বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোথায় সেই আলাউদ্দিন সুইটমিট

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:১৪

২০০২ সালের পর ২০০৫ সাল পর্যন্ত কোনোমতে ব্যবসা চললেও এরপর চার বছর আলাউদ্দিন সুইটমিটের সমস্ত দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০০৯ সালে আবার ফিরে আসে এই মিষ্টি, ঢাকায় ফের চালু হয় সাতটি শাখা। দেশের বাইরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে আছে চারটি শাখা।

গত শতকের আশির দশকে ঢাকাকে উপস্থাপনের হাতেগোনা কিছু আইকনিক প্রতিষ্ঠানের একটি আলাউদ্দিন সুইটমিট। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই মিষ্টির নাম ছড়িয়েছিল দেশজুড়ে।

সেই সময়ের প্রজন্মের অনেকের কাছে রাজধানী ঢাকা আর আলাউদ্দিন সুইটমিট মিলেমিশে এক হয়ে আছে। ‘আলাউদ্দিন মিষ্টি, অপূর্ব সৃষ্টি’- স্লোগান ঘুরত অনেকের মুখে মুখে।

পত্রিকার পাতায় আলাউদ্দিন সুইটমিটের বিজ্ঞাপন।

বাংলাদেশে ব্র্যান্ড মিষ্টির পথ দেখানো সেই আলাউদ্দিন সুইটমিট এখন এক বিস্মৃত নাম। ঢাকার বুকে কোথায় আছে সেই মিষ্টির দোকান, ভিড়ভাট্টাই বা কেমন, কী করে হারিয়ে গেল জৌলুসের অধ্যায়- সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছে নিউজবাংলা।

ইতিহাস বলছে, দেড়শ বছরের কিছু বেশি আগে ভারতের লখনোউ থেকে পুরান ঢাকার চকবাজারে আসেন মিষ্টি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন হালওয়াই। তিনি ১৮৯৪ সালে গড়ে তোলেন আলাউদ্দিন সুইটমিট, যা ছিল ঢাকা শহরের বুকে প্রথম খ্যাতি ছড়ানো মিষ্টির দোকান।

ঢাকার মিষ্টির জগতে দীর্ঘদিন রাজত্ব করা সেই আলাউদ্দিন সুইটমিট এখন চলছে ধুঁকে ধুঁকে। এক দশক আগে প্রায় চার বছর একরকম বন্ধ ছিল ব্যবসা। এর পর নতুন হাতে আলাউদ্দিন সুইটমিট ফিরে এলেও এখনও চলছে টিকে থাকার লড়াই।

দেশবিখ্যাত এই মিষ্টির জন্ম যেখান থেকে, সেই পুরান ঢাকার চকবাজারের আদি অবস্থানে এখনও রয়েছে আলাউদ্দিন সুইটমিটের প্রধান শাখা। ব্যবসার হাল ধরেছে চতুর্থ প্রজন্ম। বদলেছে মিষ্টির ধরন, এমনকি প্যাকেটের নকশাও। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে নেয়া হয়েছে ডিজিটাল বিপণন কৌশল।

আলাউদ্দিন সুইটমিটের মিষ্টির প্যাকেট। ছবি: নিউজবাংলা

আলাউদ্দিন সুইটমিটের বর্তমান পরিচালক মারুফ আহমেদ। আলাউদ্দিনের নাতির মেয়েকে ২০০৯ সালে বিয়ে করে অংশ হয়েছেন এই পরিবারের, সেই সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার।

আলাউদ্দিন সুইটমিটের বর্তমান পরিচালক মারুফ আহমেদ। ছবি: নিউজবাংলা

এক সময়ের দাপুটে আলাউদ্দিন সুইটমিটের নানান পর্যায় সম্পর্কে নিউজবাংলাকে জানান মারুফ।

‘বেসিক্যালি আমাদের প্রতিষ্ঠানটা অনেক পুরাতন। তখন শহরের প্রাণকেন্দ্র ছিল চকবাজার। আগের দিনে মিষ্টির ব্যবসা ছিল হোটেল বেইজড, মিষ্টির দোকান হিসেবে আমরাই প্রথম শুরু করি।

‘প্রতিষ্ঠার সময় তিন দেশ একসাথে ছিল (ভারতীয় উপমহাদেশ)। এরপর আলাউদ্দিন সাহেব মারা গেলেন। তার ছেলেরা দায়িত্ব নিলেন, তারপরে আমার শ্বশুর, কিন্তু ২০০২ এর দিকে শ্বশুর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে গেলেন।’

