বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাছ কেটে আয় ৫০ হাজার

  •    
  • ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ১০:২৮

বড় মাছ কেজি প্রতি ১০ টাকা আর ছোট মাছ ২০ টাকা দরে কাটেন আবদুল্লাহপুরের মাছ বাজারের মো. সজীব। দিনে আয় এক হাজার দুইশ থেকে শুরু করে সাড়ে চার হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মো. সজীব। বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর। সকালে আবদুল্লাহপুরে মাছের পাইকারি বাজারে গেলে দেখা মিলবে।

সেখানে পাইকারির পাশাপাশি খুচরাও বিক্রি হয় মাছ। আর তা কাটার ব্যবস্থা আছে এক কোণে। সেখানে বড় মাছ কেজিপ্রতি ১০ টাকা আর ছোট মাছ ২০ টাকা করে কাটা হয়।

সজীব জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিনে প্রতিদিন কাটেন ২০০ থেকে ৩০০ কেজি। এই হিসাবে আয় আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

 

শুক্র-শনিবার ছাড়া?

সজীব জানান, কোনোদিন ২০০ কেজি, কোনোদিন ১৫০ কেজি, মন্দা দিনে ১০০ কেজিও হয়। যখন ১০০ কেজি হয়, তখন আয় এক হাজার দুইশ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।

সজীব যে হিসাব দিলেন, তাতে এই কাজে তার মাসিক আয় কমসে কম ৫০ হাজার টাকা।

যেখানে বসে মাছ কাটেন, সেখানে কোনো দোকান ভাড়া নেই। তবে চান্দা দিতে হয় প্রতিদিন। অন্যদের কাছ থেকে জানা গেল, এই চাঁদা এক থেকে দেড়শ টাকা। তবে সজীব বলতে চাননি তা।

সজীবের মতো আরও তিনটি দোকান রয়েছে আবদুল্লাহপুরে। তাদের আয় বেশ ভালো, তাই দোকানে এক বা একাধিক কর্মীও রেখেছেন তারা।

কেউ মাছ কিনলে এই কর্মচারীরা গিয়ে বলেন, ‘স্যার, মাছটা দেন, কাইট্যা দেই।’

প্রত্যেকেই বলেন, ‘বডি খালি আছে। গেলেই কাইট্যা দিব।’

তবে বটি আসলে খালি থাকে না। আর মাছ কাটতেই হবে, তাই ক্রেতারাও দাঁড়িয়ে থাকেন।

গত সোমবার সজীবের দোকানের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা গেল তার কাজ। দেখা গেল, একটি বড় মাছ কাটতে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মিনিট লাগে।

সজীব সেদিন বেশ কয়েকটি বড় মাছ কাটছিলেন। তিন থেকে আট কেজি ওজনের মাছও তিনি সেদিন কেটেছেন।

মাছের আঁশ ছাড়াতে একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করেন সজীবের সহকারী। আর সজীব কাটতে থাকেন।

সজীবের ওই সহকারী আঁশ ছাড়িয়ে আবার ক্রেতা ধরে আনতে যান। তিনি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বলেন, ‘স্যার আমাগো কাছে ব্যাগ ফ্রি। আসেন।’

বড় মাছ কতভাবে কাটা যায়, আর একেক ধরনের কাটা মাছের একেক ধরনের নাম আছে।

এই যেমন বাংলা স্লাইস, চায়নিজ কাটা, আরও কত কী।

সজীব জানান, ভোর ছয়টা থেকে সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত এখানে মাছ কাটেন তারা। এরপর অন্য কাজ করা হয়।

সজীবের এই মাছ কাটার কাজে আসা, বাড়তি আয়ের একটা সুযোগ হিসেবে। তবে এখন এটাই তার আয়ের প্রধান উৎস।

টঙ্গী পেট্রল পাম্পের কাছে একটি চায়ের টঙ দোকান আছে সজীবের। মাছ কাটা শেষে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া, গোসল শেষে একটু জিরিয়ে নেন তিনি। এরপর খোলেন তার চায়ের টঙ দোকান।

আবার কোনো কোনো দিন মাছের সরবরাহ বাড়লে পাইকারিতে দাম কমে গেলে, তারও সুযোগ নেন সজীব। সেদিন মাছ কিনে নিয়ে বিক্রি করেন খুচরায়। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সেদিন আবার আয় হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।

বড় মাছের যে আঁশ হয়, সেটাও আবার সজীবদের আয়ের একটি উৎস। এই আঁশ কিনে নেয়ার লোক আসে। কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পাওয়া যায় দিন ভেদে।

আবার মাছের মাথা কেউ কেউ নেন না। কেউ কেউ ডিম দিয়ে যান। এগুলোও বিক্রি করেন সজীব।

নাড়িভুড়ি মাছের খামারের লোকজন নিয়ে যান। তারাও খুশি হয়ে কিছু টাকা দেন।

সজীবদের মতো আরও যাদের দেখা গেল বাজারে তাদের সবাই একইভাবে কাজ করেন। মাছ কাটা শেষে কেউ চায়ের দোকান চালান, কেউ রড সিমেন্টের দোকানে ভ্যানগাড়ি চালান, কেউ অন্য শ্রমিকের কাজ করেন।

সজীব জানান, তিনি মাছ কাটেন ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। প্রথমে মাছ কুড়াতেন। আড়তে মাছ নামানোর সময় ছোট মাছ কিছু পড়ে গেলে তা কুড়িয়ে নেয় ছোট বাচ্চারা। এ নিয়ে মাছের কারবারিরা কিছু বলেন না।

সজীব বলেন, ‘মাছ বাসায় নিয়া যাইতাম। মায়েরে দিতাম। মায় খুশি হইত। এই করতে করতে মাছ কাডা শুরু করি। এহন অনেক ভালো আছি।’

নিজের জীবনের কথা বলে সজীব ভাবলেন কোনো টেলিভিশনে বুঝি প্রচার হবে তা। বলে দিলেন, ‘কোন টিভিতে দেহাইবেন কয়া যান, কাইল দেখমু।’

এ বিভাগের আরো খবর