বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চার স্তরে গ্যাস, তেলের স্তরে পৌঁছাতে পারেনি রিগ

  • অরুণ কর্মকার, কন্ট্রিবিউটর রিপোর্টার   
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৯:১৫

হরিপুর (সিলেট) ৯ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস তোলা শুরু। যে স্তরে তেল থাকার অনুমান ছিল, সেই স্তরে ঢোকার আগে রিগটি আটকে যায়। ফলে সেটি বাদ দিয়ে ওপরের চারটি স্তর থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়েছে।

সিলেটের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রের চারটি স্তরে গ্যাসের অবস্থান চিহ্নিত করেছে বাপেক্স। এর মধ্যে সবচেয়ে নিচের স্তরটি (১ হাজার ৯৯৮ মিটার গভীরে) থেকে গত ৪ জানুয়ারি গ্যাস উঠতে শুরু করে। ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে কূপটির ফ্লেয়ার লাইনে উঠে আসা গ্যাসে আগুনের শিখা জ্বালিয়ে গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়।

বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে কূপটির ২ হাজার ৭২ থেকে ২ হাজার ৯৪ মিটার গভীরতায় তেল আছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু খননকালে ওই স্তরে পৌঁছাতে পারেনি বাপেক্সের খননযন্ত্র (রিগ)।

২ হাজার ২৫ মিটারে রিগটি আটকে যায়। ফলে সম্ভাব্য তেলের স্তরটি বাদ দিয়ে এর ওপরে চিহ্নিত চারটি স্তর থেকে গ্যাস উত্তোলনের প্রক্রিয়া হিসেবে ডিএসটি (ড্রিল স্টেম টেস্ট) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রটি পরিচালনা করে পেট্রোবাংলার অধীন অন্যতম কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। এসজিএফএলের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বর্তমানে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ্‌র তত্ত্বাবধানে কূপটির খননকাজ শুরু হয়।

তিনি বলেন, কূপটির যে স্তর থেকে উঠে আসা গ্যাসে শিখা জ্বালানো হয়েছে, তার উপরের আরও তিনটি স্তরের অন্তত একটি রয়েছে অনেক সমৃদ্ধ। সবগুলো স্তরে ডিএসটি করার পর সেখানকার সম্ভাব্য মজুত নির্ধারণ এবং বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হবে।

দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহাসিক এই গ্যাসক্ষেত্রটির ৯ নম্বর কূপে গত ২ অক্টোবর খননকাজ শুরু করে পেট্রোবাংলার অধীন আরেকটি কোম্পানি বাপেক্স। বাপেক্সের করা ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের ভিত্তিতেই কূপটি খননের স্থান ও গভীরতা নির্ধারণ করা হয়।

এসজিএফএল সূত্র জানায়, ভূকম্পন জরিপের ফলের ভিত্তিতে এই কূপে তেল পাওয়ার আশা করা হয়েছিল। কূপটি খনন করার কথা ছিল ২ হাজার ১০০ মিটার গভীর। কিন্তু ২০২৫ মিটার পর্যন্ত খনন করার পর ড্রিলিং পাইপ আটকে যায়, যা প্রচলিত কোনো পদ্ধতিতেই ছাড়ানো যায়নি। ভূতাত্ত্বিক জটিলতা এবং খননকাজ পরিচালনায় ত্রুটির কারণে এটা ঘটে থাকতে পারে।

সূত্র জানায়, এই অবস্থায় করণীয় নির্ধারণের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞসহ সব পক্ষ এক সভায় মিলিত হয়ে সামগ্রিক বিষয় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যে, ড্রিলিং পাইপ যেখানে আটকে গেছে সেখানেই পাইপটি কেটে সিমেন্টিং করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ কূপটির খননকাজ সেখানেই শেষ করা হবে। এরপর ২০২৫ মিটারের মধ্যে চিহ্নিত চারটি স্তরে ডিএসটি সম্পন্ন করে গ্যাস উত্তোলন করা হবে।

হরিপুর ১৯৫৫ সালে আবিষ্কৃত এ দেশের প্রথম গ্যাস ক্ষেত্র। ১৯৬০ সালে ক্ষেত্রটির ১ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ৪০ লাখ ঘনফুট করে গ্যাস ছাতক সিমেন্ট কারখানায় সরবরাহ শুরু করা হয়।

এ দেশে শিল্পে গ্যাস ব্যবহারও সেই প্রথম। সে ছিল এক নতুন যুগের সূচনা। এরপর ১৯৬১ সালে এই ক্ষেত্রের আরেকটি কূপ থেকে ৩০ মাইল দীর্ঘ ও ৮ ফুট ব্যাসের পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে মোট ছয়টি কূপ খনন করা হয়। তবে ’৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সময় এর দুটি কূপ চালু ছিল।

হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রটি আরও যে কারণে ঐতিহাসিক তা হলো এই ক্ষেত্রেই প্রথম ব্লো-আউট (কূপ খননকালীন বিস্ফোরণ) হয়। আবার এটিই দেশের প্রথম এবং একমাত্র তেলক্ষেত্র। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্রে ৭ নম্বর কূপ খনন করা হয়। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ৭ নম্বর কূপে তেল পাওয়া যায়।

প্রায় ৭ বছরে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৯ ব্যারেল তেল উত্তোলনের পর ১৯৯৪ সালের ১৪ জুলাই কূপটিতে তেলের চাপ (ওয়েলহেড প্রেশার) প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গেলে তেলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূগর্ভে তেলের সঙ্গে মোম জাতীয় একটি পদার্থ (ওয়াক্স) থাকে। তেল উত্তোলনের সময় ওই ওয়াক্স কূপের পাইপের গায়ে জমতে থাকে, যাতে তেলের প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। তাই কূপে তেলের প্রবাহ অব্যাহত রাখার জন্য নিয়মিত ওই ওয়াক্স পরিষ্কার করতে হয়।

হরিপুর ৭ নম্বর কূপে তা করা হয়নি। সে কারণে ওয়েলহেড প্রেশার কমে গিয়ে তেলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৮৯ সালে ক্ষেত্রটিতে ৮ নম্বর কূপ খনন করা হয়। সেই কূপেও তেল পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পাওয়া যায় গ্যাস। এরপর বাপেক্স ক্ষেত্রটিতে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালায়। তার ভিত্তিতে ৯ নম্বর কূপ খনন করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর