ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বোররচর ইউনিয়নের জাফর মন্ডল পাড়ার কৃষক হাসান আলী প্রতি বছরই টমেটোর চাষ করেন। গত বছর টমেটো থেকে এক লাখ টাকা আয় করেছিলেন। এবারও প্রায় দেড় একর জমিতে টমেটোর চারা রোপণ করেন। চারা রোপণে তার খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা।
হাসান আলী ব্যাপক লাভের আশা করলেও তার সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে। তার সব টমেটো গাছে পঁচন ধরেছে। একে একে মরছে ফুল ও ফল ধরা টমেটো গাছগুলো। সার, কীটনাশক দিয়েও সমাধান মিলছে না। এখন পাঁচ সদস্যের সংসার চালানোর খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
হাসান আলীর মতো একই অবস্থা জাফর মন্ডল পাড়ার কৃষক আব্দুল হকের। তিনি দুই লাখ টাকায় ৭৭ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে আগাম টমেটোর চারা রোপন করেছিলেন। ৫৫ শতাংশ জমির টমেটো গাছ মরে গেছে। বাকি জমির গাছগুলো মারা যাওয়ার পথে। গাছগুলো বাঁচানোর জন্য অনেকের পরামর্শ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অন্য ফসল করার জন্য সমিতি থেকে ঋণ তোলার চেষ্টা করছেন। ঋণ না পেলে জমি পতিত থাকবে।
শুধু হাসান আলী বা আবদুল হক নন, বোররচর ও পরাণগঞ্জ ইউনিয়নের অনেক কৃষক এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
এই দুটি ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের ক্ষেতের টমেটোর গাছ অজানা কারণে মারা যাচ্ছে। অনেকেই ঋণ নিয়ে টমেটো চাষ করেছিলেন। এখন গাছ মরে যাওয়াতে তারা সবাই দিশেহারা। কোনো কোনো কৃষক ক্ষতি এড়াতে মরা ও পঁচন ধরা টমেটো গাছের চারা ফেলে দিয়ে পুনরায় ওই ক্ষেতে মরিচ ও কপির চারা রোপন করছেন।
বোররচর গ্রামের রেজাউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, তিনি ৫৫ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন। তার খরচ হয়েছিল ৯০ হাজার টাকা। টমেটো গাছ মরে যাওয়ায় এখন জমিতে মরিচের চাষ করছেন। এখনও ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ বছরের ক্ষতি পোষাতে কয় বছর লাগবে আল্লাহই ভালো জানেন। শতশত একর জমির টমেটো নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগের কাউকে পরামর্শের জন্য পাননি।
একই গ্রামের বর্গাচাষী সোহেল মিয়া জানান, গত বছর তিনি টমেটো চাষ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় আয় করেছিলেন। তাই এ বছরও জমি বর্গা নিয়ে টমেটো এবং কপির চারা রোপন করেন।
কপির চারা টিকে থাকলেও ৪৪ শতাংশ জমির টমেটো গাছ মরে গেছে। কি কারণে মরল তাও বলতে পারেন না। এবার তার দুই লাখ টাকার মতো ক্ষতি হবে। কৃষি বিভাগের কারও সঠিক পরামর্শও পাননি বলে অভিযোগ করেন সোহেল মিয়া।
পরাণগঞ্জ গ্রামের কৃষক মো.সোহেল বলেন, এক কাঠা জমিতে টমেটো চাষে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। ভালো ফল পেতে সারাক্ষণই টমেটো ক্ষেতে সময় দিতে হয়। এ বছর খরচের পাশাপাশি বেশি সময় দিয়েও ক্ষেত রক্ষা করা গেল না।এ সংকটময় মুহুর্তে বোররচরের কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে কৃষক মাহবুবুল হক কাজল ও আব্দুল হান্নান বলেন, তাদের অঞ্চলের সবজির সুনাম রয়েছে সারা দেশে।এ বছর টমেটোর গাছ মরে যাওয়ায় দেশে টমেটোর সংকট দেখা দেবে বলে মনে করেন তারা।ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো.মতিউজ্জামান বলেন, বেশি বয়সের চারা রোপণ, টানা বৃষ্টি, একই জমিতে বারবার টমেটো চাষ ও অতিরিক্ত মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের কারণে টমেটো গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ ও বোররচর ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে ৫ হেক্টর জমির টমেটো নষ্ট হয়েছে। ওইসব ক্ষেতে বিকল্প সবজি চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।