বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজ্ঞানমনস্করাও হতে পারেন ‘অন্ধবিশ্বাসী’

  •    
  • ১ আগস্ট, ২০২১ ১৯:২৯

‘বিজ্ঞানীর ফাঁদে পা দেয়ার প্রবণতা আছে মানুষের। যে কারণে যেসব মানুষ বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করেন বা যাদের বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করতে শেখানো হয়েছে, তারাও অন্যদের মতো বোকা বনে যেতে পারেন।’

বিজ্ঞানে বিশ্বাসীরাও প্রায়ই উদ্ভট কিছুতে বিশ্বাস করে বসেন। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, পরীক্ষিত সত্যের মোড়কে ঢাকা ভুল তথ্যকে নির্ভুল পথে নিতে বিজ্ঞানের সূক্ষ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতি অনেক গভীর।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভিনিয়া ও ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের আরবানা-ক্যাম্পেইনের একদল গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, বিজ্ঞানসম্মত মনে হওয়া অনেক তথ্যের ওপর অন্ধবিশ্বাস কী করে ‘অপবিজ্ঞানকে’ এগিয়ে নিতে পারে। জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল স্যোসাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা নিবন্ধটি

গবেষণার অংশ হিসেবে অনলাইনে চারটি এক্সপেরিমেন্ট করা হয়। সর্বনিম্ন ৩৮২ জন থেকে সর্বোচ্চ ৬০৫ জন স্বেচ্ছায় এগুলোতে অংশ নেন। এক্সপেরিমেন্টগুলোয় দুটি কল্পিত ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করা হয়। যার একটি ছিল জিনগত পরিবর্তন ঘটানো অনুজীবের কারণে ক্যানসার হতে পারে। অন্যটি ছিল, একটি ভাইরাস-নির্ভর জীবাণু অস্ত্রের ওপর।

এক্সপেরিমেন্টে প্রতিটি গল্পকে বৈচিত্র্যময় করে, সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক শব্দ ও সাধারণ শব্দ ব্যবহার করে উপস্থাপন করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে সব অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানমনস্ক, তারা স্বাভাবিকভাবে বৈজ্ঞানিক শব্দ ব্যবহার করা গল্পে দিয়ে প্রভাবিত বেশি হয়েছেন।

এই গবেষণার ফলের ওপর ভিত্তি করে দেখা যায়, বিজ্ঞানের ওপর ভরসা বা বিশ্বাস বাড়ানোর প্রচেষ্টা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও অপবিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস আরও দৃঢ় করতে পারে।

তবে একটি এক্সপেরিমেন্ট থেকে কিছুটা আশাবাদীও হওয়া যেতে পারে। এতে অংশগ্রহণকারীদের বলা হলো, ‘মিডিয়া বা অন্যান্য উৎস কী বলছে সেটার প্রতি অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে নিজেদের কথা ভাবতে হবে’, তখন অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের জবাব নিয়ে আবারও চিন্তা করেন। এতে করে কাহিনীগুলোর প্রতি তাদের সমর্থন কমতে থাকে।

গবেষকেরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক মনে হওয়া দাবিগুলো নিয়ে সংশয় ধরে রাখার এই পরামর্শ আপাতদৃষ্টিতে সঠিক। যেহেতু ভুল তথ্যের সমুদ্রে নির্ভরযোগ্য সত্য ডুবতে বসেছে, তাই সঠিক তথ্য কীভাবে সবার কাছে পৌঁছানো যায় সেটি বের করার প্রয়োজন ক্রমশ বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া ও ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের আরবানা-ক্যাম্পেইনের সামাজিক মনোবিদ ডলোরেস আলবারাসিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের এমন লোক আরও দরকার, যারা তথ্যের সমালোচনা করতে পারেন। সমালোচনামূলক মানসিকতা ব্যক্তির নির্বুদ্ধিতাকে হ্রাস করতে পারে। এতে করে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলিতে বিশ্বাস আরোপের সম্ভাবনা কমে আসবে।’

গবেষকেরা বলছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কয়েক শতাব্দীর ধারাবাহিক উন্নতিতে বিজ্ঞান আসলে কী করতে পারে সেটা মূল্যায়নের পর বেশির ভাগ মানুষ অধিকাংশ ইতিবাচক ফলের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাকে যুক্ত করেন।

কাকে বিশ্বাস করতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল হলেও, সামগ্রিকভাবে বেশিরভাগ মানুষ বিজ্ঞানকে ভালো মনে করে বিশ্বাস স্থাপন করে।

এ সমস্যার মূলে রয়েছে লাখো বছরের বিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত ও সহজে মনোযোগ হারানো মানব মস্তিষ্ক।

মনোযোগ দেয়ার জায়গার অভাব না থাকায়, যে তথ্য আমাদের জন্য উপকারী সেটি শনাক্ত করতে মানব মস্তিষ্ককে আরও হিসাবি হওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন গবেষকেরা।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, প্রকৃতির মৌলিক বিষয়গুলোর হিসাবের চাহিদার চেয়ে মানুষের চিন্তা প্রক্রিয়া বেশি বিবর্তিত হয়েছে অন্য মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কাজ করার চাহিদার কারণে।

বলা হচ্ছে, আমাদের সচেতন জ্ঞান শর্টকাট খুঁজতে বেশি ব্যস্ত, যাকে বলা হয় হিউরিস্টিকস। এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি, এমনকি ফ্যাশনের উপর ভিত্তি করে দ্রুত নির্ধারণ করে- কে আমাদের পক্ষে ও কে পক্ষে নয়।

এই ধরনের হিউরিস্টিক পদ্ধতির ওপর মস্তিষ্কের অতিরিক্ত নির্ভরতাকে থামাতে পারে সমালোচনামূলক পদ্ধতি। এটি মনব মস্তিষ্ককে বিশ্বাস গড়ে তোলা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আরও তথ্য খোঁজার সুযোগ দেয়।

গবেষণাটিতে সমালোচনামূলক চিন্তা করার গুরুত্বসহ বিজ্ঞানের প্রচারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, খুব কম মানুষের নিজেদের বিশ্বাসকে আবার শুরু থেকে গড়ে তোলার সময় আছে। শেষ পর্যন্ত প্রায় সবাই এমন কারও ওপর নির্ভর করেন, যাকে মনে হয় তিনি খুব ‘খুব ভালো জানেন’। অথচ নির্ভর করা সেই ব্যক্তিটি অনেক ক্ষেত্রেই ইচ্ছাকৃত ভাবে ধোঁকা দেন বা নিজেই ভুল পথে হাঁটেন।

আলবারাসিন বলেন, ‘বিজ্ঞানীর ফাঁদে পা দেয়ার প্রবণতা আছে মানুষের। যে কারণে যেসব মানুষ বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করেন বা যাদের বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করতে শেখানো হয়েছে, তারাও অন্যদের মতো বোকা বনে যেতে পারেন।’

এ বিভাগের আরো খবর