প্রতিবছর আগস্ট মাসজুড়ে শোকের নানা কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। কিন্তু এবার করোনারভাইরাসের ব্যাপকতায় জনসমাগম এড়িয়ে চলতে চাইছে দলটি। এ কারণে আগস্টে সব কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। কর্মসূচিতেও আনা হয়েছে কাটছাঁট।
আগস্ট মাস আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এ মাসের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হন।
জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার ধানমন্ডির বাসায় সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।
দিনটিতে দলটির নানা আয়োজন থাকে দেশ জুড়ে, যাতে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি নিষিদ্ধ আছে জমায়েতেও।
এই মাসে আওয়ামী লীগের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ অন্তত ৩০০ জন। এরপর থেকেই প্রতিবছর দিনটি পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
এ দুটি দিন ছাড়াও ৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মদিন। আর ৮ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন। ১৫ আগষ্ট ও ২১ আগষ্টের পাশাপাশি এ দুটি দিবসেও
বরাবরই বেশ বড় জনসমাবেশ হয়। তবে এ বছর করোনার কারনে তা নিরুৎসাহিত করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, অন্য বছরের মতো এ বছরও শোকের মাস শুরু হবে রক্তদান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। রোববার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে এ রক্তদান কর্মসূচি।
আয়োজন করবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের তো আগস্টে মাসব্যাপি শোকের কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মধ্যে ১ আগস্ট রক্তদান কর্মসূচি থাকে। কৃষক লীগের মাধ্যমে এটি শুরু হয়।
৫ ও ৮ আগস্ট শেখ কামাল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিনে তাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন আলোচনা সভা হয়।
‘১৫ আগস্ট দেশব্যাপী বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জাসহ সব ধরনের উপাসনালয়ে দোয়া মাহফিল হয়। সে সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষকে খাদ্য সহায়তা করা হয়। এর পাশাপাশি আমরা মাসব্যাপী জাতির পিতার স্মরণে আলোচনা সভা করে থাকি।’
তবে করনোর কারণে এবার ব্যাপক সভা সমাবেশ করা হবে না। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে আলোচনা সভাগুলো আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।
হানিফ বলেন, ‘এবার যেহেতু মহামারির কারণে সভা সমাবেশের সুযোগ নেই। তার পরেও ভার্চুয়ালি আমরা জাতির পিতার স্মরণে আলোচনা করব। ১৫ আগস্টের শ্রদ্ধাঞ্জলিটা এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেয়া হবে, সীমিত পরিসরে। ধানমন্ডি ৩২ ও বনানী কবরস্থানে এগুলো দেয়া হবে।’
সহযোগী সংগঠনগুলোও আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচিগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলোতে আমাদের অংশগ্রহণ থাকবে।
‘এর পাশাপাশি ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জলনের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে। ১১ আগস্ট রয়েছে আলোচনা সভা, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী রয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমরা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করব।’
এ ছাড়া অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোও নিজেদের মতো কর্মসূচি পালন করবে।