ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের (আসিফ নজরুল) দেয়া এক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। এই দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
আসিফ নজরুল মঙ্গলবার দুপুরে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে।’
তার স্ট্যাটাসটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে তার এই বক্তব্যকে রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, এ ধরনের স্ট্যাটাস দিয়ে জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছেন আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুলের এমন স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুর আলম তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শিক্ষকদের কখনও বাজেভাবে বলি না, কিন্তু একটা প্রশ্ন শিক্ষক নামধারী সাম্প্রদায়িক লম্পট আসিফ নজরুলকে ধমক দেয়ার মতো একজন সিনিয়র শিক্ষকও কি নাই? যদি না থাকে তাহলে আসিফ নজরুলকে রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্যের কারণে গ্রেপ্তার করা হোক।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন, ‘জঙ্গিবাদের উসকানিদাতা হেফাজতের ঘেটু আসিফ নজরুলকে দেশবিরোধী মন্তব্যের জন্য গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
আসিফ নজরুলের সেই পোস্টে মিজানুর রহমান মুন্না নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার এত বছর ক্ষমতায়। কই আপনার তো কিছুই হয়নি। আওয়ামী লীগ যদি এতই প্রভাব দেখাইতো আপনি ফেসবুকে উন্মুক্ত সমালোচনা করতে পারতেন না, বা বিরোধী কিছু লিখতে পারতেন না।
‘আপনারা হলেন সুযোগ সন্ধানী। যখন যে টপিক আসবে সেখানে কিছু মরিচ, মসলা, তৈল দিয়ে মাঝখানে আওয়ামী লীগ নামটি উল্লেখ করে দেবেন, যাতে শেয়ার লাইক কমেন্ট বেশি হয়। দেশ ছেড়ে পালানোর কেউ নেই আওয়ামী লীগে। পালিয়ে বেড়াচ্ছে আপনার রাজনীতির গুরু তারেক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী লিখেছেন, ‘তাইলে, আপনি বছরের পর বছর টিকে রইলেন ক্যামনে! আত্মসমালোচনা, গঠনমূলক পর আলোচনা বোঝেন না। বোঝেন তালগাছ, পারেন হিপোক্রেসি আর উল্টো দিক ঘুরে পাহাড় ঠেলতে! ঢাকার বিমানবন্দর যদি কাবুল হয় তবে লন্ডনে পালিয়ে থাকাদের কাছে তখন হিথ্রো হবে কি? পানিপথ?’
বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউনূস লেখেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন বলতে যদি শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনই বোঝেন, তাহলে একবার ভাবুন, মনের গহিনে কাদের জন্যে শুভাকাঙ্ক্ষা জমিয়ে রেখেছেন!
‘একবার ভাবুন, কী নির্মমতাকে ডেকে চলেছেন, যে নির্মমতার ভয়ে মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে বাঁচতে বিমানে উঠতে চাইবে, বিমানের চাকায় ঝুলে হলেও আপনার কাঙ্ক্ষিত নির্মমতা হতে বাঁচতে চাইবে, এই বাঁচতে চাওয়ার ফলস্বরূপ আকাশ হতে ছিটকে পড়বে!’
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আল মামুন লিখেন, ‘আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলঙ্ক। মৌলবাদের উসকানিদাতা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক কর্মী এই অধ্যাপককে মারারও হুমকি দিয়েছেন। শাকিরুল ইসলাম শাকিব নামের এই কর্মী লেখেন, ‘ক্যাম্পাস খোলার পর আপনি আমার সামনে পড়লে আপনাকে টিএসসিতে ঝুলিয়ে দেয়ার দৃশ্য সবাই দেখতেও পারে।’
অবশ্য অনেকে আসিফ নজরুলের বক্তব্যকে সমর্থনও করছেন। শেফায়াত হোসেন নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সঠিক বলেছেন স্যার, দুর্নীতিবাজ এবং নির্যাতনকারীরা সব পালিয়ে যাবে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। ইতিহাস পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশেও হবে ইনশাআল্লাহ।’
দেলোয়ার হোসেন নামের আরেকজন লেখেন, ‘কথা সত্য কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেই সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ আর কখনোই দেখবে না।’
সরোয়ার মফিজ নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু আশা করার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী, আধিপত্যবাদের দোসরদের হটানোর একটি মাধ্যম হলো গণঅভ্যুত্থান; আরেকটি তালেবানি ফর্মুলা।’