২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সব কিছুই জানতেন, আর তিনি সমর্থন জানিয়ে গেছেন।
নৃশংস এই হামলার ১৭ বছর পূর্তির দিন শনিবার ক্ষমতাসীন দল নানা আয়োজনে এই হামলায় নিহতদের স্মরণ করছে। একই দিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি সেই হামলার প্রধান লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
সেই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা হামলার বর্ণনার পাশাপাশি এর আগের ও পরের বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরেন। বলেন, তাকে হত্যার জন্য যে দীর্ঘ প্রচেষ্টা ছিল, গ্রেনেড হামলা তারই ধারবাহিকতা।
সেই হামলায় শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও দলের ২২ নেতা-কর্মী সেদিন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৫০০ মানুষ। পেছনে ফিরে তাকালে কী অনুভূতি হয়- এমন প্রশ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ সাল থেকে শুরু করে এসব ঘটনা ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গ্রেনেড ও বোমা হামলার কথা তুলে ধরেন।
সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলায় তিন-চারজন নিহতের পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর আহত হওয়ার কথাও বলেন।
তিনি বলেন, ‘কূটনীতিকের ওপর হামলা করা এবং আহত করা এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিদেশে খুব খারাপভাবে নষ্ট করে। আমরা একটি সন্ত্রাসবিরোধী র্যালি করার সিদ্ধান্ত নিই।’
সমাবেশটি আওয়ামী লীগ মুক্তাঙ্গনে করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছিল না। পরে সিদ্ধান্ত হয়, সেটি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে।
আগের রাতে ১১টার দিকে হঠাৎ অনুমতি দেয়া হলেও সমাবেশটি দলীয় কার্যালয়েই করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মাইক-টাইক লাগানো হয়ে গেছে, পোস্টার ছাপানো, প্রচার সবকিছু হয়ে গেছে। তা আমরা ওখানেই আমাদের সমাবেশটা করি।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখার শেষ পর্যায়ে হয় গ্রেনেড হামলা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মাইকটাও হাত থেকে রাখতে পারিনি। এরই মধ্যে এই বোমার আওয়াজ।’
নেতা-কর্মীরা কীভাবে নিজেরা স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষা করেন, সেটিও উঠে আসে তার বয়ানে।
গ্রেনেড হামলা থেকে নেত্রীকে বাঁচাতে মানবঢাল তৈরি করেন নেতা-কর্মীরা। ফাইল ছবি
তিনি বলেন, ‘বোমার আওয়াজটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নেতা-কর্মীরা আমাকে ধরে বসিয়ে দেয়। বিশেষ করে হানিফ (সাবেক মেয়র মো. হানিফ) ভাইয়ের কথা আমি বলব। তা ছাড়া মামুন, আমার সঙ্গে কাজ করত। অজিত, মায়া (মোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী মায়া) ওরা সবাই ওখানে ছিল। ট্রাকের ভেতরেই কিন্তু তখন আমরা। আমাকে একদম ঘিরে রাখে।
‘একটার পর একটা গ্রেনেড কিন্তু… প্রথমে তিনটা তারপর আবার তিনটা এভাবে প্রায় এক ডজনের কাছাকাছি গ্রেনেড তারা ছুড়ে মারে। সত্যি কথা বলতে কি, তখন আসলে নিজের কথা ভাবার চেয়ে আমার চিন্তা ছিল, এতগুলো মানুষ আমার ট্রাকের ওপরে আর আশপাশে আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই। সে সময় কার যে কী অবস্থা কিছুই বুঝতে পারছি না।
‘যা-ই হোক, একটা পর্যায়ে যখন গ্রেনেড হামলা তখন কিছুটা থামল। আমাকে যে গ্রেনেড মেরেছিল, তার স্প্লিন্টারগুলো বিশেষ করে হানিফ ভাই, তিনি তখন ঢাকা সিটি মেয়র, আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল, সমস্ত স্প্লিন্টারগুলো তার মাথায় পড়ে, গায়ে পড়ে। তার সেই রক্ত আমার শরীরে, মানে আমার কাপড়ে চলে আসে। সবাই মনে করে যে আমি মনে হয় আহত। আমি বলি না আমার কিছু হয়নি। এটা আমার কাছে একটা বিস্ময় যে আমার গায়ে একটাও স্প্লিন্টার লাগেনি। কিন্তু আমার চশমাটা হারিয়ে যায়।
‘যে মুহূর্তে গাড়িতে উঠতে যাব, দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ছিল, আমার সঙ্গে একজন সেনা কর্মকর্তা মাহবুব, ও ছিল আমার ড্রাইভার কাম সিকিউরিটি। ও গেটটা খুলে দাঁড়ায়। আর ঠিক সে সময় গুলি একটা চলে আসে। সেখানে মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।’
শেখ হাসিনা জানান, তিনি যখন গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ছেড়ে বাড়ির পথে ছিলেন, সে সময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে এবং কাঁদানে গ্যাস মারে।
যে রকম হামলা হয়েছে, সেখান থেকে প্রাণ রক্ষা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব ছিল না বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ হয়তো আমার জীবনটা বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, আগেও তো আমি বেশ কয়েকবারই এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছি। হয়তো আমার হাত দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কোনো কল্যাণ তিনি করবেন। এ জন্যই বুঝি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এ ছাড়া আর কী?’
হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মহিলা আওয়ামী লীগের তখনকার সভাপতি আইভি রহমান। ফাইল ছবি
এই হামলা পরিকল্পিত ছিল- এমন মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও হত্যার প্রচেষ্টা তো বহুদিন ধরেই ছিল।
আওয়ামী লীগ প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়। কাজেই সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা নিতে চেয়েছে। এ জন্যই…।
সে সময়ের সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নানা উক্তি আর জোট সরকারের আমলে তদন্তের নামে যা যা হয়েছে, তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, এমন প্রশ্নও ছিল শেখ হাসিনার কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার একেকটা বক্তৃতার মধ্য দিয়ে কিন্তু একেকটা ম্যাসেজ যায়।’
বিএনপি নেত্রীর সে সময় একটি বক্তব্য ছিল যে, আওয়ামী লীগ এক শ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আরেকবার তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনো দিন বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না শেখ হাসিনা।
এসব বক্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে তার বক্তব্য, এর থেকেই তো বোঝা যায়, যে তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল।’
জোট সরকারের সরকারের সবাই এই হামলায় জড়িত ছিল- এমন অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা তো খুব স্পষ্ট। তার (খালেদা জিয়া) কেবিনেটের মন্ত্রী সালাম পিন্টু, সে এর সঙ্গে জড়িত। তখন ডিজিএফআই-এনএসআই কর্মকর্তারা, পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের নিয়েই কিন্তু এ চক্রান্তটা করে।’
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানই এই হামলার হোতা বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সে (তারেক রহমান) তো দীর্ঘদিন এই ষড়যন্ত্র তৈরি করা এবং এটাকে কার্যকর করাতে সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা…। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই তার পেছনে ছিল এবং সমর্থন দিয়েছে।’
একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে গ্রেনেড। মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ আর রক্তে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সেই সড়কটি। ফাইল ছবি
শেখ হাসিনা জানান, ঘটনার আগে তারেক রহমান তার শশুরবাড়িতে কয়েক মাস অবস্থান করেন। কিন্তু আগস্টের আগে সে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে সন্দেহ ছিল, এখানে বসে সে কিছু একটা ঘোট পাকাচ্ছে।…হাওয়া ভবন মানে যত দুর্নীতির আখড়া আর যত এ রকম চক্রান্ত সব, সেখানে বসে বসে চক্রান্ত করা, এটাই ছিল তার কাজ।’
হামলার পর যা ঘটেছিল, তাতেও শেখ হাসিনার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে, সেই হামলায় সরকারের সম্পৃক্ততা ছিল।
তিনি বলেন, ‘একটি গ্রেনেড সেটা বিস্ফোরিত হয়নি, একজন সেনা অফিসার সেটা নিয়ে যায়। তার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল যে এটা রেখে দিতে হবে। কারণ, এটা কেসে কাজে লাগবে।
‘কিন্তু আমি শুনেছি যে, এটা শোনার পরই খালেদা জিয়া নিজে ধমক দিয়েছে যে এটা করা যাবে না। এটা যেন ধ্বংস করে দেয়া হয়।
‘সিটি করপোরেশন থেকে গাড়ি নিয়ে এসে ওই জায়গাটা ধুয়েমুছে সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে ফেলা হয়, সব আলামত সরিয়ে ফেলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে সেখানে পুলিশ যায়, সব আলামত সংগ্রহ করে। কিন্তু তাদের সে রকম কোনো প্রচেষ্টা ছিল না বরং সব আলামত ধ্বংস করে ফেলা এবং মুছে ফেলার চেষ্টা…’
তিনি জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সে সময়ের যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আলামতগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। বলেন, ‘যেখানে যেখানে গ্রেনেড পড়ে ছিল, ওরা তখন গিয়ে সেগুলো অন্তত চিহ্নিত করে।’
তদন্ত কমিশনের নামে তখন একটা ‘তামাশা’ করা হয় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বলল, পাশের দেশ থেকে এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দলের এতজন এমপি আহত। আইভি রহমান তিনি নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া আরও অনেক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।
‘আমরা যারা ছিলাম, কথা বলতে চেয়েছি, কথা বলতে দেয়নি পার্লামেন্টে। এটা নিয়ে আলোচনাই করতে দেবে না। খালেদা জিয়া তো বলেই বসল, ওনাকে আবার কে মারতে যাবে।
‘তার ও তার নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, উনি তো নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। আমার হাতে তো ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল না। আমি তো ব্যাগ ছাড়াই মঞ্চে উঠেছি। গ্রেনেডটা আমি নিলাম কীভাবে? আর গ্রেনেড মারতে এত পারদর্শী কীভাবে হলাম? আর এটা হলো আর্জেস গ্রেনেড, যেটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
‘এটা পাকিস্তান থেকেই আসা। এটা তো পরে বের হয়েছে। কাজেই সবকিছুতে তাদের সম্পৃক্ততা, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই।’
