা টেহা কামাই করে। তাই আমিও তাদের দেহাদেহি পিঁপড়ার ডিম পাইড়া দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টেহা কামাই করি। ওই টেহা দিয়েই সংসার চলে আমগোর।’
পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন গারো পাহাড়ের বাসিন্দা টেমাল । ছবি: নিউজবাংলা
তবে এই কাজেও এখন প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে টেমালকে।
‘আগে গাছ থাইকা পিঁপাড়ার ডিম পাড়া লোকের সংখ্যা কম ছিল। এহন বাড়ছে।’
পিঁপড়ার ডিম কারা কেনে? কেন কেনে?
জবাবটা দিলেন আরেক ডিম সংগ্রহকারী মজিদ মিয়া।
জানান, এই ডিম বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে মাছের আধার হিসেবে ব্যবহার হয়। মাছের কাছে লোভনীয় খাবার তা। তাই মাছ শিকারিদের কাছে এর চাহিদা অনেক।
সংগ্রহ করা পিঁপড়ার ডিম। ছবি: নিউজবাংলা
বর্তমানে এক কেজি পিঁপড়ার ডিম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শেরপুর শহরের উত্তর গৌরীপুর মহল্লার মাছ শিকারি মতিউর রহমান বললেন, ‘আমি এমনিতে সিএনজি চালাই। যহন কামকাজ না থাহে তহন মাছ মারি। মাছ মারাডা ছোডবেলা থাইক্কা আমার একটা নেশা। মাছ মারার জন্য আমি পিঁপড়ার ডিম ব্যবহার করি।
‘ডিম দিয়া মাছ মারলে মাছে খায় বেশি। মাছ শিকার করাও যায় বেশি।’
পাহাড়ে সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশীয় গাছে ডোল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তারা ডিম পাড়ে।
বড় বাসা থেকে এক শ থেকে দেড় শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষে ফাল্গুন মাসে। যদিও এই সময় ডিমের চাহিদা থাকে কম।
বাকাকুড়া এলাকার পিঁপড়ার ডিম ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক জানান, বাকাকুড়া, রাংটিয়া, গজনী, নকশির কয়েকজনের কাছ থেকে পিঁপড়ার ডিম পাইকারি মূল্যে কিনে রাখেন। পরে মাছ শিকারি ও শেরপুরের দোকানে বিক্রি করেন।
অন্য ব্যবসার পাশাপাশি এ ব্যবসা থেকেও আয় হয়ে থাকে।
দিনে ৫ থেকে ১০ কেজি ডিম বিক্রি করতে পারেন বলে জানান সিদ্দিক।
শেরপুর জেলা শহরের পাইকার সফিউল ইসলাম জানান, তিনি দিনে পিঁপড়ার ডিম বেচে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় করেন।