খাও বা খাদ্য হও – এই নিয়মে চলে প্রকৃতির খাদ্যজাল। তবে এতদিন ভাইরাস বা অণুজীবেরা যেন ছিল এই নিয়মের ব্যত্যয়। দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি টন ভাইরাস অণুজীবেরা কি কারো খাদ্যে পরিণত হয় না?
অবশ্যই হয়। না হলে ভাইরাস দিয়ে এতদিনে বিশ্ব ভরে যেত। যেহেতু যায়নি, কাজেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করতেন, ভাইরাসখেকো কোনো অণুজীব নিশ্চয়ই আছে। এতদিন পর প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের অনুমান সত্যি। বিজ্ঞানীরা এমন অণুজীব পেয়েছেন, যারা ভাইরাসকে খেয়ে ফেলে।
ইতিপূর্বে ভাইরাস কণাকে ভক্ষণের মাধ্যমে কোনো অণুজীবের শক্তি জোগানো ও মৌলিক পুষ্টি লাভের শক্ত প্রমাণ ছিল না।
উত্তর আমেরিকার মেইন উপসাগরের জলে দুই ধরনের এককোষী অণুজীব পাওয়া গেছে। এটি বিজ্ঞানীদের জানা প্রথম অণুজীব, যারা অন্য ভাইরাসকে খেয়ে ফেলে।
গবেষকরা মেইন উপসাগর ও ভূমধ্যসাগর থেকে প্রায় এক হাজার ৭০০ প্লাংকটন কোষ পরীক্ষা করে সেগুলোর দেহে ভাইরাসের ডিএনএ অন্যান্য ‘দেহাবেশষ’ শনাক্ত করেন। তারা জিনোমিক তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে প্রতিটি ভাইরাসের ডিএনএ বৃদ্ধি করেন।
ভূমধ্যসাগরের নমুনা থেকে তৈরি তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। তারা দেখেন, এ তথ্যভাণ্ডারের প্রায় অর্ধেকে এমন ব্যাকটেরিয়ার শৃঙ্খল আছে, যেগুলোকে খেয়ে ফেলতে পারে প্লাংকটন। মেইন উপসাগরের নমুনার ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ১৯ শতাংশের মতো।
ভাইরাস শৃঙ্খল মোটামুটি একই রকম ছিল। মেইন উপসাগরের নমুনা থেকে করা তথ্যভাণ্ডারে অর্ধেক বা তার বেশিসংখ্যক ভাইরাস থেকে পাওয়া জিনের অংশ রয়েছে। ভূমধ্যসাগরের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি।
বেশিরভাগ ভাইরাস শৃঙ্খলই দৃশ্যত এসেছে ব্যাকটেরিওফাজ (পরজীবী ব্যাকটেরিয়া) থেকে।
এ বিষয়ে বায়ো ইনফরম্যাটিকস বিজ্ঞানী জুলিয়া ব্রাউন বলেন, ভাইরাসগুলো ফসফরাস ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ। এগুলো কার্বন সমৃদ্ধ খাদ্যের ভালো পরিপূরক হতে পারে। কার্বনসমৃদ্ধ খাবার হতে পারে কোষযুক্ত শিকার কিংবা কার্বনসমৃদ্ধ সামুদ্রিক সেলুলয়েড।
তিনি আরও বলেন, পানি থেকে ভাইরাস অপসারণের ফলে অন্য অণুজীবকে সংক্রমণকারী ভাইরাসের সংখ্যা কমতে পারে। ভাইরাস কণার মধ্যে জৈব কার্বন প্রবেশ করলে খাদ্যশৃঙ্খল উচ্চতর হয়।
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট