বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘খামের ভেতর বন্দি’ ময়মনসিংহ ছাত্রদল

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২১ ১৪:২০

ছাত্রদলের কমিটির পদের জন্য টাকা নেয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাময়িকভাবে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। এক মাস পরই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

ময়মনসিংহ ছাত্রদলের বিভিন্ন উপকমিটিতে পদবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদল নেতাদের টাকা নেয়ার একটি ভিডিও ফাঁসের পর বিভিন্ন কমিটিতে টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন খোদ ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরাই।

জেলার ভালুকা উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটির পদের জন্য টাকা নেয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাময়িকভাবে অব্যাহতিও দেয়া হয়।

ভিডিওটি শেয়ার করে আশিকুর রহমান আশিক নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘খামের ভেতর বন্দি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখা। টাকার কাছে বিক্রি রাজপথের কঠিন শ্রম।’

মো. জসিম উদ্দিন নামের একজন সেখানে কমেন্ট করেন, টাকার কাছে বিক্রি রাজনীতি। রনি খান নামের আরেকজন লেখেন, বুক পকেট আর ব্যাংক চেকে ময়মনসিংহ দক্ষিণ ছাত্রদল।

টাকা নেয়ার ভিডিও ফাঁসের পর সমালোচনা হলেও এক মাস পরই বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ রায়হানের বিরুদ্ধে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এরপর কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

শুধু তিনটি ইউনিটেই নয় অভিযোগ উঠেছে, দক্ষিণ জেলা শাখার ১৮টি ইউনিট কমিটির বেশির ভাগ পদেই অযোগ্য, বিবাহিত, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি, চাকরিজীবী ও অন্য দলের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে।

এসব ইউনিটের কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তর শাখার স্বাক্ষরেই অনুমোদন দেয়া হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, কমিটি দেয়ার সময় জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোনো মতামত বা স্বাক্ষর নেয়া হয়নি।

শুধু পদবাণিজ্য নয়, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের এক নেতাকে প্রায় তিন বছর পর জানানো হয়েছে, ওই পদ আরেকজনের। এখানেও উঠেছে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ।

২০১৮ সালের ১২ জুলাই তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের রাজীব-আকরাম পরিষদ মাহবুর রহমান রানাকে সভাপতি ও আবু দাউদ রায়হানকে সাধারণ সম্পাদক করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ৮৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটি তাদের মেয়াদ পূর্ণ করে অতিরিক্ত আরও এক বছর পার করেছে।

ওই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়েছিলেন রুকনুজ্জামান রুকন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করার পর চলতি বছরের ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর থেকে নামের বিভ্রান্তি নিরসন শিরোনামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, ‘রুকনুজ্জামান রুকন নাম নির্দেশক ব্যক্তি পরিচয়ে স্থানীয় পর্যায়ে খানিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যিনি এই পদ ব্যবহার করবেন তিনি হলেন মুক্তাগাছা উপজেলার বড়হিংসা বাজার এলাকার ২২২ আজাদ ম্যানসন বাড়ির শফিকুল আজাদের ছেলে রুকনুজ্জামান রুকন।’

অথচ গত ১২ জুলাই রুকনের বাবার মৃত্যুতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহদপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়।

রুকন ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা হিসেবেও পরিচিতি। অথচ হঠাৎ করে তাকে বলা হয়েছে, তিনি ওই পদ পাননি।

এত দিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহারকারী রুকনুজ্জামান রুকন বলেন, ‘এ পদে স্থানীয় বিএনপির সব নেতা-কর্মী আমাকেই চিনে। রাজপথে আন্দোলন করতে যেয়ে জীবনের সোনালি সময় নষ্ট করেছি। বহু হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছি।

‘এক মাস হলো আমার বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা। আর এখন স্থানীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আঁতাত করে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এ জন্য আগে থেকেই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। এখানে নিঃসন্দেহে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে, যা হয়তো কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন না।’

পদ পাওয়া নতুন রুকনুজ্জামান রুকন বলেন, ‌‘আমি দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সকল প্রোগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছি। এ ছাড়া এই পদটি আগে থেকেই আমার ছিল। এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

‘রুকন সরকার’ নামে অধিক পরিচিত, কিন্তু কমিটিতে রুকনুজ্জামান রুকন লেখার বিষয়টি তিনি বলেন, ‘আমার ডাক নাম রুকন সরকার। ফলে এই নামেই বেশি পরিচিত হব, সেটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ইতোমধ্যে লিখিতভাবে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলও পরিষ্কার করেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রদলের একজন সাবেক সভাপতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি করার ক্ষেত্রে শতভাগ আর্থিক লেনদেন হয়েছে। রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যারা ছিল না তাদের নেয়া হয়েছে। দুঃসময়ের নেতাকর্মী বঞ্চিত হয়েছে। এতে অনেকের ভেতরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো কমিটিতে স্বার্থত্যাগী নেতা-কর্মীদের পদে আনা হলেই আবারও চাঙ্গা হবে সংগঠন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এসেছে। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, যা রটে তা কিছু হলেও ঘটে। এ ছাড়া ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, পদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়া হচ্ছে।

‘এরপরও কেন্দ্রীয় কমিটি অভিযুক্তের পদ সাময়িক স্থগিত করে ফিরিয়ে দেয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।’

একাধিক ছাত্রদল নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের কাছে কমিটি গঠনের এসব অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। আর্থিক লেনদেন আছে কি না তা গোপনে তদন্ত করছেন তিনি।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে তিন বছর থাকা রুকনুজ্জামান রুকন (বায়ে) ও নতুনভাবে এই পদ পাওয়া রুকনুজ্জামান রুকন

এসব বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নিউজবাংলার পরিচয় দিয়ে এসএমএস করলেও সাড়া দেননি তিনি।

তবে সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ রায়হান বলেন, ‘পদ দাবি করা রুকনুজ্জামান রুকন আমাদের দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। নামের ভুলে তার বাবার মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল শোক জানিয়েছিল। তিনি এর আগে এই পদ কোথাও ব্যবহার করেননি। এখানে টাকার বিনিময়ে কাউকে পদ দেয়া হয়নি।’

বিভিন্ন কমিটি করার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ছাড়া এটির সুরাহা হয়েছে।

‘তখন কমিটির জন্য টাকা নেইনি। ব্যবসায়িক কাজের টাকা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষরে কমিটিগুলোর অনুমোদন হয়েছে। আমি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।’

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ দিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি আমাদের সকলের নজরে এসেছিল। পরে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাময়িক অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। তদন্ত করে আবারও অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে দুজনের নামের বিভ্রান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি এখনও জানি না। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল আরও তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিভাগের আরো খবর