বাসায় অতিথি আসছে, অথবা মুখের স্বাদ বদলানোর বায়না ধরেছে বাচ্চারা। ভাবছেন আজ দুপুরের খাবার হবে পোলাও-রোস্ট।
পোলাওয়ের চাল চেনা কিন্তু সহজ, কিন্তু রোস্টের জন্য কোন ধরনের মুরগি যুৎসই- সেটা বেছে নেয়া বেশ কঠিন।
বাজারে আছে নানান জাতের মুরগি। কোনোটা দেশি, কোনোটা সংকর আবার কোনোটা একেবারেই খাঁটি ব্রয়লার।
সবচেয়ে বেশি সংকট দেশি মুরগি আর সোনালির তফাৎ বের করায়। সাধারণভাবে ‘পাকিস্তানি মুরগি’ নামে পরিচিত সোনালি মুরগির চেহারা এবং আচার-আচরণ অনেকটাই দেশি মুরগির মতো বলেই গোলকধাঁধাঁয় পড়েন ক্রেতা। এই সুযোগে অনেক বিক্রেতাই সোনালিকে চালিয়ে দেন দেশি মুরগি হিসেবে।
এই প্রতারণা থেকে দূরে থাকার উপায় জানতে কারওয়ানবাজারে মুরগির পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
কারওয়ানবাজারে খুচরা ও পাইকারি দুভাবেই মুরগি বিক্রি করেন মোহাম্মদ সুমন।
- আরও পড়ুন: গোলমেলে মসলা চিনবেন কীভাবে
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ‘এট্টু খিয়াল কইরলেই দেশি আর পাকিস্তানি (সোনালি) মুরগির ডিফারেনস বোঝা যায়। পাকিস্তানি মুরগির ফা (পা) হইলো লম্বা আর মুটা। দেশিরটা ছোট। পাকিস্তানির পা ফ্রেশ, তয় দেশির পা ময়লা।’
সুমন বলছিলেন, দেশি মুরগি বিভিন্ন রঙের হয়, তবে সোনালি মুরগি সাধারণত দুই রঙের- খয়েরি ও হলদেটে। আর দেশি মুরগির পশম উজ্জ্বল, কিন্তু সোনালি মুরগির পশম কিছুটা ফ্যাকাশে।
আরেক বিক্রেতা সোহেল নিউজবাংলাকে জানান, পাকিস্তানি মুরগির পাঁ মসৃণ, তবে দেশি মুরগির পা খসখসে ও অমসৃণ। দেশি মুরগীর ঝুঁটি গাঢ় লাল রঙের, সোনালিরটা ফ্যাকাশে।
‘পাকিস্তানির চোখ ডিপ কালার, দেশিরটা লাল। পাকিস্তানির ঠোঁট কাটা (ভোতা), দেশিরটা ধারাল।’
সোহেল মনে করেন, ‘দেশি মুরগির স্বাদের তুলনা হয় না, তবে পাকিস্তানিও খুব একটা খারাপ না। পাকিস্তানিটা নরম, দেশিটা একটু শক্ত।’
আর ব্যবসায়ী সুমন বলছেন, দেশি মুরগির স্বাদ বাড়ে বেশি ঝালে রান্না করলে। আর মাংস খানিকটা নরম বলে রোস্টের জন্য সোনালি মুরগিই ‘বেস্ট’।
দুই জাতের মুরগির ডাকেও রয়েছে ভিন্নতা। বিক্রেতা আবুল বাশার বলেন, ‘দেশি মুরগি জোরে ডাক দেয়, সোনালি আস্তে। আজানের সময় দেশি মুরগি ডাক দিয়া মাইনষেরে উডায়।’
- আরও পড়ুন: কীভাবে চিনবেন ভালো চকলেট
দেশি মুরগি বলে সোনালি গছিয়ে দেয়ার অভিযোগ একেবারেই মানতে রাজি নন কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, ‘ঠকানোর সেই দিন এখন আর নাই।’
মোহাম্মদ সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে কারওয়ান বাজারের যে দুন্নাম ছিলো, এখন সেগুলা নাই। এখন দেশি এক জাগায়, পাকিস্তানি আরেক জাগায়, কোনো মিক্স নাই। আগে দেশির লগে পাকিস্তানি মিশায়া বিক্রি করত। এখন আর ওই জিনিশটা নাই।’
