বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমসি কলেজে ধর্ষণ: দুই মাসেও আসেনি ডিএনএ প্রতিবেদন

  •    
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:০০

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার দুই মাসেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ।

দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা ওই ঘটনার ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ায় অভিযোগপত্র দেয়া যায়নি বলে পুলিশ দাবি করছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ। ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় হাইকোর্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষের চার তদন্ত কমিটিই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

দুই মাস পরও ধর্ষণের শিকার নারী মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি এখনও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

ওই রাতেই ওই নারীর স্বামী ছয় জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েক জনকে আসামি করে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন।

ঘটনার পর পালিয়ে গেলেও তিন দিনের মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম এবং সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার আট জন। ছবি: নিউজবাংলা

গ্রেফতারের পর সবাইকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পায় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কোনো পদে না থাকলেও গ্রেফতার হওয়া সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে জানা যায়।

ওই ঘটনার পর দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। ধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইনও সংস্কার করে সরকার।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য জানান, তাদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে এখনও ডিএনএ প্রতিবেদন পাননি। প্রতিবেদনটি হাতে পেলেই অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

এটি আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন অনুযায়ী, এসব মামলায় আসামি হাতেনাতে ধরা পড়লে ১৫ দিন, ধরা না পড়লে ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলায় ডিএনএ প্রতিবেদন আসতে এতটা দেরি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। পুলিশের পাশাপাশি সরকারের অন্য সংস্থাগুলোরও এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানতে পেরেছি। আশা করছি শিগগিরই আমাদের হাতে পৌঁছাবে। প্রতিবেদনটি পেলে দ্রুততম সময়ে অভিযোগপত্র দেয়া হবে।’

কবে নাগাদ অভিযোগপত্র দেয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলা যাবে না। তবে আমরা দ্রুততম সময়ে দেব।’

তিনি জানান, মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। উপর মহল থেকেও এটি তদারকি করা হচ্ছে। এ কারণে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।

এদিকে ধর্ষণের ওই ঘটনার রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আসামি সাইফুর রহমানের দখলে থাকা কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ অস্ত্র আইনে মামলা করে। সেই মামলার অভিযোগপত্রও এখনও দেয়া হয়নি।

প্রকাশিত হয়নি কোনো তদন্ত প্রতিবেদন

ধর্ষণের ঘটনার পর হাইকোর্ট থেকে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজকে প্রধান করে ২৯ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১৬ অক্টোবর ওই কমিটির ১৭৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টের বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও মহি উদ্দিন শামিমের বেঞ্চে জমা দেয়া হয়। শুনানি শেষে ২০ অক্টোবর প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৬ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটি ১০ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয়।

২৮ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ অক্টোবর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও সিলেট আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. গোলাম রাব্বানীকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করে। পাঁচ কার্যদিবস পর এই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

তবে চার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও এখন পর্যন্ত একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়নি।

এর মধ্যে নিজস্ব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২ অক্টোবর গ্রেফতার চার জনের ছাত্রত্ব বাতিল করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সালেহ আহমদ জানান, পুলিশ ওই ঘটনায় তদন্ত করছে। বিচার বিভাগের নির্দেশেও আলাদা তদন্ত হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তদন্তের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

পুলিশ মামলার অভিযোগপত্র দেয়ার পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কেমন আছেন ওই গৃহবধূ

ধর্ষণের পর উদ্ধার করে ওই নারীকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল পুলিশ। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।

তবে শারীরিক ক্ষত সারলেও মানসিকভাবে সুস্থ হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তার স্বামী। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী এখনও তার বাবার বাড়িতে আছে। সে মানসিকভাবে এখনও বিধ্বস্ত।’

অভিযোগপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই-তিন দিন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কবে অভিযোগপত্র দেয়া হবে তা জানাননি।’

এ বিভাগের আরো খবর