সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বাংলাদেশেও কাবুল বিমানবন্দরের মতো দৃশ্য দেখা যাবে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ফেসবুকে যে কথা লিখেছেন, তাতে সমর্থন করছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
আসিফ নজরুল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিভাগীয় কক্ষে তালা ও তাকে পেটনোর হুমকি প্রতিবাদে শুক্রবার এক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন তারা।
রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নাগরিক সমাবেশের’ ব্যানারে জড়ো হন তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘টাকা চুরি না করেও খালেদা জিয়াকে ১০ বছর জেল দিয়েছেন। কিন্তু আপনার আমলে যা হচ্ছে তার জন্য আপনার কী হয় জানি না।
‘আপনি কথা দিয়েছিলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যারা করেছিল, সে ছাত্রদের নামে কোনো মামলা হবে না। অথচ তিন বছর ধরে সে মামলা ঝুলছে৷ আর নরেন্দ্র মোদীর আগমনের প্রতিবাদ করায় ৫৪ জন ছাত্রের এখনও জামিন হয়নি৷ শুধু জামিন না, সম্পূর্ণ মামলা প্রত্যাহার করা উচিত। তবেই আসিফ নজরুল যে ভয় করেছে, সে কাবুলের দৃশ্য দেখতে হবে না। নতুবা কাবুলে দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হওয়া আশ্চর্যের কিছু না।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার স্ট্যাটাসে কারও নাম উল্লেখ না করলেও তারা বুঝে নিয়েছে তাদের উদ্দেশেই কথাটি বলা হয়েছে। অর্থাৎ চোরের মনে পুলিশ, পুলিশ। মানুষ বিজয় দেখতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা সে বিজয় হতে দেন না। সমস্ত বিজয় নিজে গিলে খায়। যেটা আসিফ নজরুল লিখেছে তা প্রত্যেকটা মানুষের বুকে ব্যানার হয়ে ঝুলছে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আফগানিস্তানের দৃশ্যে যেন নিজেদের ভবিষ্যত দেখেছে। তা না হলে কেনো তারা আসিফ নজরুলের উপর উঠেপড়ে লেগেছে?
‘দুই লাইনের এই স্ট্যাটাসের কারণে সরকারের পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠেছে। বর্তমান সরকারেরও এই পরিণতি হবে। তখন তাদের প্লেনের চাকা ধরে দেশ থেকে পালাতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনি ভালো করেই জানেন জনগণের আন্দোলন শুরু হলে আপনার ওই মসনদ থাকবে না। আসিফ নজরুল তার স্ট্যাটাসে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
‘আমরা তালেবানের আদর্শে বিশ্বাসী নই, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কিন্তু আপনি যদি গণতন্ত্র কেড়ে নেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না দেন তাহলে জনগণের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনার সরকারের পরিবর্তন হবে, ইনশাআল্লাহ।’
‘আসিফ নজরুলের কাছে ক্ষমা চান’
আসিফ নজরুল স্ট্যাটাস দেয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনে।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন আসিফ নজরুলের মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানায়, নইলে তাকে পেটানোর হুমকি দেয়া হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনে আইন বিভাগের চেয়ারম্যানের ১২৩ নম্বর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
তালা লাগানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কক্ষের দরজায় বিভিন্ন লেখা সম্বলিত ফেস্টুনও সাটিয়ে দেয়। এসবে লেখা ছিল, ‘জঙ্গিবাদের মদদদাতা এবং দেশদ্রোহী আসিফ নজরুলের বিচার চাই।’
এই প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষকদের একজন হলেন ড. আসিফ নজরুল। ছাত্রলীগ এই শিক্ষককে যে অপমান করেছে তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নৈতিক দায়িত্ব আছে। পাবলিকলি আসিফ নজরুলের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করুন। আপনার ছাত্রলীগ এখান থেকে আদব কায়দা শিখবে। আদব কায়দা না শিখলে জাতির উন্নতি হয় না৷ আপনি যদি এটা না করেন তাহলে যা ঘটছে তার জন্য আপনিও একদিন অপরাধী হবেন।’
মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগ তালা দিয়েছে। প্রক্টর তালা খুলে দিয়েছে। আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে লাগানো পোস্টার নামিয়ে ফেলেছে। আপনি কি পরিচ্ছন্নতা কর্মী? আপনার কাজ কারা কারা এটি করেছে তাদের নামে থানায় ডাইরি করা। আপনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করতে পারলে এটিও আপনাকে করতে হবে।’
ডাকসুর সাবেক সহ সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘সংবিধান যেখানে নাগরিকদের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে, সেখানে দুই লাইনের স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে ছাত্রলীগের গুন্ডারা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা মেরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন থাকতে একজন চেয়ারম্যানের কক্ষে কীভাবে ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তরা তালা লাগায়?
‘আপনারা যদি ছাত্রলীগের এই দুর্বৃত্তকে প্রশ্রয় দেন, গণতন্ত্রকামী ছাত্র-শিক্ষক-জনতাকে হয়রানি করেন তাহলে এর পরিণতি ভালো হবে না।’