আগে দুই দফা ব্যর্থতার পর আবারও রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিমানবন্দর সম্প্রসারণের দ্বিতীয় পর্যায়ে তৈরি হবে এই রানওয়ে। তবে এটি স্বাধীন রানওয়ে হবে না; কাজ করবে বর্তমান রানওয়ের বিকল্প হিসেবে।
এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
এরপর ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে আবারও দ্বিতীয় রানওয়ে করার উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ওইবার রানওয়ে তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বেবিচক সদস্য এ কে এম মাহাবুব আলমকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) নিয়ম অনুসারে, উড়োজাহাজ নিরাপদে ওঠানামা করতে হলে দুটি রানওয়ের মধ্যে অন্তত ৭৫০ ফুট দূরত্ব থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে জায়গা রয়েছে, তাতে এই দূরত্ব মেনে স্বাধীনভাবে দুটি রানওয়ে বানানো সম্ভব নয়।
বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ হচ্ছে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল সম্প্রসারণ। এর সঙ্গে কার্গো টার্মিনাল আছে, আমদানি-রপ্তানি টার্মিনাল আছে এবং কিছু ট্যাক্সিওয়ে হবে।
‘তেমনি দ্বিতীয় পর্যায়ে আরেকটি কাজ হলো প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের রেনোভেশন এবং একটি সমান্তরাল রানওয়ে। রানওয়ে যেটা হবে এটি আসলে স্বাধীন রানওয়ে হবে না। এটাকে বলে নির্ভরশীল রানওয়ে।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেটা এখন হবে, এখানে একসঙ্গে দুটো উড়োজাহাজ উঠতে বা নামতে পারবে না। একই সময়ে কেবল একটি উড়োজাহাজ উঠতে বা নামতে পারবে। শাহজালালে সে রকম সেফটি ডিসটেন্স নাই যে দুটো এয়ারক্রাফট একই সময়ে অপারেট করা যাবে।
‘কিন্তু একটি সুবিধা হবে। একটি প্লেন নামলে আরেকটি প্লেন দ্রুত টেকঅফ বা ল্যান্ডিং করতে পারবে। কোনো এয়ারক্রাফটের জরুরি অবতরণ বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে একটি রানওয়ে যদি বন্ধ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আরেকটি রানওয়ে ব্যবহার করা যাবে। মূলত বর্তমান রানওয়ের বিকল্প হিসেবে এটি প্রস্তুত থাকবে।’
বিকল্প রানওয়েতে উড়োজাহাজ ওঠানামায় সময় বাঁচবে বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেটা হবে সময়টা বাঁচানো যাবে। এখন যেটা হচ্ছে, একটা উড়োজাহাজ রানওয়ে থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত অন্যটি আসতে বা যেতে পারছে না। সেই সময়টা কমে আসবে।
‘আবার আবহাওয়া ভালো থাকলে হয়তো একই সাথে দুটো রানওয়েই ব্যবহার করা যাবে। এক সাথে হয়তো যাবে না কিন্তু এক বা দুই মিনিটের ব্যবধানে এটা হতে পারে।’
তবে এই রানওয়ে নির্মাণ করতে হলে মূল চ্যালেঞ্জ হবে উত্তরা ও নিকুঞ্জ এলাকার শতাধিক বহুতল ভবন সরানো। বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘এখানে উত্তরায় অনেক বাড়িঘর সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরেও তৈরি করা হয়েছে। মূল চ্যালেঞ্জ হবে দ্বিতীয় রানওয়ের যাত্রাপথ পরিষ্কার করা।
‘আর এ জন্য উত্তরার অনেক উঁচু ভবন ভাঙতে হবে। উড়োজাহাজের গতিপথ ঠিক রাখতে এটা করতে হবে। এই ভবনগুলো হওয়ারই কথা নয়, কিন্তু অনেকে অনুমোদন ছাড়াই বাড়িঘর করে ফেলেছে। এগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি।’
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী, রানওয়ে সংলগ্ন এলাকায় কোনো ভবন ১৫০ ফুটের উঁচু হলে তা উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এর বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণে বেবিচকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বেবিচকের অবস্ট্রাকটাল লিমিটেশন সারফেস ম্যাপে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর, ভাসানটেক, নিকুঞ্জ, বারিধারার কিছু এলাকা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এই অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দুটো রানওয়েকেই স্বাধীনভাবে অপারেট করা যায় কি না, তা ভেবে দেখতে বেবিচককে পরামর্শ দিয়েছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন যে তৃতীয় টার্মিনাল তৈরির প্রকল্প চলছে, সেটাকে যদি এমন করা হয় যে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনাল ভবন ভেঙে সামনে নিয়ে আসা যায়। তাহলে রানওয়ের জন্য কিছুটা জায়গা হয়তো পাওয়া যাবে।
‘একসময় কিন্তু শাহজালালে দুটি রানওয়ে করার পরিকল্পনাই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিকুঞ্জ ও উত্তরায় আবাসিক প্রকল্প গড়ে ওঠে।’
১৯৪১ সালে ব্রিটিশ সরকার কুর্মিটোলায় যে এয়ারস্ট্রিপ তৈরি করে, সেটিই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হয়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর। তার আগে তেজগাঁও বিমানবন্দরটিই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। ১৯৮০ সালে কুর্মিটোলার এ বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে এর যাত্রা শুরু ১৯৮২ সাল থেকে।