সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি আবার পিছিয়েছে। শুনানির জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছে আদালত।
কেরানীগঞ্জে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২-এ রোববার মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার জানান, মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতে হাজির হতে পারেননি তিনি।
মাসুদ আহম্মেদ বলেন, ‘করোনার কারণে সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতি নাজুক, অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমরা বাধ্য হচ্ছি অনেক নিয়ম মানতে। মামলার আসামি বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এরপর কোভিড-১৯-এর কারণে তিনি আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছেন।
‘বয়সের কারণে তিনি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি হুইলচেয়ারে করে কোনোমতে বাসার মধ্যে থাকেন। লোকজনের সাহায্য ছাড়া তিনি কিছু করতে পারেন না। তাই তার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করার জন্য আদালতে বিনীত প্রার্থনা করছি।’
আবেদন গ্রহণ করে বিচারক এ এস এম রুহুল ইমরান ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানির জন্য দিন রাখেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী হান্নান ভূঁইয়া।
এর আগেও খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বলে বেশ কয়েকবার এ মামলার শুনানি পেছান তার আইনজীবীরা।
মামলায় যে অভিযোগ
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়।
ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল আলম শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত আসামির সংখ্যা ১৩। বিভিন্ন সময় ৬ আসামি মারা যান। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৭। মৃতদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে সাড়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
প্রথমে ২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
এর মধ্যে করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছেন খালেদা জিয়া। গত ১৪ এপ্রিল তার করোনায় আক্রান্তের খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।
প্রথম দিকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেন খালেদা। পরে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ২৭ এপ্রিল তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ৯ মে তার করোনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ আসে।
তার পরও শারীরিক সমস্যা থাকায় প্রায় দেড় মাস হাসপাতালে থাকতে হয় খালেদা জিয়াকে। কিছুদিন সেখানকার করোনারি কেয়ার ইউনিটেও (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল তাকে। ৫৪ দিন চিকিৎসা শেষে ১৯ জুন গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে দল থেকে জানানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।