বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বটির ভালো-মন্দ

  •    
  • ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:১০

একেক ধরনের বটিতে একেক ধরনের লোহা ব্যবহার করা হয়। বটি কতোটা টেকসই হবে তা নির্ভর করে লোহার উপকরণের ওপর। এতে দামেও তফাৎ হয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রান্নার এক দরকারি সরঞ্জামের নাম বটি। সবজি কাটা থেকে শুরু করে মাছ-মাংস কাটার জন্য বটি ব্যবহার করতে হয়। আধুনিক নগরজীবনে বটির বিকল্প হাজির হলেও এর চাহিদা এখনও কমেনি।

ভালো মানের বটি কেনা নিয়ে ক্রেতারা প্রায়ই দুশ্চিন্তায় থাকেন। তাই বটির ভালো-মন্দ জানতে নিউজবাংলা টিম গিয়েছিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সেখানকার কারিগররা।

বটি তৈরিতে যে ধরনের লোহা ব্যবহার হয়

কারওয়ান বাজারের জনতা ট্রেডার্স অ্যান্ড নোয়াখালী হার্ডওয়্যারের মালিক ও মিউনিসিপ্যাল কর্মকার (কামারপট্টি) মার্কেটের সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির জন্য কামাররা ব্যবহার করেন মাইল্ড স্টিল নামের লোহা। এর একটি ধরন হলো স্প্রিং। যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয়, ইস্পাত।

তিনি জানান, ভালো বটি তৈরি হয় রেলের লোহা দিয়ে। তবে রেলের লোহা সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই এর বদলে স্প্রিংটাই ব্যবহার করেন।

এখন বেশিরভাগ বটি বানাতে অ্যাঙ্গেল প্লেটবার নামে এক ধরনের লোহা ব্যবহার করা হয়।

বটির ভালো-মন্দ জানাচ্ছিলেন মো. হারুন অর রশীদ

মো. হারুন বলেন, ‘ওডা (অ্যাঙ্গেল প্লেটবার) নরমাল, ওডা হইল কাঁচা লোয়া (লোহা)। আর স্প্রিং এরডা হইল পাকা।’

তিনি বলেন, ‘স্প্রিংয়ের লোহার দাম কম; ৬০-৮০ টাকা। কাঁচা লোহা ৫০-৬০ টাকা। এর উপ্রে হয় না। কিন্তু খরচা বেশি হয় মুজুরিতে। একটা স্প্রিংয়ের বডি বানাইতে অনেক সময় লাগে। দুই আড়াই ঘণ্টা।’

লোহা কোথায় থেকে আনেন জানতে চাইলে মো. হারুন বলেন, ‘আমরা পুরানা মার্কেট থেকে লোহা আনি। আবার ধোলাইখাল থেকেও আনি। পোস্তগোলা থেকে আনি। মিরপুর থেকেও আনি।’

কোন ধরনের বটি বেশি চলে?

আগে কাঠের হাতলের বটির বেশি চাহিদা থাকলেও এখন ধাতব হাতলের বটি বেশি চলে বলে জানান কারিগররা।

মো. আলমগীর নামে এক কারিগর বলেন, ‘বর্তমানে চলে বেশি নরমালগুলা। কারণ অত পয়সা দিয়া স্প্রিংয়ের বটি কেউ বানায় না। হয়তো কেউ শখ কইরা বইসা থাইকা অর্ডার দিয়া নেয়, ওগুলা বানায়। কারণ ওইডার কেজি হইল ৮০০ টাকা। আর নরমালগুলা ধরেন ১ কেজি ৪০০-৫০০ টাকায়ও বেইচালায়। অনেকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়া ধরেন কাঁচাটাকে পাকা কইয়া বেইচালায়।’

কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে হরেকরকম বটির পসরা, আছে লোহার তৈরি অন্য সরঞ্জামও

কারিগররা জানান, কাঠে ফিট করা বডি সাধারণত মাছ বাজারে ব্যবহার করা হয়। এগুলো বানানো হয় স্প্রিং লোহা দিয়ে। ভালো বটি বলতেই স্প্রিংয়ের। এদিকে বাসাবাড়িতে বেশি চলে মাঝারি সাইজের বটি।

মো. হারুন বলেন, ‘সাধারণত চলে বেশি ছোট বডি। ১ কেজি, ৮০০ গ্রাম, ৯০০ গ্রাম এই সাইজই বেশি চলে।’

‘টাকা কম দিলে বডিডাও খারাপ দিবো’

মো. হারুন জানান, বাজারে দুই ধরনের বটি পাওয়া যায়। যেটা ভালো বটি, সেটা স্প্রিংয়ের লোহা দিয়ে তৈরি। স্প্রিংয়ের একটা বটি ২০-৩০ বছর পর্যন্ত চলে।

তিনি বলেন, ‘ভালো বডি দিতে অইলে স্প্রিংয়েরটা বা রেলের পাতেরটা দিতে অইব। আপনের একটা বডি তো আজীবন যাইব না। স্প্রিংয়ের একটা বডি নিলে আপনার ২০-৩০ বছরে কিছুই অইত না।’

তিনি জানান, তবুও ক্রেতারা স্প্রিংয়ের বটি নিতে চায় না। এ কারণে বিক্রেতারাও স্প্রিংয়ের বটি কম বানান।

