জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন করে সমালোচনার মুখে সব আয়োজন বন্ধ রাখলেও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার বেলা আড়াইটার দিকে ফখরুল যান খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়। তবে তিনি ভেতরে ঢুকেননি। একটি ফুলের তোড়া নিরাপত্তা সদস্যদের কাছে দিয়ে চলে আসে।
একইভাবে বিকেল চারটার দিকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক, রাত পৌনে নয়টার দিকে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বেগম, রাত সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সেলিনা সুলতানা নিশীতা ফুলের তোড়া দিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সুলতানা আহমেদ এবং সেলিনা সুলতানা নিশীতা তাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খালেদা জিয়ার জন্মদিন বিতর্ক
বিএনপি নেত্রীর বেশ কয়েকটি জন্মদিনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি যখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে যে তথ্য পাঠানো হয়েছিল, তাতে ১৫ আগস্ট জন্মদিনের কথা উল্লেখ ছিল না।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতে শুরু করলে খালেদা জিয়াও সেদিন তার জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন। তবে ২০১৫ সাল থেকে আর কেক টাকা হয়নি
আওয়ামী লীগ সে সময় থেকেই এর তীব্র সমালোচনা করে আসছে। তাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনে আনন্দ করতেই বিএনপি নেত্রী বানোয়াট জন্মদিন পালন করেন।
বিএনপি এই সমালোচনা গায়ে না মাখলেও ২০১৫ সাল থেকে ১৫ আগস্টে কেক কাটা থেকে বিরত থাকে। তবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হতো। তবে গত দুই বছর ধরে তাও হচ্ছে না। একদিন পিছিয়ে ১৬ আগস্ট নানা কর্মসূচি পালন করছে তারা।
পাঁচটি জন্মদিনের তথ্য
বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন নিয়ে ধোঁয়াশা দীর্ঘ দিনের। তার একাধিক জন্মদিনের খোঁজ পাওয়া যায়। সঠিক তারিখ নির্ধারণে আদালতে একটি রিট করা হয়।
এতে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে দুটি জাতীয় দৈনিকে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট লেখা হয়। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন উল্লেখ করা হয় ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট।
২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী, তার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তার পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে একটি মামলা করেন।
সম্প্রতি হাইকোর্ট বিএনপি নেত্রীর জন্মদিন বিষয়ে তথ্য পেয়েছে।
১৫ আগস্ট কিছুই নেই-বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য
জাতীয় শোক দিবসের আগের দিন বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়ার আরোগ্য, দীর্ঘায়ু ও মুক্তি কামনা এবং করোনাসহ অন্যান্য রোগে মৃত্যুবরণকারী দেশবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের আত্মার মাগফেরাত ও অসুস্থদের আশু সুস্থতা কামনায় আগামী ১৬ আগস্ট, সোমবার দেশব্যাপী দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের কথা জানানো হয়।
সেই বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় দপ্তরের চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিনা রহমান শনিবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাল (রোববার) কোনো উদযাপন নেই। ম্যাডাম তো অসুস্থ। আমরা ১৬ তারিখে ম্যাডামের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল রেখেছি।’
১৬ তারিখ কি কেক কাটা হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু না, আমরা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছি আর কি।’
বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ আগস্ট সারাদেশে জেলা ও মহানগরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করার কথা জানায়।
পরে বিকেল ৫.২০ মিনিটে আরেকটি সংশোধনী বার্তায় সংগঠনটি বলে, ১৫ তারিখের কর্মসুচিটি ১৭ আগস্ট বিকেল ৪টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় অনুষ্ঠিত হবে।