বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিরাজের খোদাইয়ে নকশা ফোটে পাথরে

  •    
  • ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:০২

আগের দিনে শিল-নোড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন চলছে মন্দা। বাটা মসলার পরিবর্তে শহরে গুঁড়া মসলার দিকে বেড়েছে ঝোঁক। অনেকে যন্ত্রের সাহায্যে ব্লেন্ড করছেন মসলা। আর এসবের প্রভাব পড়েছে সিরাজের মতো মানুষের জীবিকায়। 

বয়স্ক চোখে মোটা চশমা। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে নিবিষ্ট মনে কঠিন পাথরের বুকে নকশা ফুটিয়ে তোলেন মোহাম্মদ সিরাজ। একই ঠিকানায় এভাবেই কেটে গেছে সাড়ে তিন দশক।

শুরুর দিকের সঙ্গীদের কেউ আর বেঁচে নেই। কারওয়ানবাজারে শিল-নোড়া খোদাইকারী সবচেয়ে পুরনো এবং অভিজ্ঞ কারিগর এই মোহাম্মদ সিরাজ।

সাদামাটা ছোট্ট দোকানে থরে থরে সাজানো শিল আর নোড়া। মাথার ওপর নেই কোনো ছাদ, চারপাশে নেই কোনো দেয়াল। বিরামবিহীনভাবে ছোট ছেনি দিয়ে পাথর কেটে দিনে ২০-২৫টি শিল তৈরি করেন সিরাজ।

প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয় ৪-৫টি শিল। বড়গুলোর দাম ৭৫০ টাকা করে, মাঝারি শিল ৬০০ টাকা আর ছোটটির দাম ৫০০ টাকা। তবে একদম ছোট শিলও রয়েছে সিরাজের দোকানে, যার দাম ৩০০ টাকা। বিভিন্ন জায়গায় শিলের দামে ভিন্নতা থাকলেও নির্ধারিত কয়েকটি আকার সারাদেশে মোটামুটি একই রকম বলে জানান সিরাজ।

শিলের পাথরের অধিকাংশ আসে ভারত থেকে। বিশেষত্বের কারণেই দেশের বাইরের পাথরের চাহিদা বেশি বলে নিউজবাংলাকে জানান এই অভিজ্ঞ কারিগর। তিনি বলছেন, আগে সিলেট থেকেও পাথর আসত, তবে বালু ওঠার কারণে এখন আর তেমন আসে না।

শিল পাটার পাথর অধিকাংশই আসে ভারত থেকে। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘এইডার পাথরডাই আলাদা। এই পাথরগুলা ইন্ডিয়াত্থি আসে সিলেটের পাথর ভালো না, বালু উডে। সিলেটের পাথর কিনবেন, ডস্ খাবেন।’

শিল থেকে বালু ওঠা বন্ধের উপায় বাতলে তিনি বলেন, ‘এইটা নিয়া আগে ঘষতে হয়। ভালো কইরা ঘষা লাগে। তরকারির ছিকলা মিকলা বাটা লাগে। নিয়াই মশল্লা বাটা যাবে না।

‘রাফ জিনিস বাইটা আগে ফালাইতে হবে। তারপর শইষার তৈল আর হলুদ মাখলে জিনিসটা নিরাপদ থাকে আর কি। আর বালু উঠবে না। সম্ভাবনা নাই। ওইভাবে ব্যবহার করতে হবে।’

নিজের দোকানের শিল-নোড়া নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী সিরাজ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে যেগুলা আছে, সেগুলার গ্যারান্টি আছে। বালু উঠলে গাড়ি ভাড়াসহ ফিরত পাবেন। আমারডা ঘইষা ধুইয়া ধার করা আছে, আমারডা আর ঘষা লাগে না।’

ভালো শিল চেনার উপায় হাতেকলমে দেখাতে চান তিনি। বলেন, ‘আমার কাছে সিমিডেরটা (সিমেন্টের) থাকলে পরীক্ষা কইরা দিতে পারতাম। সিমিডেরটার ওপর এক ফোডা পানি ছাইড়া দিয়া হলুদ ছাড়লেই মশল্লা লাল হইয়া যাইবো। সিমিডে ভেজাল আছে, পাথরে ভেজাল নাই। চেনার উপায় এডাই।’

বিরামবিহীনভাবে কাজ করে দিনে ২০-২৫টি শিল পাটা তৈরি করতে পারেন সিরাজ। ছবি: নিউজবাংলা

আগের দিনে শিল-নোড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন চলছে মন্দা। বাটা মসলার পরিবর্তে শহরে গুঁড়া মসলার দিকে বেড়েছে ঝোঁক। অনেকে যন্ত্রের সাহায্যে ব্লেন্ড করছেন মসলা। আর এসবের প্রভাব পড়েছে সিরাজের মতো মানুষের জীবিকায়।

তবে মোহাম্মদ সিরাজ মনে করেন, ‘পাডার (পাটার) মশল্লার স্বাদ আর ব্লেন্ডারের স্বাদ আকাশ-পাতাল। পাডার মশল্লার স্বাদ-ই আলাদা।’

শিল-নোড়ার কারিগরদের জীবন চলে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে। পাথরের গুঁড়ো আক্রান্ত করে ফুসফুসকে, অনেকেই শেষ পর্যন্ত হার মানেন যক্ষার কাছে। সিরাজ জানান, তার পরিচিত অনেক কারিগরই মারা গেছেন অল্প বয়সে।

‘মাস্ক পইরা লইলে একটু নিরাপদ থাকে, কিন্তু যারে রোগে ধরার, ধরার ধরবোই। সমস্যা হইল এগুলার (শিল-নোড়া) ধুলাবালি লাংস শেষ কইরা ফালায়। পাডার মিস্ত্রিরা তাই লাসটিং করে না।’

গুঁড়া মসলার ব্যবহার বাড়ায় কমেছে শিল পাটার চাহিদা। তাতে টান পড়ছে সিরাজদের জীবীকায়। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধইরা কাজ করি। খাওয়া খাদ্য খাই বইলা সুস্থ আছি। কিন্তু আমার ঘরে কারিগর আছিল পাঁচ জন। দুনিয়াতে অহন এক জনও নাই। তারার চলাচলতি খারাপ আছিল। এইসব কাজ কইরা যদি গাঁজা খান, হারাম পথে থাকেন, তাইলে তো অইল না।’

শিল-নোড়া খোদাইয়েরও আছে কিছু নির্ধারিত নিয়ম, এর বাইরে রয়েছে খোদাইকারীর শিল্পী মন। পাথরের বুকে খোদাই করে ফুল, পাখি লতাপাতা ইত্যাদি নকশা ফুটিয়ে তোলেন সিরাজ।

তিনি জানান, শিল-নোড়ার পাথর সাধারণত তিন রঙের হয়। সাদা, কালচে আর লাল।

এ বিভাগের আরো খবর