বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বোন পরিচয়ে বিয়ে দেন বদি: ইসহাকের মা

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৭:৪৮

বদিকে পিতা দাবি করে গত ১৩ ডিসেম্বর আদালতের মামলা করেন ২৬ বছর বয়সী ইসহাক। তিনি মিথ্যা নাকি সত্য বলছেন, সেটা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা দিতেও রাজি এই যুবক।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে বাবা দাবি করে মামলা করা মো. ইসহাকের পর এবার মুখ খুলেছেন তার মা সুফিয়া খাতুন।

নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সুফিয়া জানান, ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল গোপনে তাকে বিয়ে করেন বদি। পরে জেনে যায় তার পরিবার। তখন তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায় বদির বোন পরিচয়ে জোরপূর্বক স্থানীয় রাজমিস্ত্রি নুরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয় তাকে।

তখন বদির বাড়িতে ভবন নির্মাণের কাজ করছিলেন নুরুল। তিনি একজন সহজ সরল মানুষ।

স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে ঝিলঙ্গা লিংকরোড এলাকায় একটি ছাপরা ঘরে থাকেন। কোনোরকমে দিন কাটে তার।

ইসহাক পড়াশোনা করেন কক্সবাজার সরকারি কলেজে। পাশাপাশি টিউশনি করেন। একটি দোকানও দিয়েছিলেন তিনি। তবে লোকসানের কারণে বন্ধ করে দিয়েছেন।

আবদুর রহমান বদিকে বাবা করা তরুণ মো. ইসহাক। ছবি: নিউজবাংলা

সুফিয়ার অভিযোগ, যখন তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়, তখন মুখ খুললে সন্তানসহ তাকে হত্যার হুমকি দেন বদি ও তার বাবা এজহার মিয়া। এখন ছেলে যখন পিতৃত্ব দাবি করে মামলা করেছেন, তখন আবার হুমকি দেয়া হচ্ছে তাকে; হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে ছেলেকে।

বদিকে পিতা দাবি করে গত ১৩ ডিসেম্বর মামলা করেন ২৬ বছর বয়সী ইসহাক। তিনি মিথ্যা নাকি সত্য বলছেন, সেটা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা দিতেও রাজি এই যুবক।

আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বদিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেছে।

নিউজবাংলা কথা বলেছে ইসহাকের আইনজীবী কফিল উদ্দিনের সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘ইসহাকের আচরণ ও চেহারা সব কিছু বদির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে সে বদির ছেলেই। এটাকে অস্বীকার করার কিছু নাই।’

সুফিয়া, যাকে গোপনে বিয়ে করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে বদির বিরুদ্ধে

সুফিয়া জানান, ১৯৯২ সালের জানুয়ারি দিকে তারা টেকনাফ ইউনিয়নের অলিয়াবাদে থাকতেন। তার বাবা থাকতেন সৌদি আরবে। সে সময় বেশ কয়েকবার ডাকাতি হয়।

টেকনাফ তখন ইউনিয়ন পরিষদ। আর এর চেয়ারম্যান বদির বাবা এজহার মিয়া। বিষয়টি তাকে জানালে বাড়িতে আশ্রয় দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সুফিয়াদের ঘরবাড়ি বিক্রি করে দেয়ার পরামর্শ দেন এজহার। তারাও চেয়ারম্যানের কথা মতো বাড়িঘর বিক্রি করে দেন।

বদিদের বাড়িতে সালিশ চলত, এমন একটি পরিত্যক্ত ঘরে আশ্রয় হয় সুফিয়াদের।

সুফিয়া জানান, বদির সঙ্গে তার দেখা হতো, কথা হতো। এক পর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজি হয়ে যান তিনিও।

পরে ১৯৯২ সালে ৫ এপ্রিল ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ে হয়। বিয়ে পড়ান আবদুর রহমান বদিদের পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলির মৌলভী আবদুস সালাম। সাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান এখলাছ।

এই কথা জানতেন না বদির বাবা এজহার মিয়া। যখন কানে আসে, তখন গর্ভে সন্তান ইসহাক নড়াচড়া শুরু করে দিয়েছে।

কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নানা ঘটনায় আলোচিত। ছবি: নিউজবাংলা

সুফিয়া জানান, বাবা এজহারের রাগ দেখে বদি সে সময় গর্ভপাত করার চেষ্টা করেন। তিনি রাজি না হওয়ায় গর্ভের সন্তানসহ হত্যার হুমকি দেন। পরে রাজমিস্ত্রিকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন বদি ও এজহার।

সুফিয়া জানান, তিনি যে গর্ভবতী, সেটি জানতেন না রাজমিস্ত্রি নুরুল।

সুফিয়ার ভাষায়, ‘আর আব্বা ইত্তে সৌদি আরব আইসিল। আরও ঘরত প্রায়ই ডাহাইত অক্কলে ডাহাতি অয়ত নিরাপত্তার লাই আরে এমপির বাপ এজেহার কোম্পানি ইতার ঘরর এক্কান বারান্দা আইসসিল এড়ে আশ্রায় লই। এড়ে থাকা অবস্থাত গোপনে বদি সাহেব আরে ১৯৯২ সালে ৫ এপ্রিল বিয়া ঘরে।

‘বিয়া পরায় বদি সাহেবর হোটেল নিরিবিলি, বিয়া পারায়ে মৌলভী আবদুস সালাম বিয়াত সাক্ষী আইসসিল হোটলর দারোয়ান এখলাছ।’

তিনি বলেন, ‘বিয়ার হতা ইয়ান ইতার ঘরর আত্মীয়-স্বজন অক্কলে জানাজানি হয়। এত্তে প্রথমে বদি সন্তান নষ্ট গইত্ত চাইল। আই রাজি নয়লে এত্তে ইসহাক আর ছয় মাসর পেটত। ইতার মানুষ অক্কলে আরে জোরগরি ইতারত এত্তে রাজমিস্ত্রী হাজ গইত্ত নুরুল ইসলাম ইবারে বোন পরিচয় দিয়রে আরে বিয়া দেয়।’

সুফিয়া এখন তার ছেলে ইসহাকের পিতৃপরিচয় চান। তার কোনো দাবি-দাওয়া নেই জানিয়ে ইসহাককে ছেলে হিসাবে মেনে নেয়ার জন্য বদির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এই কুড়েঘরে ছেলে ইসহাককে নিয়ে থাকেন সুফিয়া। ছবি: নিউজবাংলা

নুরুল যা বলছেন

সুফিয়ার বিয়ে হয়েছিল যার সঙ্গে, সেই নুরুল ইসলাম বলেন, বদির বাবা এজহার মিয়া একদিন তাকে ডেকে বললেন, ‘তোর জন্য একটা মেয়ে ঠিক করেছি।’

তখন না করেননি নুরুল।

বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বদিও। তিনিও সুফিয়াকে চাচাত বোন পরিচয় দেন। বলেন, সবসময় পাশে থাকবেন।

তবে বিয়ের দুইমাস পর নুরুল জানতে পারেন তার স্ত্রী গর্ভবতী। তখন সুফিয়া তাকে সব খুলে বলেন। পরে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সুফিয়া।

নুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, এমন বাস্তবতা সামনে আসবে তা কখনও কল্পনাও করেননি তিনি। কখনও কক্সবাজারে কখনও চট্টগ্রামে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াতেও হয়েছে তাকে।

নুরুলও চান, সন্তান হিসেবে ইসহাককে স্বীকৃতি দিক বদি।

এ বিভাগের আরো খবর