ইচ্ছা হলেই গাছের পাতা ছিড়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশি বাজান। পাতা দিয়ে সুর তোলেন ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, আধুনিক গানের। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের হঠাৎপাড়ার বাসিন্দা মকলেচুর রহমান।
দিন এনে দিন খাওয়া সংসার তার। অভাব অনটনের কারণে গ্রামের মানুষের জমিতে কামলা খাটেন। মাঠে গিয়ে কাজ করার সময় বা মাঠ থেকে ফেরার সময় গাছের পাতা ছিড়ে বাঁশি বাজান।
বিরল প্রতিভার এই মানুষটির জীবনে তেমন কিছু চাওয়া-পাওয়া না থাকলেও শেষ ইচ্ছা বড় কোন অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজানোর।
মকলেচুর জানান, সুরের প্রতি ভালোবাসার টানেই ১৪ বছর বয়সে গাছের পাতা দিয়ে বাঁশি বাজানো শেখেন। গ্রামের মাঠে কাজ করার সময় বা বাড়ি থেকে হাট-বাজারে যাওয়ার সময় গাছের পাতা ছিড়ে বিশেষ কৌশলে মুখে নিয়ে বিভিন্ন গানের সুর তোলেন।
গ্রামের চায়ের দোকান, হাট-বাজারে যেখানেই বাঁশি বাজান, জড়ো হয়ে যায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। চলে অনুরোধের পালা। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধদের পছন্দের গানে সুর তোলেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকেন তার বাঁশি বাজানো।
গেল ৪০টি বছরের বেশি সময় ধরে মকলেচুর এ অনুশীলন করে আসছেন। তার বাঁশির সুর শুনে বিমোহিত এলাকার মানুষ।
স্ত্রী চায়না খাতুন জানান, অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তার স্বামী মকলেচুর। অনেকে আবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মনে কষ্ট থাকলেও মানুষ যখনই অনুরোধ করেন, তখনই বাঁশি বাজান তিনি।
মকলেচুরের বড় ভাই আসির উদ্দীন মণ্ডল জানান, যখন মনে হয়, যেখানে ইচ্ছে হয়, সেখানেই যেকোনো গাছের পাতা ছিড়ে তার ভাই বাঁশি বাজানো শুরু করেন।
আমিরুল ইসলাম নামের এক প্রতিবেশী বলেন, পাতা দিয়ে হাতে না ধরে এমন বাঁশিওয়ালা আগে আর দেখেননি। রাতে কিংবা দিনে তার বাঁশির সুর শুনলেই দাঁড়িয়ে শুনতে থাকেন। বিরল প্রতিভার এই মানুষটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া দরকার।
মকলেচুর জানান, তার জীবনে অনেক কষ্ট। বয়স ৫৩ চলে। আর কতদিনই বা বাঁচবেন। ৩ ছেলে, ১ মেয়ে। মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। ৩ ছেলে থাকতেও অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতে হয়।
তারপরও বাঁশি বাজালে সবাই যখন শোনে তখন মনের কষ্ট দূর হয়ে যায়। চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। একটাই ইচ্ছা, বড় কোনো আসরে বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়া।
নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারমান কবির হোসেন বলেন, ‘মকলেচুর রহমান যখন পরিষদে আসেন, আমাদের বাঁশি শোনান। পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয়। ভবিষ্যতে সুযোগ থাকলে আরও সহযোগিতা করা হবে।’