১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমহীর এই বক্তব্যকে ‘অরাজনৈতিক’ ও ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভুত’ বলে উল্লেখ করেন।
সোমবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি নেত্রীর ‘জন্মদিনের’ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ফখরুল।
বিএনপি দাবি করে আসছে, তাদের নেত্রীর জন্মদিন ১৫ আগস্ট। তবে তিনি ওইদিন জন্মদিন পালন শুরু করেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে।
তবে তার এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এমনটি ১৯৯১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার দপ্তর থেকে যে জীবনী দেয়া হয়, তাতেও ১৫ আগস্ট জন্মদিনের কথা উল্লেখ নেই।
জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক আলোচনায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন ছয়টি। জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টের দিন ভুয়া জন্মদিন পালন করে খালেদা জিয়া জাতির সঙ্গে প্রতি বছর তামাশা করেন। ম্যাট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ ৯ আগস্ট ১৯৪৫, বিবাহ সনদে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, পাসপোর্ট সনদে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫। আবার তিনিই দাবি করেন ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ তাঁর জন্মদিন।’
মির্জা ফখরুল এই বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন সম্পর্কে একেবারে অরাজনৈতিক, শিষ্টাচারবিবর্জিত কথা বলেছেন। আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনপি অবশ্য এখন ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করে না। ২০১৫ সাল থেকেই কেক কাটার আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। প্রথম কয়েক বছর এই দিনে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদের আয়োজন করা হলেও দুই বছর ধরে সেটি করা হচ্ছে ১৬ আগস্ট।
‘খালেদাকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে’
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড স্থগিত করে দেড় বছর আগে সাময়িক মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসেন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরা বিএনপি নেত্রী এই দেড় বছরে রাজনীতিতে একবারের জন্যও সক্রিয় হনননি। তিনি জাতীয় দিবসগুলোতে, এমনকি ঈদ-পূজাতেও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দেননি।
ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বেদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি না দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, জনগণের নেত্রীকে জনগণের সামনে আসতে না দেয়া এবং তিনি যেন রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারেন।
‘রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তাকে (খালেদা জিয়া) অন্তরীণ রাখা হয়েছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। তিনি জনগণের সামনে আসবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করবেন।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার দিন কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পরে হাইকোর্ট দণ্ড দ্বিগুণ করে। পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়।
বিএনপি তাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে আদালতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন নিয়ে যায় খালেদা জিয়ার পরিবার। আর সে আবেদনে সাড়া দিয়ে নির্বাহী আদেশে দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এরপর আরও দুই দফা বাড়ানো হয় সাময়িক মুক্তির মেয়াদ।
দুটি শর্তে এই মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে সরকার ও বিএনপি নেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রথমত. তিনি দেশেই চিকিৎসা নেবেন, দ্বিতীয়ত. তিনি দেশের বাইরে যাবেন না।
তবে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারবেন না-এমন কোনো শর্তের কথা কেউ আজ পর্যন্ত বলেনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার হাত নেই বলে দাবি
১৯৭৫ সালের ১৫ আগ্সট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পরে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। খোন্দকার মোশতাক সেদিন ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়েই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়েই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল।
‘সেদিনের অনেকেই সরকারে মর্যাদার অবস্থান নিয়েছেন। অথচ ইতিহাসকে বিকৃত করতে, জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম।
উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ।