কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ মারা গেছেন।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে মুনতাকিম আশরাফ টিটু।
প্রবীণ এই রাজনীতিকের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
গত ২ জুলাই অধ্যাপক আলী আশরাফকে গলব্লাডারের পাথরসংক্রান্ত সমস্যায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শরীরে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয় তার।
পরে ৯ জুলাই তাকে ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২১ জুলাই বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লার চান্দিনা থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সপ্তম জাতীয় সংসদে ২০০০ সালে কিছুদিন ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ছিলেন।
১৯৪৭ সালের ১৭ নভেম্বর তার জন্ম। পাকিস্তান আমলে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজিনীতিতে হাতে খড়ি। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া এই নেতা ১৯৭১ সালে হাতে অস্ত্র তুলে নেন।
তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফের পেশাদারত্ব এবং অভিজ্ঞতা সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চায় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সরকারি প্রতিশ্রুতি এবং সরকারি হিসাব কমিটিসহ বিভিন্ন সংসদীয় কমিটি এবং সংসদীয় কার্যক্রমে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, তার মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার মৃত্যুতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক এবং দেশপ্রেমিক জননেতাকে হারালাম।’
অধ্যাপক আলী আশরাফের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আলী আশরাফ সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।
১৯৭০ সালের পাকিস্তান সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ‘মই’ প্রতীক নিয়ে অংশ নেন তিনি।
সেই নির্বাচনে জয় না পেলেও ‘মাছ’ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ১৯৭৩ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জয়ী হন।
তিনি ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৭ আসনে জয়ী হন।
চান্দিনার গল্লাই মুন্সি বাড়ির প্রয়াত মো. ইসমাইল হোসেন মুন্সির ছেলে আলী আশরাফ ১৯৬২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করেন।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমীন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একজন নেতা হারিয়েছি। তার মতো নেতা আর পাব কি না জানি না। তিনি মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তার মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’