হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ছবি সম্বলিত একটি পোস্টার বা প্রচারপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে এ সেতু তৈরির সময়কার একটি প্রচারপত্র।
অনুসন্ধানে দেখে গেছে, প্রচারপত্রটি ভুয়া। এটির কোনো ঐতিহাসিক মূল্য নেই। তাসরিক হাসান নামে এক সৌখিন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নিতান্ত ব্যঙ্গচিত্র হিসেবে এটি তৈরি করেছেন।
ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে ঐতিহাসিক উপকরণ এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে এটিকে পুরনো আমলের প্রচারপত্র বলে মনে হয়। তবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে অনেকেই এটির বিভিন্ন ত্রুটি ধরতে পারতেন।
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা জয়দীপ দে পুরনো ছবি ও ছাপার অক্ষর বিষয়ে খোঁজখবর করেন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ‘যেই সময়ের ছবি হিসেবে পোস্টটি করা হয়, সেই সময় লিথোগ্রাফিক প্রিন্টে পোস্টার ছাপা হতো। এই প্রিন্টে ছাপার পর ছবি কিংবা অক্ষর কোনোটাই এইরকম ঝকঝকে দেখানোর কথা না। তার ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের যে ছবিটি এখানে দেখা যাচ্ছে, সেটি এই সময়ের তোলা ছবি, পরে এডিট করে সেটি সাদা-কালো করা হয়েছে।’
অক্ষরগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যে সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি হয় (১৯১০-১২), সেই সময় ছাপার কাজে পঞ্চানন কর্মকারের ফন্ট ব্যবহার করা হতো। ছাপার মেশিন অতো নিখুঁত ছিল না যে সবগুলো অক্ষর ঝকঝকে আসবে। সেই সময়ের যে কোনো পোস্টারের ছাপার অক্ষরগুলোর ছাপায় কমবেশি হতোই।’
ছবির পোস্টদাতা তাসরিক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সবসময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফটো কন্টেন্ট তৈরি করি। একটু স্যাটায়ার করাই আমার এই কাজগুলোর মূল লক্ষ্য। ব্যঙ্গচিত্রের মতোই ফটো কন্টেন্টও এক ধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ বলে আমি মনে করি। এখন এটি নিয়ে কিছু মানুষ তেনা প্যাঁচানোর চেষ্টা করছে। সেটা দুঃখজনক।
'এটা নিয়ে যাতে বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, সেজন্য আমি নিজেই ছবিটি পোস্ট করে তার প্রথম কমেন্টে বলেও দিয়েছি এই পোস্টারটা কিন্তু রিয়েল না, ইমাজিনারি আইডিয়াটা অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুরছিল! আরেকটা ব্যাপার এটা আমার সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে বানানো ফটো কন্টেন্ট। ইমপ্লিমেন্টেশনটা কতটুকু রিয়েলিস্টিক হইছে জানি না।’
পোস্টটির কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফটো কন্টেন্টের উপরের বাম দিকের কোনায় লেখা আছে ‘জয় ইংরেজ’।
উপরের ডান কোনার লেখা ‘জয় ভিক্টোরিয়া’। সাধারণ চোখে দেখলে মনে হবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রানি ভিক্টোরিয়ার উপহার। কিন্তু রানি ভিক্টোরিয়া ২২ জানুয়ারি ১৯০১ সালে মারা যান।
ইতিহাস নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে কাজ করা জনপ্রিয় পেজ ‘ওয়াক বাংলাদেশ’ এর কো-ফাউন্ডার রাফিদ আল যাহুর বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সময় রানি ভিক্টোরিয়ার জয়ধ্বনি করার কোনো কারণ নেই। কারণ এই ব্রিজ বানানোর কাজই শুরু হয় ১৯১০ সালে।
'যদি কারো নামে জয়তু করার প্রয়োজন হয় সেটা হতে পারত লর্ড হার্ডিঞ্জের, যিনি ১৯১০ সাল থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তার নামেই মূলত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে।’
জয়দীপ দে বলেন, ‘ছবিটির ভিতরে কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে উন্নয়ন নিয়ে। এ ফটো কন্টেন্ট যিনি তৈরি করেছেন তিনি মূলত বর্তমান সরকারের পদ্মা সেতুর মতো উন্নয়ন কাজের স্যাটায়ার করতে চেয়েছেন।’