যে অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, সেটি সাধারণ মানুষের জন্য, একটা দলের ওপর ব্যবহার করার কথা জানিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
ছয় বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য সফরে গেলে দেখা হয় তারেক রহমানের সঙ্গে। ফাইল ছবি
সেদিন যদি আপনাকে হত্যা করা হতো বাংলাদেশের অবস্থা হতো আফগানিস্তানের মতো… আপনার অভিমত কী? এই প্রশ্ন রাখেন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই এটা বিশ্বাস করে। তার কারণ, খালেদা জিয়ার আমলে যেভাবে সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে বাংলা ভাই, তারা মিছিল করছে। আর পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে। আর বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীরা তাদের মদদ দিচ্ছে।
নাটোর রাজশাহীর বহু নেতা প্রকাশ্যে এদের মদদদানকারী। পরবর্তীতে আপনি দেখেন, জঙ্গিবাদ যেভাবে, কিবরিয়া সাহেবকে একটি জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে তাকে হত্যা করা হলো। সুরঞ্জিত সেনের মিটিংয়ে বোমা হামলা, সিলেটে কামরানের মিটিংয়ে আরেকবার বোমা হামলা। এভাবে তো সারা বাংলাদেশে চলছিল।’
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলার কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘বিএনপি আমলে তো একটা সন্ত্রাসী দেশ করেই ফেলেছিল এবং বহু লোক চলে যায় আফগানিস্তানে ট্রেনিং নিয়ে আসে। এই মুফতি হান্নান নিজেই তো ট্রেনিং নিয়ে আসে। তারপর তাজউদ্দিন আরেকজন যে সেও তো ট্রনিং নিয়ে আসে। এরা তো সব বিএনপির লোক, তাজউদ্দিন তো বিএনপির খাস।’
গ্রেনেড হামলার পর ওই রাতেই চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তুলে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বলেন, ‘বিশেষ ব্যবস্থায় তারা চলে যায়। সেখানে কিন্তু ডালিম আর রশিদও ছিল। জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে যে জিয়াউর রহমান জড়িত এবং তার স্ত্রী যে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে, ছেলেকেও একই পথে নামিয়েছে, এটা তো স্পষ্ট।’
শুধু ২১ আগস্ট নয়, আপনাকে হত্যার জন্য ২০ থেকে ২২ বার হামলা করা হয়েছে। এই যে এতবার আপনার ওপর হামলা, এত আক্রোশ কেন আপনার ওপর? এরা কারা?
এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তাকে নানাভাবে বাধা দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
বলেন, ‘আমি যখন খুলনা থেকে রাজশাহী রওনা হলাম, এত মানুষ মানুষের ঢল সব জায়গায়। এর কারণে ১৫ আগস্টের পর মানুষ কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু আমি আসার পর মনে হলো মানুষের একটা যেন জোয়ার চলে আসলো।
‘পথে পথে মিটিং করতে করতে আমাদের এত সময় লাগল যে রাত ১১টার দিকে আমি ঈশ্বরদীতে গিয়ে মিটিং করি। নাটোরে ঢুকব, সেখানে আমার মঞ্চ ভেঙে দিল, আগুন দিয়ে পোড়াল, আমাদের নেতা-কর্মীদের এখানে ওখানে মেরে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে দিল।’
১৫ আগস্টের পর দেশে আসতে না দেয়া, জিয়াউর রহমান রেহানার পাসপোর্টটাও করতে না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘তারপর আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে, আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে আসবই। তারপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, এই শক্তিটাই তো জিয়াউর রহমানের আমলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রাজত্ব হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারাই দেশ চালায়। লাখো শহীদ যে রক্ত দিল, যে আদর্শ নিয়ে সেটা তো সম্পূর্ণ অস্বীকার করল। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ইতিহাসই তো বিকৃত করা হয়েছিল।’
দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ফিরিয়ে দিতে, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করে চেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশ যেন কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। স্বাধীনতাটা যেন অর্থবহ না হয়। এটাই তো আসল উদ্দেশ্য ছিল।’
গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছেন তিনি।
জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকলে আরও ৪০ বছর আগেই সেটা করা যেত বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
বলেন, ‘আমি এসে সে আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা তো সেটা চায়নি।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শরিকদের ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’- এই স্লোগানের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আজকে আফগানিস্তানের অবস্থাটা তারা দেখুক যে সেখানে কী অবস্থা। সেটিই সে বাংলাদেশে করতে চেয়েছিল।’
তরুণসমাজকে ইতিহাস আর শিকড়ের সন্ধানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আদর্শ নিয়েই চলতে হবে যাতে লাখো শহীদের রক্ত বৃথা না যায়।’
মৃত্যু একদিন হবেই- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তিনি যেদিন জীবন তুলে নেবেন, কাজেই আমার এটা নিয়ে চিন্তা নেই। আমি একটাই চিন্তা করি, সকালে উঠে ভাবি একটা দিন পেলাম অন্তত দেশের জন্য একটু কাজ করতে পারলাম।’