বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকার বদ্ধ উন্মাদ: ফখরুল

  •    
  • ১ আগস্ট, ২০২১ ১৮:৩৪

‘আমি কি এমনি বলেছিলাম যে, এগুলো আসতেছে সব হেমায়েতপুর থেকে! আসলেই তো! সব হেমায়েতপুরের অবস্থা। এটা বদ্ধ উন্মাদনা ছাড়া আমি কিছু দেখতে পাই না। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে যে অযোগ্যতা, দুর্নীতিপরায়ণতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এসব আত্মহরণকারী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে। দিস ইজ টোটালি সুইসাইডাল।’

রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকদের যেভাবে ঢাকায় আসতে হয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করে সরকারকে ‘বদ্ধ উন্মাদ’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার শ্রমিকদের ঢাকায় আসার চিত্র তুলে ধরে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আপনারা আজকের পত্রিকাগুলোতে দেখেছেন কী ভয়াবহ অবস্থা! কী রকম তুঘলকি কারবার!

‘আগে বলা হলো যে করখানা খোলা হবে না, ৫ তারিখ পর্যন্তই বন্ধ থাকবে। আবার হঠাৎ করেই বলা হলো, কলকারখানা খোলা হবে। কী করে লোকগুলো আসবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার দেখা যাচ্ছে, রাত্রি বেলা বলছে যে, না, দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে।

‘আজকের পত্রিকা দেখে তো আপনার সন্ত্রস্ত হয়ে যেতে হয়। যেভাবে মানুষ আসছে একেবারে গাদাগাদি করে, ঘাড়ের ওপর, ঘাড়ের ওপরে চড়ে এবং সেভাবে এসে কীভাবে…। একবার তাদের ছুটি দিল সব চলে গেল।

‘আবার ফিরছে তারা মফস্বল থেকে। এখন তো মফস্বলেই সংক্রমণ সবচেয়ে বেড়েছে। ওইগুলো নিয়ে তারা আবার ফিরে আসছে। সো উই আন্ডারস্ট্যান্ড কী হতে যাচ্ছে ঢাকাতে! আমরা মনে করি, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সব দায়দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।’

ফখরুল বলেন, ‘হঠাৎ করে রপ্তানিমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা আরও মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে গণপরিবহন বন্ধ, অন্যদিকে কারখানায় কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশে তারা হতবিহ্বল হয়ে উঠেছে এবং চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

‘প্রায় সব বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। ঢাকার বাইরে এই শ্রমিকরা এবং ঢাকার জনগণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহ সংক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।’

শাটডাউনসহ নানা সিদ্ধান্ত হেমায়েতপুর থেকে আসে বলে এর আগের রাখা বক্তব্য স্মরণ করিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমি কি এমনি বলেছিলাম যে, এগুলো আসতেছে সব হেমায়েতপুর থেকে! আসলেই তো! সব হেমায়েতপুরের অবস্থা। এটা বদ্ধ উন্মাদনা ছাড়া আমি কিছু দেখতে পাই না। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে যে অযোগ্যতা, দুর্নীতিপরায়ণতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এসব আত্মহরণকারী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে। দিস ইজ টোটালি সুইসাইডাল।’

গত ১ জুলাই থেকে চলমান শাটডাউনের মধ্যে ঈদের ছুটির সময় ৮ দিনের জন্য শিথিল করার সময়ই ঘোষণা আসে, ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে কলকারখানাও।

ঈদের পাশাপাশি শাটডাউনের কারণে দীর্ঘ ছুটি পাওয়া যাবে বলে শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামের পথ ধরেন। ঈদের ছুটি শেষে কারখানা খুলে দিতে মালিকপক্ষের আবেদন নাকচ করে গত মঙ্গলবারও জানানো হয়, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ থাকবে।

শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই আদেশ আসে, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা ১ আগস্ট থেকে চালু থাকবে। আর লাখ লাখ শ্রমিক শনিবার ট্রাকে-ভ্যানে চেপে পণ্য হয়ে ফিরেছেন।

একদল ফিরেছেন স্বল্প গতির যানবাহনে ভেঙে ভেঙে, কেউ কেউ ফিরেছেন হেঁটে।

ফেরি পারাপারে যে চিত্র দেখা গেছে, তা করোনাকালে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক গাদাগাদি করে উঠেছেন ফেরিতে, আর এর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা করছেন বহুজন।

ক্লান্ত-শ্রান্ত শ্রমিকরা ঘর্মাক্ত হয়ে ঘরে ফেরার পর রাতে আদেশ আসে, লঞ্চ চলবে রোববার দুপুর পর্যন্ত। এরও ঘণ্টাখানেক পর জানানো হয়, চলবে বাসও।

কিন্তু ততক্ষণে আর্থিক ক্ষতি সয়ে, শারীরিক কষ্ট সয়ে শ্রমিকদের সিংহভাগ চলে এসেছেন কর্মস্থলে। যারা শিশুদের নিয়ে ফিরেছেন, তাদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়।

এই আদেশ আসার পর যা ধারণা করা হয়েছিল, রাতে তা দেখা গেছে। বরিশাল থেকে লঞ্চ ছাড়েনি, বাসেও দেখা যায়নি ভিড়।

আবার প্রথমে নির্দেশ আসে যে বাস চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আর লঞ্চ চলবে দুপুর পর্যন্ত। তবে রোববার আবার আদেশ আসে, সারা দিনই আসতে পারবে শ্রমিকবাহী বাস।

শ্রমিকদের এভাবে ঢাকায় ফেরায় করোনা সংক্রমণ বাড়বে- বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেদের দায় না নিয়ে দায় দিয়েছেন কারখানা মালিকদের। বলেছেন, মালিকরা কথা দিয়েছিলেন ঢাকার আশপাশের শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করা হবে। কিন্তু তারা দূরের শ্রমিকদের নিয়ে এসেছেন।

ফখরুল এই হঠাৎ করে কলকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে ‘পুরোপুরি আত্মঘাতী’ বলেছেন।

দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি নেতা বলেন, ‘সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিএনপি অনেকবার বলেছে যে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, প্রান্তিক মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিক, পরিবহনশ্রমিক, মাঝি, রিকশাশ্রমিক, ভ্যানশ্রমিকসহ সকল প্রকার নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যসহায়তা ও আর্থিক সহায়তা ব্যতীত লকডাউন কখনোই কার্যকর হবে না। সে জন্যই বিএনপি এসব মানুষকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেছিল। সরকার সেদিকে না গিয়ে দলীয় লোকদের আড়াই হাজার টাকা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃত দুর্গত মানুষের কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আগের দিন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরতে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রফিকুল ইসলাম, তাইফুল ইসলাম টিপু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (ড্যাব) অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও আব্দুস সালাম।

এ বিভাগের আরো খবর