মো. হারুন বলেন, ‘অনেক পাবলিকই স্প্রিংয়ের বডি বানাইতে চায় না। কারণ ওইডার দাম আসে ৮০০। আর আমনে কইবেন ৩০০। টাকা কম দিলে বডিডাও খারাপ দিবো।’

ভালো বটি পরীক্ষা করে দেখাচ্ছেন এক কর্মকার

বানানোর সময়, কর্মচারীর বিল, কয়লা খরচ সব মিলিয়ে স্প্রিংয়ের বটির দাম বেশি আসে বলে জানান তিনি।

ভালো বটি চেনার উপায়

বটির মান নির্ভর করে লোহার ওপরে। লোহা যত পাকা, বটি তত ভালো।

মো. হারুন বলেন, ‘পাকা লোহায় সিল থাকে। নরমাল লোহায় সিল তাকে না। মনোগ্রাম থাকলে লোহা চিনবেন। লোহার রং এক, রক্তের রঙ হিন্দু মুসলমানের লাল। রক্তে তো আর হিন্দু মুসলমান লেখা নাই।’

মনোগ্রাম দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চিহ্ন থাকলে বুঝা যায় কোন দোকান থেকে নিছি। চিহ্ন দিই এই কারণে যে আমি ভালো লোহা দিছি, খারাপ হইলে আমি দায়ী। ফেরত নিবো, কাজ করা লাগলে কইরা দিম্যু। ভালো লোহায় চিহ্ন সব দোকানদাররা দেয়। একেক জনেরটা একেক রকম।’

মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা টেস্ট করে দেখাই দেই। একটা বটির ওপর আরেকটার বাড়ি দেই। যেডা খারাপ ঐডা কাইটা যায়। ভালোটা কাডে না। নষ্ট হয় না। ভালোডা টেস্ট করলে পোড়া দিয়া টেস্ট করি। ভালোডা পানি দিলে টাস কইরা ভাইঙ্গা যায়। কাচাডা ভাঙ্গে না। ওইডা ব্যাঁকা অইয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে আমারে ভাইঙ্গা দেখান, তাইলে দেখাই। ভাঙ্গলে মনে করে ঐডা ভালো লোহা। না ভাঙ্গলে মনে করে নরমাল লোহা। আমরা কিনার আগে বইলাও দেই ভালোডা এই দাম। অন্য কোনো দাম কইলে চলবো না।’

ভালো বটি কিনতে চাইলে খরচও করতে হবে বেশি। সেখানে দরদাম হয় না বলে বিক্রেতারা বলছেন

দামের হেরফেরেও বটির ভালো-মন্দ হয় জানিয়ে মো. আলমগীর বলেন, ‘৬০০ টাকায় জায়গায় আপনি ৩০০ বললেন, ৪০০ বললেন, তহন দিয়া দিবো ২ নম্বরডা। ভালোডা ৬০০ বেচলেও ৫০ টাকা লাভ হয়। খারাপটা ২০০-৩০০-৪০০ বেচলেও পুরা লাভ। আমরা দুই এক জন আছি, সঠিক বলি। নেক না নেক তাদের ব্যাপার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটু পুড়া দিয়া পানির মধ্যে চুবায়া হালকা একটু টেস্ট করি, মাতাডা। ভাঙ্গে, আবার ঠিক কইরা দেই। ভালোটা ভাঙ্গে, ধার নষ্ট হয় না।’

দীপক চন্দ্র কর্মকার নামে এক কামার জানান, ‘একটা ভালো বডি নিতে গেলে আপনার ৫০০-৭০০ টাকা লাগবো। আপনি ২০০ টেকা দিছেন, আপনারে দিছে এইডা। কিচ্ছু করার নাই। আপনে তো চাইয়া নিছেন। যেগুলা ভালো বডি দাম ভিন্ন। ওজন ছাড়া ওগুলা বেচি না আমরা। ৮০০ টাকা কইরা কেজি, ওজনে যা আইবো, তার টেকা দিতে অইবো।’

ভালো বটি বিক্রি হয় ৮০০ টাকা কেজি দরে। আর অন্যগুলো পাওয়া যায় কম দামেও

বটিতে মনোগ্রাম দেয়ার জন্য প্রত্যেক দোকানের আলাদা পদ্ধতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার দোকানের নম্বর আছে, আমারটায় ধরেন দুই দাগ, আরেক দোকানে ধরেন চার দাগ (দাগ)। সিল যহন থাকবো, তহন কাজ করতে গেলে হিসাব কইরা করবো। ঐডায় হিসাব লাগে না।’

ফেরার আগে বটির কারিগরদের দুঃখের কথা জানালেন সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ।

বললেন, করোনায় চার মাস তাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এখনও সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি।

অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই মো. হারুন বলেন, ‘করোনার মাঝে সরকার পুরা বাংলাদেশেই সাহায্য দিছে, কিন্তু এর মাঝে সাহায্য কয় জন পাইছে। মধ্যবিত্তদের সহায়তা দিছে, আমরা দুই টাকাও পাই নাই।’

তিনি বলেন, ‘আইসা দেখি ঘরভাড়া দোকানভাড়া মিল্লা দুই লাখ টাকা হইয়া গেছে। উল্টা আমাদের দুই-চার-দশ টেকা দিতে হইছে। যে আমার কাছে দাবিদার তারে তো আমি বুঝাইতে পারতেছি না যে আমি নিজেও না খায়া আছি।’

এ বিভাগের আরো খবর