সরকার করোনা নিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দাবি করেছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা শুরু করার যে ঘোষণা এসেছে, সেটিও এই ধরনের এক বানোয়াট গল্প।
মঙ্গলবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এই আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তার দাবি, সরকারের উদাসিনতা, অযোগ্যতা, ব্যর্থতার কারণে করোনায় জনগণের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়ে গেছে।
ফখরুল বলেন, ‘এত বেশি তারা প্রতারণা করে, এত মিথ্যা কথা বলে, এতো ভাঁওতাবাজি করে। দেখেন -টিকাই এখন পর্যন্ত পুরো সংগ্রহ হলো না এবং এখন পর্যন্ত তিন কোটি টিকাই আনতে পারল না ভারত থেকে। তারা এখন বলছে যে, ই্উনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেবে। এগুলো জাতিকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছু নয়।’
সরকার শুরুতে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তি ও হাতে ৭০ লাখ টিকা নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে গণটিকা শুরু করে।
তবে ৭০ লাখ টিকা পাঠানোর পর সিরাম আর টিকা দিতে পারেনি। এরপর সরকার চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনতে উদ্যোগী হয়। এরই মধ্যে চীন থেকে টিকার দুটি চালান এসেছে। আর রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসা বিশ্বজুড়ে টিকা বিতরণে গড়ে তোলা জোট কোভ্যাক্স থেকে টিকা আসছে। তারা সিরামের টিকা না পেয়ে পাঠাচ্ছে ফাইজার, মডার্নার টিকা।
ভারতও জানিয়েছে, তারা উৎপাদন বাড়াতে পারছে টিকা পাঠাবে। আর আগামী কয়েক মাসে ২১ কোটি টিকা আসবে বলে জানিয়েছে সরকার।
এই পরিস্থিতিতে সরকার এখন অনলাইনে নিবন্ধন ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর শহরের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা শুরুর ঘোষণাও এসেছে।
তবে ফখরুলের দাবি, এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘এই সরকার এই একটা জিনিস খুব ভালো পারে অবলীলায় গোয়েবসীয় পদ্ধতিতে মিথ্যা প্রচার করতে থাকে এবং সেই মিথ্যাকে সত্য প্রমাণিত করতে থাকে।‘
করোনাকে পুঁজি করে লুট
এই অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে কষ্টার্জিত অর্থ ট্যাক্স হিসেবে মানুষের দেয়, আমাদের প্রবাসীরা বিদেশে গিয়ে যে রেমিট্যান্স পাঠায়, আমাদের শ্রমিকেরা গার্মেন্টেসে কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করে সেই অর্থ তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
‘আওয়ামী লীগ আসলে প্রকৃতিগতভাবে চরিত্রগতভাবে তারা একটা লুটেরা শ্রেণির প্রতিনিধি। তারা আমরা দে্খেছি ১৯৭২-৭৫ সালে তারা ঠিক একই ভাবে লুট করেছে, এখন আবার দেখছি গত ১২ বছরে তারা সেই লুটের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে।‘
শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার
ফেসবুকে বিএনপি নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে নানা সময় তীব্র সমালোচনা করলেও সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপ নিয়ে কথা বলেন তিনি। বলা হচ্ছে, এই ফোনালাপের নারীকণ্ঠটি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুলের।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন সন্ত্রাসী দলবাজ মহিলাকে অধ্যক্ষ করা হয়েছে। আমরা দেখলাম যে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাদেরকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হলো, তারা দুনীর্তি করছে, নিয়োগ দুর্নীতি করছে..। এভাবে তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করে ফেলেছে এবং এই করোনার অজুহাতে তারা শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে।
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তো পুরোপুরি ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে। ব্যাংকিং সেক্টারকে গিলে ফেলেছে। তারা আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধবংস করছে।‘
আন্দোলনের বিকল্প নেই
ফখরুল বলেন, ‘আমাদেরকে আন্দোলনে যেতে হবে এবং এই ভয়াবহ যে দানব আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে সেই দানবকে সরিয়ে দিতে হবে।
‘আমাদের মনে রাখতে হবে এই দানব ছোট-খাটো দানব নয়, এটা একটা ভয়াবহ দানব। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত রয়েছে, সামাজ্যবাদ এবং আধিপত্যবাদের চক্রান্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের অত্যন্ত শক্তি নিয়ে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে, জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে সরাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।‘
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বক্তব্য রাখেন।