বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এলপি গ্যাসের দাম হবে এক রকম

  • অরুণ কর্মকার, ঢাকা   
  • ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ২৩:৪০

এলপি গ্যাস বা সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম সারা দেশে অনবরত ওঠানামা করে। তাছাড়া পাইপলাইনের গ্যাসের সঙ্গে আছে দামের বিপুল বৈষম্য। এসব দূর করতে ১৪ জানুয়ারি থেকে গণশুনানি করবে বিইআরসি।

পাইপলাইনের গ্যাস যারা পরিবারে রান্নার কাজে ব্যবহার করেন, তাদের মাসে যে খরচ লাগে, সিলিন্ডারের গ্যাসের খরচ তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। তাছাড়া বাজারে সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে।

এই বৈষম্য দূর করতে তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের একটি নির্দিষ্ট দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

আগামী ১৪, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে এ বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিইআরসির কাছে দামের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। সরকারি খাতের কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল) সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম প্রস্তাব করেছে ৭০০ টাকা যা বর্তমানে ৬০০ টাকা। এলপিজিএল বছরে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন এলপি গ্যাস বাজারজাত করে যার কাঁচামাল (প্রোপেন ও বিউটেন) দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকেই পাওয়া যায়।

বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোর সংগঠন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম প্রস্তাব করেছে ১ হাজার ২৫৯ টাকা। এ ছাড়া লোয়াব বহির্ভুত বেসরকারি কোম্পানি প্রমিতা এলপি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম প্রস্তাব করেছে ১ হাজার ৪২ টাকা।

বাজারে সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম নিত্য ওঠানামা করে ৮৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে, পাইপলাইনে বাসাবাড়িতে গ্যাসের একটি ডাবল বার্নার চুলার মাসিক বিল ৯৭৫ টাকা। যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেরকম মাঝারি আকারের পরিবারে মাসে সর্বোচ্চ খরচ আসে ৫শ টাকা।

বিইআরসির সূত্র বলেন, এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাবের ওপর শুনানির মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। প্রথমত, এলপি গ্যাসের দাম কমিয়ে আনা হবে। দ্বিতীয়ত, সারা দেশের জন্য এলপি গ্যাসের অভিন্ন দাম নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। তৃতীয়ত, পাইপলাইন গ্যাসের সঙ্গে এলপি গ্যাসের দামের বৈষম্য নিরসন করা হবে যাতে সব শ্রেণির ভোক্তার সমঅধিকার নিশ্চিত হয়। চতুর্থত, সঠিক ওজনে এলপি গ্যাসের সরবরাহ এবং ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে।

ভোক্তা পর্যায়ে সারা দেশে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম অভিন্ন। কিন্তু এলপি গ্যাসের দাম শুধু ভিন্ন নয়, অনেক বেশিও। জ্বালানির দামের এই বিভিন্নতা ভোক্তা সাধারণের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে, যা দেশের সংবিধান অনুমোদন করে না।

জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী বলেন, কাজটি চ্যালেঞ্জিং এবং কঠিনও বটে। তবে অসম্ভব নয়। তাদের কাজটির দুটি ভাগ থাকবে। প্রথমত, এলপি গ্যাসের আমদানি করা কাঁচামালের বাজার দর যেহেতু প্রতি মাসে নির্ধারিত হয়, সেহেতু দেশে তার দাম নির্ধারণের জন্য একটি ফর্মুলা তৈরি করা হবে। দ্বিতীয়ত, দেশের ভিতরে বিপণনের জন্য একটি অভিন্ন দাম নির্ধারণ করা হবে।

বড় জাহাজে এলপি গ্যাসের কাঁচামাল আমদানি করা গেলে দাম অনেক কম পড়ে। এই কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে প্রতি টন এলপি গ্যাসের কাঁচামাল আমদানিতে খচর পড়ে সময়ভেদে ৫০ থেকে ৬০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে এলপিজি পরিবহন করা হয় ছোট জাহাজে। এতে খরচ পড়ে ১১০ থেকে ১৩০ ডলার। বাংলাদেশেও একাধিক কোম্পানি একসঙ্গে বড় জাহাজে করে আমদানি করতে পারেন।

বিইআরসিতে লোয়াবের উপস্থাপন করা তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এলপি গ্যাস আমদানিতে বন্দর পর্যন্ত ১২ কেজিতে খরচ হয় ৬৩০ টাকা। এর সঙ্গে সিলিন্ডারে ভরা, প্রশাসনিক খরচ, বিনিয়োগ চার্জ, বিপণন খরচ মিলে হয় ৮৮৭ টাকা। এর সঙ্গে ৯ শতাংশ মুনাফা, তিন দফায় মূসক, পরিবেশকের সরবরাহ ব্যয় ও লাভসহ মোট দাম পড়ে ১ হাজার ২৫৯ টাকা।

লোয়াব তাদের প্রস্তাবে কোথায় কত ভ্যাট দেয়া হচ্ছে, কোথায় কত খরচ হতে পারে, তার বিবরণ দিলেও এলপি গ্যাসের প্রধান দুই উৎপাদ প্রোপেন এবং বিউটেনের মিশ্রণের আলাদা বিবরণ দেয়নি। অথচ তার ওপর দাম অনেকটাই কম-বেশি হতে পারে।

লোয়াবের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন এলপি গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। ২০২৫ সালে তা দ্বিগুণ হতে পারে। দেশে সরবরাহ করা এলপি গ্যাসের ৯৮ শতাংশেরও বেশি আমদানি করা। বেসরকারি খাতের ৫৬টি কোম্পানি এখন পর্যন্ত লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে ২০টি কোম্পানি আমদানি ও ২৮টি কোম্পানি বিপণন করছে। ওই ২০টি কোম্পানির মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার (আড়াই হাজার কোটি টাকা)।

বেসরকারি কোম্পানিগুলো প্রায় এক লাখ টন মজুতের সক্ষমতা গড়ে তুলেছে। নৌপথের পাশাপাশি সড়ক পথেও নিরাপদে সরবরাহ ও বিপণনের ব্যবস্থা এবং ২০টি স্যাটেলাইট প্লান্ট গড়ে তুলেছে।

তবে এলপি গ্যাসের দাম, সঠিক মাপ এবং সিলিন্ডার, চুলা ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের মান নিয়ে গ্রাহকের বিপুল অভিযোগ রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর