বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেটে বিএনপি নেতার পদত্যাগের পেছনে অন্তর্কোন্দল

  •    
  • ১৯ আগস্ট, ২০২১ ১৮:২৭

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান জামান পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটিতে তার পছন্দের লোকজন ঠাঁই না পাওয়ায়। জেলায় বিএনপিতে নানান বলয়ের মধ্যে কোন্দল লেগে আছে।

সিলেটে বিএনপি আর বিবাদ যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে দলটিতে গৃহদাহ। নেতাদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল।দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটি যখন রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা, বেশিরভাগ নেতারাই নিষ্ক্রিয়, তখনও থেমে নেই গৃহবিবাদ। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মারপ্যাচে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করে বসেছেন সিলেটের কেন্দ্রীয় এক নেতা।বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেক বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান। সংবাদ সম্মেলনের আগেই দলীয় মহাসচিব বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগপত্র আর সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতাদের ক্ষোভ, হতাশা আর নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন জামান।ছাত্রদলের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন শামসুজ্জামান জামান। ছাত্রনেতা হিসেবে অচিরেই তার পরিচিতি গড়ে ওঠে। পরে তিনি জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন।জামান বিভিন্ন সময়ে সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সমপাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সিলেটের বিএনপি রাজনীতিতে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন এই নেতা। যা ‘জামান গ্রুপ’ নামে পরিচিত। জামানের পদত্যাগে তার অনুসারী নেতাদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই পদত্যাগের চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে।তবে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, জামানের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। তার পদত্যাগে সিলেট বিএনপিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, ‘পদত্যাগের আগে জামান কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। এভাবে পদত্যাগ করা তার উচিত হয়নি বলে আমি মনে করি।’সিলেট বিএনপিতে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এক সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রায়ত এম. সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর মধ্যে বিরোধ ছিলে তুঙ্গে। তাদের একজনের প্রয়াণ ও আরেকজনের অন্তর্ধানেও থামেনি সে বিরোধ। তাদের অনুপস্থিতিতে বরং এখন বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় না থাকলেও বিভিন্ন নেতার অনুসারীরা মিলে গড়ে তুলেছেন অনেকগুলো গ্রুপ-উপ গ্রুপ।তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের অনুসারী ও তার বিরোধী – এই দুই বলয়ের মধ্যেই এখন বিরোধ সবচেয়ে তুঙ্গে। সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও মুক্তাদির বিরোধী বলয়ের হিসেবে পরিচিত।সম্প্রতি বিএনপির কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি নিয়ে বিএনপির বিরোধ আবার প্রকাশ্য রূপ নেয়। গত বছর ঘোষিত হয় সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি। এই কমিটিগুলোতে নিজেদের পছন্দের লোক ঠাঁই না পাওয়ায় পদত্যাগের ঘো্ষণা দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হকসহ সিলেটের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। পরে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে তারা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।এবার বিরোধ দেখা দেয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি নিয়ে। গত মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল এ দুই কমিটির অনুমোদন দেন।কমিটিতে জেলার শাখায় আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুল আহাদ খান জামাল ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতা দেওয়ান জাকির হোসেন খান। এদিকে মহানগরের আহবায়ক হিসেবে আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আজিজুল হোসেন আজিজ।এই কমিটি নিয়ে আবারও বিরোধ বাধে সিলেট বিএনপিতে। সেই বিরোধের প্রতিক্রিয়ায় পদত্যাগ করে বসেন শামসুজ্জামান জামান। নিজের পদত্যাগপত্রে সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও দলের বর্তমান কর্মকাণ্ডের।

বুধবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর লিখিত এক চিঠিতে এ পদত্যাগ করেন তিনি। পরে সংবাদ সম্মেলন করেও এ তথ্য জানান জামান।সিলেটের ছাত্ররাজনীতির এক সময়ের দাপুটে এই নেতা নিজের পদত্যাগপত্রে লেখেন: ‘১৯৮৫ সাল থেকে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে বিএনপিতে যুক্ত হই। বিএনপির দুর্দিনে এই দলকে প্রতিষ্ঠা করতে জীবনের সোনালি সময় সাধ্যমতো সময় ও অর্থ ব্যয় করেছি। সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝে দলকে প্রতিষ্টা করতে কাজ করেছি। আমি কখনই হালুয়া-রুটির ভাগিদার হইনি, কিংবা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করিনি।’দলের মহাসচিবকে দেয়া চিঠিতে তিনি আরো লেখেন: ‘অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষিত হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সেচ্ছাসেবক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আমার জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষিত হলো আমার মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে। সর্বোপরি যেসব সহযোদ্ধা আন্দোলন করতে যেয়ে জীবন বাজি রেখেছিল, গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, এমনকি সমাজ, সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, তাদেরকে চরমভাবে উপেক্ষা করে উপহাসের পাত্রে পরিণত হলো।’পদত্যাগপত্রে জামান দলের মহাসচবিকে উদ্দেশ্ করে লেখেন: ‘আজকে অত্যন্ত ব্যথিত চিত্তে জানতে ইচ্ছে করে, আপনার দলে নেতৃত্ব পেতে হলে যোগ্যতার মাপকাঠিটা কী? যারা দেশ ও দলকে ভালবাসে, জীবন বাজি রাখে, দুর্দিনে যারা বিশ্বস্ত থাকে, বন্ধুকের বেয়োনেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়, তাদের পাওয়া উচিত, নাকি লবিং-তদবির অথবা বিশেষ ব্যবস্থায় সবকিছু হাসিল করে তাদের পাওয়া উচিত?‘যে দলটাকে ভালোবেসে তিল তিল করে বিনির্মাণ করেছিলাম, আজকে সেই দলে আমরাই অনাহুত। আপনারা প্রায়শই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, রাষ্ট্রের কাছে ন্যায় ইনসাফের দাবি তোলেন, কিন্তু নিজের অন্তরাত্মাকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখবেন কি, আপনারা আপনাদের নিজেদের কর্মীদের ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন কিনা?’তিনি আরও লেখেন, ‘বিগত ৩৬টি বছর আপনার দলকে নিরলস সেবা দিয়ে গেছি। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পূণ্যভূমির মানুষ জানে, আমরা কতটা দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়েছি। আজকে আমার সহযোদ্ধাদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ আপনারা প্রদর্শন করলেন, অবশ্যই প্রকৃতি এর প্রতিবিধান করবে বলে আমার বিঃশ্বাস।‘আমার জীবনের ৩৬টি বছর আপনাদেরকে সদকা হিসেবে দান করে দিলাম।

মহাসচিবকে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে জামান জানান, তার মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে সদ্য ঘোষিত সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।সদ্য ঘোষিত জেলা স্বেচ্ছাসসেবক দলের আহ্বায়ক হয়েছেন আব্দুল আহাদ খান জামাল। কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি শামসুজ্জামান জামানের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দল যাদের মনে করেছে ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত, তা্দের নিয়ে কমিটি করেছে। তবে বিএনপি যেহেতু অনেক বড় দল, এর যোগ্য নেতাও অনেক। তাই সবাইকে একসাথে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির সময় আমরা সবাইকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর