বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৪১ ভাষার মধ্যে পাঠ্যবই মাত্র ছয়টির

  •    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৭:৫৬

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের হিসাবে দেশে বাংলাসহ মোট ৪১টি ভাষার প্রচলন আছে। এর মধ্যে বাংলা ভাষার বাইরে পাঠ্যবই প্রণয়ন করা গেছে পাঁচটি ভাষায়।

দেশে প্রচলিত ৪১টি ভাষার মধ্যে মাত্র ছয়টি ভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে শিশুরা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, লিখনবিধি না থাকায় বেশিরভাগ ভাষায় পাঠ্যবই তৈরি করা দুরুহ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, দেশে বাংলাসহ মোট ৪১টি ভাষার প্রচলন আছে। এর মধ্যে বাংলা ভাষার বাইরে পাঠ্যবই প্রণয়ন করা গেছে পাঁচটি ভাষায়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গবেষণা কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৭ থেকে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই নৃগোষ্ঠীগুলো হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা (ককবরক), গারো ও ওঁরাও (সাদরি)।

‘এর মধ্যে চাকমা ও মারমা ভাষার বইগুলো তাদের নিজস্ব লিপিতে লেখা। কিন্তু বাকি তিনটি নৃগোষ্ঠীর বই লেখা হচ্ছে কোনোটি বাংলা লিপিতে, কোনোটি রোমান হরফে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে পর্যন্ত এই বইগুলো ছাপা হচ্ছে। এর বিস্তৃতি বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। মাতৃভায়ায় বই ছাপানোর কারণে এসব নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সাড়া পড়েছে। তারা তাদের ভাষায় এগুলো পড়তে পারছে।’

দেশে টিকে থাকা ভাষাগুলোর মধ্যে ১৪টি ভাষার কোনো লেখ্যরুপ না থাকায় এগুলো সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। লেখ্যরূপ না থাকায় প্রণয়ন করা যাচ্ছে না পাঠ্যবইও।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা ছাড়া সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা চাকমা। এ ভাষায় এখন কথা বলে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮ জন। এর পরেই সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ২ হাজার ৯৭৪ জন কথা বলে মারমা ভাষায়। এছাড়া ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১২ জন কথা বলে সাঁওতালি, ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮ জন ককবরক ও ৮৪ হাজার ৫৬৫ জন কথা বলে গারো ভাষায়।

আর সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে রেংমিরচা ভাষা। মাত্র ২০ জন মানুষ কথা বলে এ ভাষায়। এছাড়া এ তালিকায় থাকা নেপালি ভাষায় কথা বলছে পাঁচ শ জন, লুসাই ভাষায় ৯৫৯ জন, খারিয়া ও সউরা ভাষায় ১ হাজার জন করে কথা বলছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা বিষয় হলো কোনো ভাষার লিখন বিধি আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে ওই ভাষাটি সহজে ব্যবহার করা যাবে। কিছু ভাষা আমাদের দেশে আছে যেগুলোর লিখনবিধি নেই।’

‘আমরা একটি লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে করেছি। আমরা দেখেছি, বাংলা ছাড়াও দেশে ৪০টি ভাষা আছে। এগুলোকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। একটাকে বলা যায়, লিখনবিধি আছে এমন ভাষা। এ ধরনের ভাষার সংখ্যা কম। ছয় থেকে আটটি ভাষার লিখনবিধি আছে।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেশে প্রচলিত ভাষাগুলোর পরিবার বিন্যাস অনুযায়ী সিনো-তিব্বতী পরিবারের ভাষা ১৬টি, অস্ট্রো-এশিয়াটিক আটটি, ইন্দো-ইউরোপীয় ১৩টি আর দ্রাবিড় পরিবারের ভাষা আছে পাঁচটি। এদের মধ্যে বাংলা ছাড়া লিখনবিধি আছে চাকমা, মারমা, রাখাইন, মনিপুরী মেইতেই, মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া, তঞ্চঙ্গা ও সাঁওতালি ভাষার।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের হিসাবে দেশে বাংলাসহ মোট ৪১টি ভাষার প্রচলন আছে।

জীনাত ইমতিয়াজ বলেন, ‘অনেকগুলোর লিখনবিধি তারা নিজেরা তৈরি করছে, এখনও সেটা শেষ হয়নি। আর ১৪টা ভাষার কোনো লিখনবিধি নাই। এই ভাষাগুলো সব মানুষ বলতেও পারে না। এই ভাষাগুলোকে আমরা বলি বিপন্ন ভাষা। এই ভাষাগুলোকে সচল করা বা জীবন্ত করার উপায় নাই।

‘এক্ষেত্রে এ ভাষাগুলোর যে উপাদান পাওয়া যায়, সেগুলোকে আমরা সংরক্ষণ করতে পারব। ওর মধ্যেও এই ভাষাভাষীর জ্ঞান, বিজ্ঞান চেতনা, দর্শন অনেক কিছুই পাওয়া যাবে, যেগুলো মানবজাতির সম্পদ। এগুলোকে আমরা সংরক্ষণ বা ডক্যুমেন্টেশন করে রাখতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর কিছু ভাষা আছে নিরাপদ। নিরাপদ বলছি এজন্য যে, এর কথক সংখ্যা যা তাতে ওই ভাষাকে ব্যবহারিক কাজে প্রয়োগ করার মতো সমস্ত উপাদান বা বৈশিষ্ট্য ভাষাগুলোয় আছে। এগুলোর ক্ষেত্রে যে কাজটি করতে হবে লিখনবিধি না থাকলে তা প্রণয়ন করতে হবে এবং ডক্যুমেন্টেশন করতে হবে। অভিধান প্রণয়ন করতে হবে, ব্যাকরণ লিখতে হবে। এগুলো হয়ে গেলে পরে প্রাথমিক বই লেখার প্রশ্ন আসবে। এটা ওই ভাষাভাষী ও টেক্সটবুক বোর্ডের সমন্বয়ে করতে হবে।’

২০১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের জন্য পাঁচটি নৃগোষ্ঠির ভাষায় পাঠ্যবই প্রচলন শুরু করা হয়। এই শিশুরা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিখতে পারছে।

এ বিভাগের আরো খবর