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে জৌলুস হারাতে শুরু করে আলাউদ্দিন সুইটমিট, নতুন শতাব্দীতে ব্যবসায়িক মন্দা তীব্রভাবে দেখা দেয়। মারুফ আহমেদ জানান, ২০০২ সালের পর ২০০৫ সাল পর্যন্ত কোনোমতে ব্যবসা চললেও এরপর চার বছর আলাউদ্দিন সুইটমিটের সমস্ত দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০০৯ সালে আবার ফিরে আসে এই মিষ্টি, ঢাকায় ফের চালু হয় সাতটি শাখা। দেশের বাইরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে আছে চারটি শাখা।

নতুন এই যাত্রায় হাল ধরা মারুফ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি এ পরিবারে বিয়ে করি, এরপর একা হাতে আবার সব শুরু করি।’

কীভাবে হারালো আলাউদ্দিন সুইটমিটের সুদিন- জানতে চাইলে মারুফ আহমেদের জবাব, ‘এই কোম্পানি এক সময় ছিল ফ্যামিলিকেন্দ্রিক। বাইরের কোনো অংশীদার ছিল না। একা একা ব্যবসা পরিচালনার কারণে সমস্যা দেখা দেয়।

‘একজন অসুস্থ হলে তো পুরো ব্যবসা বন্ধ হতে পারে না। আজ আমার সমস্যা হলে ব্যবসাতেও প্রব্লেম হয়, কারণ সাথে আর কেউ নাই৷ পরিচালক কম৷ এমন না যে ব্যবসা করতে পারতেছি না, তবে একা একা ব্যবসা করা খুব টাফ।’

প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য মিষ্টির প্রতিষ্ঠানে শক্ত ব্যবস্থাপনার উদাহরণ দিতে গিয়ে মারুফ টানেন ‘বনফুল’ কোম্পানির নাম।

‘বনফুলের মালিক ছাড়াও বনফুলের সাথে আরও অনেকে আছেন, যারা তার অনুপস্থিতিতে ব্যবসাটা পরিচালনা করবেন। কিন্তু আমাদের পরিচালনায় তেমন কেউ নাই। তা ছাড়া আমাদের পূর্বপুরুষেরা সেভাবে শিক্ষিত ছিল না। এই কারণে মূলত আমাদের পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। অন্য কোনো কারণ নাই।’

মানুষের রুচির পরিবর্তনেও মিষ্টির ব্যবসা আগের মতো নেই বলে মনে করছেন আলাউদ্দিন সুইটমিটের পরিচালক। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে মানুষ বেড়ে গেছে। আগে এই শহরে মানুষ ছিল ২০-৩০ লাখ, এখন ২-৩ কোটি। আগে বিনোদন বলতেই ছিল মিষ্টি। জন্মদিন, বিয়ে, মৃত্যুবার্ষিকী সবকিছুতেই মিষ্টির উপস্থিতি ছিল। এখন বার্গার, পিজ্জা সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে।’

ব্যবসায় ধস নামলেও গুণগত মানে আলাউদ্দিন সুইটমিট এখনও অনন্য বলে দাবি করছেন মারুফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনটা ফ্যাক্টরি আছে, একযোগে প্রোডাকশন হয়। আমরা গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টা করি। আমাদের বিশেষত্ব হলো আমরা কোনো প্রোডাক্টে প্রিজারভেটিভস ইউজ করি না।

‘আমাদের মিষ্টি নিবেন, দুই দিন পর নষ্ট হবে। কারণ, আমরা কোনো আর্টিফিশিয়াল প্রিজারভেটিভস ইউজ করি না।’

আগে আলাউদ্দিন সুইটমিটে মাত্র কয়েক ধরনের মিষ্টি থাকলেও এখন সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে বলেও জানান মারুফ।

‘আগে দোকানে ৪-৫টা আইটেম বিক্রি করা হতো। লালমোহন, রসগোল্লা, কালোজাম, ছানা, মনসুর, আমিত্তি। এখন মনসুর ও আমিত্তি বাদে সব আইটেম আছে। এর সাথে আরও আইটেম আছে।’

কেবল মিষ্টির ব্যবসাই নয়, আলাউদ্দিন সুইটমিটের জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গেও। এর বহুল পরিচিত ব্র্যান্ডিং নকশাটি করেন শিল্পী রফিকুন নবী। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট থেকেই নকশায় থিম হিসেবে বেছে নেয়া হয় ‘অ’-কে। তবে আদি রঙ ও ডিজাইনের প্যাকেটের পরিবর্তে এখন আলাদা ধরনের প্যাকেটেও বিক্রি হচ্ছে এই মিষ্টি।

রাজধানীতে চকবাজার ছাড়াও সিদ্ধেশ্বরী, মৌচাক, নারিন্দা, আজিমপুর, ইসলামপুর, খিলগাঁওয়ে রয়েছে আলাউদ্দিন সুইটমিটের শাখা।

এ বিভাগের আরো খবর