‘সখি ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনাময়’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় গানের প্যারোডি করে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘সখি গণতন্ত্র কারে কয়…’।
সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন দিবসে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় এই প্যারোডি করেন বিএনপি মহাসচিব।
গণ আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের এই দিনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন এরশাদ। এই দিনটিকে ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
ফখরুলের অভিযোগ, এখন গণতন্ত্র নেই। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সামরিক স্বৈরাচারের যারা পতন করিয়েছিলেন তাদের সামনে কথা বললেও সাহসের দরকার হয়।’
‘একটি হালকা কথা দিয়ে শুরু করতে চাই’-মন্তব্য করে ফখরুল জানান, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খুব ভক্ত। তার গান শোনেন, তার কবিতা পড়েন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে আসার সময় আমার একটি গানের কথা মনে পড়ল। রবীন্দ্রনাথের একটি হালকা গান আরকি। তোমরা যে বলো ভালোবাসা ভালোবাসা, সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলই যাতনাময়? তখন আমার ইচ্ছে হলো এই গানের একটি প্যারোডি করি। যে, তোমরা যে বলো গণতন্ত্র গণতন্ত্র, সখী গণতন্ত্র কারে কয়, সেকি কেবলই যাতনাময়?’
আবার একটি ৬ ডিসেম্বর দরকার উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকের এই দিনে যে সমস্ত পত্র-পত্রিকা লিখতে ভয় পায়, সত্য কথা বলতে ভয় পায়, তারাও আজ এই গণতন্ত্র দিবসকে তুলে ধরেছে। এর একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই যে গণতন্ত্র দিবসকে তারা হাইলাইট করছে, সামনে তুলে ধরছে এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো-দেশে গণতন্ত্র নাই, এই গণতন্ত্রকে ফেরাতে আবার সেই ৬ ডিসেম্বর দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমার নিজের অধিকারের কথা বলি, নিজের স্বাধীনতার কথা, একটা ভোট দেয়ার কথা, নিজের মতামতের কথা বলি- এখন আমরা কোথাও বলতে পারি না।’
সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্রকামীরা বেকায়দায় আছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখুন ভারতের দিকে তাকিয়ে। তারাই সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে। অথচ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারে না সেখানে। গণতন্ত্রের কী অবস্থা! পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ৭০ বছর ধরে সংগ্রাম করছে অধিকার ফিরিয়ে আনার। অথচ তারা কথা বলতে পারছে না। ইরান বা লিবিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন। কী অবস্থা! গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা সহজ কথা নয়।’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা গণতন্ত্র; তা যে হত্যা করে আজ শাসন করছে সেই গণতন্ত্রের জয়ন্তী পালন করবে তারা। কোন গণতন্ত্র? অন্যের গলা টিপে ধরার গণতন্ত্র?’
তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, আর কাজটা করে তার ঠিক উল্টো। এই গণতন্ত্র তাদের রক্তের মধ্যে নেই, তাদের ডিএনএর মধ্যে নেই। তাদের রক্তের মধ্যে, ডিএনের মধ্যে রয়েছে নির্যাতনকারী, নিপীড়ন। গণতন্ত্র আর আওয়ামী লীগ এক সঙ্গে যায় না, কোনোদিন এক সঙ্গে যায় না।’