সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ভাষার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক নৃগোষ্ঠীর ভাষা। বাংলাদেশেও এমন বিপন্ন ভাষা রয়েছে অন্তত ১৪টি। এর মধ্যে কোনো কোনোটির কথা বলা লোকের সংখ্যা এক হাজারেরও কম। এদের মধ্যেও সবচেয়ে বিপন্ন বান্দরবানের আলীকদমের রেংমিটচা ভাষা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী এ ভাষায় কথা বলছেন মাত্র ২০ জন। ভাষাটির কোনো লেখ্য রূপ না থাকায় একে অতি বিপন্ন ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ভাষাটি যারা ব্যবহার করেন, অন্য ভাষাভাষী পরিবারে বিয়ে বা অন্য সূত্রে আত্মীয়তা হওয়ায় তারাও এখন ভাষাটির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার ভুলতে বসেছেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাষাটির কোনো লেখ্য লিপি নেই। যারা এটি ব্যবহার করেন তারাও এই ভাষায় সব কথা বলতে পারেন না।
‘অল্প কিছু শব্দ তারা বলতে পারেন। এগুলোকে বলে বিপন্ন ভাষা। প্রতি তিন দিনে পৃথিবীতে একটি ভাষার মৃত্যু হয়। এটা অনিবার্য বাস্তবতা। তবে এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ ভাষার মধ্যে একটি জাতির সমাজ দর্শন থাকে। যতটুকুই পাওয়া যায় তা মানবজাতির সম্পদ।’
১৯৬০ সালে জার্মান নৃবিজ্ঞানী লরেন্স লোফলার প্রথম রেংমিটচা গোষ্ঠীর সন্ধান পান। এই জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক রীতিনীতির সঙ্গে ম্রো সম্প্রদায়ের মিল থাকলেও তাদের ভাষা ভিন্ন। এই ভাষাটি সাইনো-তিব্বতীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। এ পরিবারের অন্য ভাষাগুলো হলো মারমা, ককবরক, গারো, ম্রো, মনিপুরী মেইথেই, কোচ, রাখাইন, বম, খিয়া, খুমি, চাক, পাঙ্কয়া, পাত্র এবং লুসাই।
এর মধ্যে বম ও খিয়া ভাষায় কথা বলছেন ৩ হাজার ৮৯৯ জন, খুমিতে ৩ হাজার ৬৯৯ জন, চাক ২ হাজার ৮৩৫, পাঙ্কয়া ২ হাজার ২৭৪ এবং লুসাই ভাষায় মাত্র ৯৫৯ জন। এ সবই রয়েছে বিপন্ন ভাষার তালিকায়।
বিপন্ন অন্য ভাষাগুলোর মধ্যে কোল ভাষায় কথা বলছেন ২ হাজার ৮৩৪ জন, খারিয়াতে ১ হাজার জন আর সৌরায় কথা বলছেন ১ হাজার জন।
জীনাত ইমতিয়াজ বলেন, ‘রেংমিটচা ভাষার যেটুকু পাওয়া যায়, সেটুকুই সংরক্ষণ করা যাবে। একটা ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে ওই ভাষিক সম্প্রদায়ের সমস্ত জ্ঞানবিজ্ঞান চেতনা থেকে মানবজাতির বঞ্চিত হওয়া। কিন্তু পৃথিবীর বাস্তবতা প্রতি তিন দিনে একটি ভাষার মৃত্যু।’