ব্যবসায়ী আবু বকর অবশ্য এতটা জোর দিয়ে স্বচ্ছতার দাবি করছেন না। তিনি বলেন, ‘যারা চিনে তারা কিনতে পারে, যারা চিনে না তারা কিনতে পারে না, দোকানদারের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু কাস্টমার যদি বেশি দাম দেয়, দোকানদার জীবনেও তারে ঠকাইব না। কিন্তু কাস্টমার ন্যায্য দাম না দিলে হে ঠকব, দোকানদার ঠকব না।’
মুরগির দামে করোনার প্রভাব
দেশি মুরগি কিনতে কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শহীদুল হক।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দোকানদাররা আমাকে দেশি ছাড়া দেয় না। পরিচিত, বিশ্বাস আছে। তাছাড়া হাতে লইয়াই বোঝা যায়, চেহারা আলাদা, রান্না করলেও দেশির টেস্ট বোঝা যায়। পাকিস্তানির টেস্ট নাই, নরম, পাও লম্বা।’
- আরও পড়ুন: পদ্মার ইলিশ চিনবেন কীভাবে
দোকানি মাঝারি আকারের দুটি দেশি মুরগির দাম ৯০০ টাকা চাওয়ায় কিছুটা ক্ষুব্ধ শহীদুল হক।
তবে দোকানিদের দাবি, মুরগির বাজার এখন মন্দা। বর্তমানে সোনালি মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, আর দেশি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ী আবুল বাশার মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অহন আমদানি বেশি, বিক্রি কম। করোনার লাগি মানুষের অবস্থা খারাপ। অনুষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ। তাই বেচা-বিক্রি কম, দামও কম।’
মো. সেলিম নামের এক বিক্রেতার আক্ষেপ, ‘করোনার আগে বেশি ব্যবসা হইত, তহন দেশে মহামারি ছিল না। করোনার পরে মানুষ বেকার হইয়া পড়ছে। প্রতিষ্ঠান চলছে না, স্টাফ কমছে, বেহাল অবস্থায় সব। ফুটপাতে এহন হকারের অভাব নাই, যে যা পারছে তা নিয়া বইসা পড়ছে, দাম তো কমবই।’
তবে গত মার্চ মাসের তুলনায় এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। সে সময় সোনালি মুরগির কেজিপ্রতি দাম ছিল ২০০ টাকা, আর দেশি মুরগির কেজি ছিল ৪০০ টাকা।
দেশি এবং সোনালি ছাড়াও আছে ফার্মের কয়েক ধরনের মুরগি।
লেয়ার বা লাল ককের কেজিপ্রতি দাম এখন ২৪০ টাকা। এই মুরগির মাংস বেশ শক্ত, স্বাদে অনেকটা গরুর মাংসের মতো। এছাড়া আছে খাসির মাংসের স্বাদের মুরগি, যার নাম প্যারেন্ট। কেজিপ্রতি দাম ২২০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ১৩০ টাকা কেজিতে। দোকানিরা জানান, ব্রয়লার এবং সাদা কক হোটেলে বেশি চলে। গ্রিলের জন্য ব্রয়লার এবং বিরিয়নি বা তরকারির জন্য সাদা কক ব্যবহৃত হয় হোটেলে।
কারওয়ানবাজারে আগে দেশি ও সোনালি মুরগি পিস হিসেবে বিক্রির চল ছিল। তবে এখন যোগ হয়েছে ওজনে বিক্রি।
ব্যবসায়ী সুমন বলেন, ‘আগে পিস হিসেবে কিনতাম, বিক্রিও করতাম। এখন কিনি কেজি হিসেবে, বেচিও কেজি হিসেবে। কেজিতে নিলে ইজি, কাস্টমারের জন্যও, আমগো জন্যও।’