করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে সংখ্যা সরকার প্রকাশ করে, তা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, এই রোগে মারা গেছে এক লাখের বেশি।
সোমবার সকালে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
সরকারের প্রকাশ করা তথ্যে প্রকৃত সত্য উঠে আসছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা যে তথ্যগুলো দেয়, সেটা শুধুমাত্র তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করা জন্য, প্রতারণা করার জন্য তারা এই তথ্যগুলো জনগনের সামনে দেয়।’
সরকারি হিসেবে ১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছে ২০ হাজার ৯১৬ জন। আর ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জনের শরীরে।
করোনার সংক্রমণ আরও বেশি হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা। মানুষজন টেস্টই তো করতে পারছেন না। তারা উপজেলা পর্যায়ে টেস্ট দেন না। জেলা পর্যায়ে টেস্ট দেয়, সেখানে গিয়েও মানুষ টেস্ট করতে পারে না। ঢাকায় যে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো আছে সেখানেও দুই ঘণ্টা টেস্ট করা হয়, বাকি আর হয় না। এখানেই কিন্তু স্ক্রিন আউট করে দিচ্ছে।’
মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পত্রিকাতেই আছে বাড়িতে মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ৬৫ ভাগ। তাহলে চিন্তা করেন। এই ২০ হাজার ৯১৪ জনের সঙ্গে ৬৫ ভাগ যোগ করেন। তাহলে এই সংখ্যা একলাখের নিচে কখনই না।’
তিনি বলেন, ‘আজকের একটি পত্রিকায় হেডিং হচ্ছে- করোনা নিয়ে সরকারের নানা অসঙ্গতি। এই কথাটা আমরা বার বার বলে আসছি। ইফ ইউ ডোন্ট গ্যাট দেট এক্সজেট ডেটা- আপনি সমাধান করবেন কী করে?
‘সুতরাং আপনি প্রথমেই ভুল করছেন এবং সেটা জেনেশুনে ভুল করছেন। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার এতো বড় একটা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এটা কোনো দায়িত্বশীল সরকার করতে পারে না।’
ভার্চুয়াল এক আয়োজনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সিলেটে তারা বলেছে যে, চারটা হাসপাতালে সরকারি হিসাব ১৩৬ জন চিকিৎসাধীন ছিল গতকাল পর্যন্ত। প্রকৃত পক্ষে সেখানে চিকিৎসাধীন আছে ৪৩৬ জন। তিনশ রোগী নাই-গায়েব।
‘এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি বেড, গায়েবি সংখ্যা, গায়েবি রোগী উড়ে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে। হাসপাতালও উধাও হয়ে গেছে।
‘মানুষের মারা যাওয়ার সময়ে যখন সে চায় যে, সরকার তার পাশে দাঁড়াবে, তখন সে চায় তার অন্তত চিকিৎসা হবে। কিন্তু অক্সিজেনের জন্য মানুষ হাহাকার করছে, সেই অক্সিজেন নেই।’
‘আইসিইউ বেড নিয়েও মিথ্যা তথ্য’
করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা না থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভুল তথ্য দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘ভোলা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, জামালপুর- এই পাঁচ জেলায় করোনা ২০টি আইসিইউ রয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। কিন্তু আসলে এগুলোতে কোনো আইসিইউ নাই। মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।
গণপরিবহন ছাড়া শ্রমিক আনার সমালোচনা
শনিবার বাস, লঞ্চ বন্ধ রেখে পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় আসতে বলারও তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘হঠাৎ করেই এক তারিখ থেকে কলকারখানা সরকার খুলে দিল, যানবাহন খুলল না। ফলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। হেঁটে, রিকশায়, যে যেভাবে পারে কাজে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছে।
‘এর পরে তাদের বোধদয় হয়েছে যে, রাত্রিতে বলল, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে। তালগোল হেরে যায়। আমি এ জন্য বলেছিলাম যে, আমার কাছে মনে হয় যারা এসব সিদ্ধান্ত দেন তারা সব পাবনা হেমায়েতপুর থেকে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এটা তাদের সিদ্ধান্তহীনতা নয়, এটা পরিকল্পিত। তারা তো বলেই যে, বাংলাদেশে ৫ লক্ষ লোক ১০ লক্ষ লোক মরে গেলে কী হবে। এতো দেশের মানুষ। এই হচ্ছে এই সরকার। যাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই, যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে রাজনৈতিকভাবে। এখন তারা মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।’
‘তারা ছিনিমিনি খেলছে’
‘সরকার করোনা মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং জনগণের জীবন নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলছে’-এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলছি যে, এটা যেহেতু বৈশ্বিক মহামারি এবং ভয়াবহ একটি বিষয়, এটাকে মোকাবিলা করতে হবে সকলকে সঙ্গে নিয়ে।
করোনায় মারা যাওয়া একজনের মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফাইল ছবি
‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম একটা জাতীয় কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশেষজ্ঞসহ সমস্ত জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই করোনা মহামারিকে মোকাবিলা করবার জন্য।
‘দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, যে কোনো দুর্যোগ অথবা যে কোনো মহামারি পুরোটাই হয়ত নির্মূল করা যায় না, কোনোটারই সমাধান করা যায় না। কিন্তু এটা অনেক সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করা যায় যদি দেশের মানুষকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি।
‘আজকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পৃক্ত হতো, আজকে যদি সমস্ত এনজিওগুলো সম্পৃক্ত হতো, আজকে যদি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো সম্পৃক্ত হতে পারত, তাহলে দেখা যেত যে, আজকে এই পরিস্থিতি এতো মারাত্মক আকার ধারণ করতো না।’
করোনাকালে কেনাটাকায় দুর্নীতির অভিযোগ এন ফখরুল বলেন, ‘তিনশ টাকার জিনিস তারা ৩ হাজার টাকায় নেয়, পাঁচশ টাকার জিনিস তারা ৫০ হাজার টাকায় নেয়। আমরা দেখেছি যে, এখন পর্যন্ত যতগুলো তথ্য আমাদের কাছে এসছে, পত্র-পত্রিকায় বেরিয়ে এসছে যে, এই করোনাকালে দুর্নীতি করে তাদের (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের) ড্রাইভার পর্যন্ত ৪/৫ কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।'