বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ খুলনার আঁখি

  •    
  • ১ অক্টোবর, ২০২০ ১৪:২৪

খুলনার রূপসা পাড়ের বাগমারা গ্রামের উচ্ছ্বল কিশোরী আঁখি। এ বছর জাতিসংঘের রিয়েল লাইফ হিরোর পুরস্কার জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দেশকে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এ অর্জন মাত্র চার জনের।

করোনা ভাইরাসের কারণে যখন সারাবিশ্ব স্তব্ধ, ঠিক তখন জীবনের গতি সচল রাখতে আঁখিকে বাড়াতে হয় সেলাই মেশিনের গতি। সংসারের খরচ জোগাতে মাস্ক তৈরি এবং বিক্রির কাজ শুরু করেন। অল্প দামে মাস্ক বিক্রির পাশাপাশি গরিবদের বিনামূল্যে বিতরণও করেন আঁখি।

আঁখির বাবা মাসুদ মোল্লা কাজ করতেন স্থানীয় একটি মাছ কোম্পানিতে। হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। পাঁচ সদস্যের পরিবারটিতে নেমে আসে অন্ধকার। বাধ্য হয়ে চাকরি নিতে হয় আঁখির মা ও বড় বোনকে। সামান্য রোজগারে বাবার ওষুধ কিনে, তিন বেলা ঠিকমত খাবারই জোটে না। পড়ালেখা বন্ধ। বাধ্য হয়ে পঞ্চম শ্রেণিতেই স্কুল ছাড়তে হয় আঁখিকে। মা ও বোনের সাথে তিনিও যোগ দেন চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায়।

কাজ শেষে বাড়ি ফিরে হাতে থেকে যায় অনেকটা সময়। আশেপাশের মানুষের হস্তশিল্পের কাজ তাকে অনুপ্রাণিত করে। অভাবের সংসারে হাতের নাগালে কিছুই তো নেই। ভাবতে ভাবতে নিজেই উপায় বের করেন। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া পরিত্যক্ত টিস্যু ও পলিব্যাগ দিয়েই তৈরি করে ফেলেন রঙ-বেরঙের ফ্লাওয়ার স্টিক। তাদের আটফুট বাই বারো ফুটের আলো-বাতাসহীন একমাত্র অন্ধকার ঘরটি ঝলমল করে ওঠে আঁখির তৈরি ফুলে। এরপর সে পুঁতি দিয়ে তৈরি করা শুরু করে চমৎকার লেডিস ব্যাগ, দৃষ্টিনন্দন শো-পিস ও আধুনিক ডিজাইনের আকর্ষণীয় সব গহনা। ভালো দামে বিক্রিও হতে থাকে সেসব অলঙ্কার।

দরিদ্র সংসারের অশান্তির আঁচ গায়ে না মেখে এভাবেই চলছিল আঁখির দিন-রাত। বয়স বাড়ার সঙ্গে স্বপ্নও বড় হতে থাকে। অনুসন্ধিৎসু মন খুঁজতে থাকে নতুন কোনো কাজের ঠিকানা। একসময়ে পেয়ে যান বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের ‘জীবনের জন্য’ প্রকল্পের সন্ধান। সেখানে শিখতে শুরু করে সেলাইয়ের কাজ। প্রশিক্ষণ শেষে ওয়ার্ল্ড ভিশন থেকে তাকে একটি সেলাই মেশিন এবং কিছু থান কাপড় দেয়া হয়। সেগুলো দিয়ে নারী ও শিশুদের পোশাক তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় আঁখির ছোট্ট ব্যবসা। বস্তির পাশেই একটি দোকান ভাড়া নেওয়া হয়। সেখানে বসেই তার বাবা বেচাকেনা শুরু করেন।

সেলাই মেশিনের হাত ধরেই আঁখিদের ভাঙা ঘরে উঁকি দেয়া শুরু করে স্বচ্ছলতার মুখ। এরমধ্যেই করোনা ভাইরাস এসে এলোমেলো করে দেয় সাজানো ভুবন। কাজ হারান তার মা ও বড় বোন। একদিকে সংসারের চাপ অন্যদিকে করোনায় ভীত দরিদ্র প্রতিবেশীর অসহায় মুখ। তারা মাস্কটাকে খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরে করোনা থেকে বাঁচতে চায়। কিন্তু করোনার শুরুতে গরীব মানুষের জন্য মাস্ক ছিল একেবারে নাগালের বাইরে। হতদরিদ্র এই মানুষগুলোর জন্যই আঁখি মাস্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। নামমাত্র মূল্যে, কখনোবা একেবারে বিনামূল্যে সেগুলো সরবরাহ করতে থাকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে।

হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হয় আঁখি। ‘বিশ্ব মানবিক দিবস’ উপলক্ষে গেল ১৯ আগস্ট জাতিসংঘ বাংলাদেশের অন্য তিনজনের সঙ্গে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে আঁখির নামও ঘোষণা করে। দুর্যোগের সময় মাস্ক তৈরি করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি ও দরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্যই তার এ স্বীকৃতি। আঁখির সাফল্য বিবিসি থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে।

আখির বাবা মাসুদ মোল্লা বলেন, 'আমার মতো গরিবের ঘরে জন্ম নিয়ে মেয়ে এতদূর যাবে কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি। কিরাম যেন আমার স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আল্লার ইশারা ছাড়া এ কোনো দিনও হয় না।'

আঁখির মা বলেন, ‘আগে আমি কোম্পানিতে কাজ করতাম, এখনও করি, তবে এখন আর আমার মেয়েরা কোম্পানিতে কাজ করে না। ওয়ার্ল্ড ভিশন যখন এই মেশিন দিছে, সিট কাপড় দিছে, তখন আমি দোকান দিছি; দোকান দেওয়ার পরের তে আমার আর্থিক অবস্থা ভালো।' 

খুলনার রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, আঁখি জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ উপাধি পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাকে একটি জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে চেষ্টা চলছে। 

এ বিভাগের আরো খবর