সরকারের গণটিকা কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
বুধবার বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সদ্য প্রয়াত নেতা-কর্মীদের স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এর আয়োজন করে জাতীয় ওলামা পার্টি।
তিনি আরও বলেন, টিকার জন্য শত শত মানুষ লাইনে বসে সারা রাত কাটিয়েছেন। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জার কিছু হতে পারে না।
জি এম কাদের বলেন, ‘গণটিকা কর্মসূচি সফল করে সারা বিশ্ব যখন সবকিছু স্বাভাবিক করে ফেলছে, তখন আমাদের দেশে শত শত মানুষ এক ডোজ টিকার জন্য লাইনে বসে সারা রাত কাটিয়েছেন। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধরা সীমাহীন ভোগান্তিতে রাত কাটিয়েছেন শুধু এক ডোজ টিকা পাওয়ার আশায়।
‘গেল কয়েক দিন তারা বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরেও টিকা পাননি। বিশ্বে এমন দুঃখজনক ঘটনা নজিরবিহীন। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জাজনক সংবাদ আর হতে পারে না। টিকার জন্য সারা রাত শত শত নারী-পুরুষ লাইনে বসে রাত কাটানোর ঘটনা মূল্যায়ন করলেই প্রমাণ হবে গণটিকা কার্যক্রম কতটা ব্যর্থ।’
টিকা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। বলেন, টিকা নিয়ে একেক মন্ত্রী একেক ধরনের কথা বলছেন। মন্ত্রীদের কথা এখন আর মানুষ জানতে চায় না। তাদের বক্তব্যে দেশের মানুষ সরকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। বাস্তবতা হলো, সরকার যা করতে বলছে, দেশের মানুষ এখন আর তা করতে আগ্রহবোধ করছে না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলেছি, গণটিকা সফল করতে না পারলে চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে হাইফ্লো অক্সিজেনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। আমরা দেড় বছর ধরে চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করতে সরকারকে বলছি, কিন্তু সরকার কিছুই করছে না। দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করা হতো।’
এ সময় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে জীবন বাঁচাতে চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। উপজেলা এমনকি জেলা পর্যায়ে মুমূর্ষু রোগী প্রায়ই অক্সিজেন সহায়তা পাচ্ছে না। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আর হতে পারে না। সে কারণে সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ দ্রুততার সঙ্গে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘করোনার চিকিৎসা নিয়ে সরকার অনেক বড় বড় কথা বলেছে, অনেক আস্ফালন করেছে। বলেছে, আমরা নাকি করোনার চেয়েও শক্তিশালী। অথচ চিকিৎসা পেতে হাসপাতালে ছুটতে গিয়ে দেশের মানুষ পথে-ঘাটে-গাড়িতে ও অ্যাম্বুলেন্সে মারা যাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ করোনার চিকিৎসা পায়নি। গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস, কিন্তু চিকিৎসা নেই। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সরকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তামাশা করছে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সরকার।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান।