ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের উপলক্ষ্যে বার্ষিক কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল।
দিল্লিতে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবন সংলগ্ন রাজপথে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়া ১২২ সদস্যের কন্টিনজেন্টটিতে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
দলের নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মোহাম্মদ শাহনুর শাওন ও তার দুই ডেপুটি লেফটেন্যান্ট ফারহান ইশরাক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিবাত রহমান।
মুজিব বর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর দলটিকে ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
কন্টিনজেন্টটির কুচকাওয়াজের সময় ধ্বনিত হয় ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি। বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ…’ গানটি।
এরপর দিল্লির আকাশে ওড়ে ভারতের বিমানবাহিনীর পুরনো সংস্করণের ডাকোটা মডেলের একটি বিমান, যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর যাত্রাও শুরু হয়েছিল ভারতের উপহার দেয়া ডাকোটা বিমান দিয়েই।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারতের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ, এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচার এবং যুদ্ধের শেষ দিকে ভারতীয় বাহিনীর অংশগ্রহণে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পৃথক ও স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যৌথভাবে অর্জিত সেই স্মরণীয় বিজয়ের অর্ধশতক স্মরণীয় করে রাখতে বার্ষিক কুচকাওয়াজে এবার বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর একটি দলকে যুক্ত করল ভারত।
ভারতের ইতিহাসে তাদের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেয়া তৃতীয় দেশ হলো বাংলাদেশ।
এর আগে ২০১৭ সালে দিল্লিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ২০১৬ সালে ফ্রান্সের সেনারা কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিল।
কুচকাওয়াজের আগে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর দলটির প্রধান কর্নেল মোহাম্মদ মোহতাশিম হায়দার চৌধুরী জানান, ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের অংশ হতে পারাটা বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্মানের।
তিনি বলেন, ‘কুচকাওয়াজে অংশ নেয়া বাংলাদেশের সদস্যদের অধিকাংশকেই নেয়া হয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা ইউনিটগুলো থেকে। ২০২০-২১ সালে আমাদের দেশ যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে তখন আমাদের বন্ধু ভারতের কুচকাওয়াজের অংশ হতে পেরে আমরা খুবই ভাগ্যবান।
‘আমরা সেইসব ভারতীয় প্রবীণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’