সরকার হটাতে ‘জনগণের অভ্যুত্থান’ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে রোববার দুপুরে এক নাগরিক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একটা অভ্যুত্থান, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উঠে আসা– এটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
‘আমাদের হাতে অস্ত্র নেই, আমরা অস্ত্রবাজ নই। আমরা সশস্ত্র সংগ্রামের বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় অর্জন করতে চাই।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কারাবন্দি সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে ‘রুহুল আমিন গাজী মুক্তি পরিষদের’ উদ্যোগে এই নাগরিক সমাবেশ হয়।
গত বছরের ২১ অক্টোবর ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরা রাষ্ট্র ও সরকারকে এক করে ফেলেছে এবং সব কিছুতে দলীয়করণ করে ফেলেছে। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে: আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। আওয়ামী লীগই সেই দল, যারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল সমস্ত দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে, পত্রিকা সব বন্ধ করে দিয়েছিল…।
‘আমার দুঃখ হয়, কষ্ট হয় যে, এই সংবাদপত্রের কর্মী বা সংবাদপত্রের যারা মালিক, তাদের একটা বিরাট অংশ আজকে উচ্ছিষ্টভোগী হয়ে গেছে। তারা সরকারের একটু সুন্দর দৃষ্টি দেখলে, সরকারের একটু আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চাটুকারিতা করছে। যার ফলে ভিন্ন একটা সংবাদমাধ্যম তৈরি হয়ে গেছে বাংলাদেশে।
‘আপনি ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো দেখুন: কী অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে, আপনি প্রিন্টিং মিডিয়াগুলো দেখুন, কী অবস্থা তৈরি হয়েছে। একটা-দুইটা পত্রিকা… যারা একটু লিখতেন, তারাও লিখতে সাহস করে না। আমি তাদেরকে দোষারোপ করি না, আমি বলছি যে, দেশে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, 'এই সরকারের জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যারা সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা আজকে এ দেশকে সত্যিকার অর্থে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
‘এটা প্রকৃতপক্ষে একটা তাঁবেদার রাষ্ট্র হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে এই সরকার একটা পুতুল সরকার। যার ফলে এ দেশে মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। রুহুল আমিন গাজীর মতো একজন বিজ্ঞ সাংবাদিক, একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিককে ১০ মাস জেলে আটকে রেখেছে।’
সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোথায় তাকে সফল বলবেন। একমাত্র চুরি ছাড়া, দুর্নীতি ছাড়া আর ডাকাতি ছাড়া কোথাও সফল না। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা বারবার বলেছিলাম যে, গরিব মানুষ যারা, যারা দিন আনে দিন খায়, যারা দিনমজুর, যারা ঘরে কাজ করে, তাদের তো এক দিন কাজ না করলে তারা বাঁচবে না, তাদেরকে তাদের পরিবার-পরিজনকে খাওয়াতে হবে। তাদেরকে যদি খাদ্যনিরাপত্তা না দাও, তাদেরকে যদি টাকাপয়সা না দাও, তাহলে লকডাউন সফল হবে না।
‘এই যে অপরিকল্পিত লকডাউন, কঠোর লকডাউন, আরও কঠোর লকডাউন –এই যে কঠোর কঠোর করল, তাতে দেখা গেল, কেউ লকডাউন মানেই না। মানবে কোত্থেকে, আমি খেতে পাই না, আমার খাবার জোগাড় করতে হবে। আমরা বলেছিলাম এসব মানুষজনকে ১৫ হাজার টাকার এককালীন প্রণোদনা দেয়া হোক, একই সঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রণোদনা দেয়া উচিত। তারপরে লকডাউন দেন।'
করোনা টিকা সংগ্রহেও সরকারের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলেন তিনি।
রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে ঢাকায় একটি কনভেনশন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আসুন গাজী সাহেবের মুক্তির আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলি, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের জন্য আমরা আন্দোলন গড়ে তুলি, যে সমস্ত নিবর্তনমূলক আইন আছে, তা বাতিলের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলি।’
‘সবচেয়ে বড় যে দাবিতে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার, তা হচ্ছে, এই মুহূর্তে এই ব্যর্থ ফ্যাসিবাদি সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। আসুন, সেই লক্ষ্যে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।’
ইসরায়েল থেকে টেলিফোন হ্যাকিং ডিভাইস এনে সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংগঠনের আহবায়ক সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আমিরুল ইসলাম কাগজীর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, বাকের হোসাইন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালীন নোমানী, কারাবন্দি নেতা রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আরফান আবরার আমিন বক্তব্য রাখেন।