বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাকার অভাবে এমআইটিতে পড়া হয়নি জয়ের

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২১ ২০:৪০

‘এমআইটিতে যখন ভর্তি হয়েছিল, তখন আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। তাকে যে সহযোগিতা করব, আমি সেটা করতে পারিনি। এত ব্যস্ত ছিলাম যে, যার জন্য একটা সেমিস্টারের টাকা দিতে পারিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আমার ছেলে তার সেমিস্টারের টাকা দিতে পারেনি বলে এমআইটি থেকে তার নাম কাটা যায়। সে চলে আসে ঢাকায়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পায় জয়।’

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আবার জন্মদিন। সংগঠনের অনুষ্ঠানে এসে তাই প্রধানমন্ত্রী কথা বললেন তার ছেলেকে নিয়েও। যুদ্ধের সময় সন্তানের জন্ম, বেড়ে ওঠা, তার পড়ালেখা, উদ্যোগ নিয়ে করলেন স্মৃতিচারণা।

মঙ্গলবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হন গণভবন থেকে। করোনাকালে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা, সরকারের উদ্যোগ নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন।

৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আজকের এই জয়ের জন্মের কথা তুলে ধরে দুই বছর ধরে তার সঙ্গে দেখা না হওয়ার আক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তার পড়াশোনার সময় অর্থকষ্টের বিষয়টি সামনে আনেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই দিনে জয়ের জন্ম হয়। সে সময় আমরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলাম। আমাদের সে সময় বন্দি করে রাখা হয়েছিল (ধানমন্ডি) ১৮ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে। আমাদের কোনো বিছানাপত্র ছিল না। কোনো ফার্নিচারও ছিল না। স্যাঁতসেঁতে ফ্লোরে থাকতে হতো।

‘আর পাকিস্তানি আর্মি বাঙ্কার করে আছে, দিন-রাত সেখানে গুলি চালাচ্ছে। এর মধ্যেই আমাদের দিন কাটাতে হতো। এর মধ্যেই আমাকে তারা হাসপাতালে যেতে অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু আমার মাকে যেতে দেয়নি।’

জয়ের উচ্চশিক্ষার গল্প

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মায়ের সঙ্গে বিদেশে জয়। শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার সময় জয়ের পড়াশোনা শুরু হয় দিল্লিতে এয়ারফোর্স স্কুলে।

শেখ হাসিনা ১৯৮০ সালে লন্ডনে যাওয়ার পর জয় পড়াশোনা করেন সেখানে।

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফেরার পর জয় ও পুতুলকে নৈনিতালে ভর্তি করেন। স্কুল ও কলেজ পাস করে বেঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন জয়। সেখান থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে করেন বিএসসি। এরপর ঢাকায় এসে এক বছর চাকরি করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটিতে ভর্তি হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে একদিন বলছে, আমি কম্পিউটার সায়েন্স পড়েছি, আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাই। তখন তাকে আমি নিয়ে যাই আমেরিকায়, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ভর্তি করাই। সেখানে পার্টটাইম চাকরিও করত, পড়াশোনা করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে। তার কিন্তু দুটা বিএসসি ডিগ্রি।

‘এরপর সে চান্স পায় এমআইটিতে। এমআইটিতে যখন ভর্তি হয়েছিল, তখন আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। তাকে যে সহযোগিতা করব, আমি সেটা করতে পারিনি। এত ব্যস্ত ছিলাম যে, যার জন্য একটা সেমিস্টারের টাকা দিতে পারিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আমার ছেলে তার সেমিস্টারের টাকা দিতে পারেনি বলে এমআইটি থেকে তার নাম কাটা যায়। সে চলে আসে ঢাকায়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পায় জয়।’

ছেলেবেলায় মা শেখ হাসিনার সঙ্গে জয়

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরে তাকে আবার পাঠাই। আমেরিকায় সে চাকরি নেয়। ২০০৭ সালে আমি যখন আমেরিকায় যাই তখন আমার অনুরোধে। কারণ, আমার মনে একটা দুঃখ ছিল যে, আমার ছেলেটা এমআইটিতে পড়তে চেয়ে পড়তে পারল না।

‘কাজেই তাকে অনুরোধ করি যে তুমি হার্ভার্ডে একটা দরখাস্ত করো, যাতে তুমি ভর্তি হতে পারো। পরে পারমিশন যখন পায় আমি তখন কারাগারে বন্দি। আমি শুধু খবর দিয়েছিলাম, তুমি বন্ধ করো না, যেমন করে পারো পড়ো। পরে সে সেখানে যায়, পড়াশোনা করে মাস্টার্স করে পাবলিক সার্ভিসের ওপর। এভাবে নিজের চেষ্টাতেই করেছে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে জয়ের অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, এটা তারই অবদান। তারই চিন্তাভাবনা। তারই বক্তব্য। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছি এবং কোথায় কোনটা করতে হবে.. এই স্যটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ আমরা পাঠিয়েছি সবই কিন্তু তার বুদ্ধিতে।

‘আজকে এই দেশটাকে যদি ডিজিটাইজড না করা হতো, এই করোনা মোকাবিলা আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যেত। মানুষের জীবন-জীবিকা চালানো, মানুষের হাতে সাহায্য পৌঁছে দেয়া, মানুষের কাছে আমরা যে নগদ টাকা পৌঁছেছি সবই কিন্তু এই ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে করে যাচ্ছি।’

যেভাবে নাম পেলেন জয়

প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান আমলে ২৩ মার্চ জাতীয় পতাকা দিবস পালনের স্মৃতিচারণা করেন। তবে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে পাকিস্তানের পতাকা না উড়িয়ে বাঙালিরা ওড়ায় বাংলাদেশের পতাকা।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতেও সেই পতাকা তোলা হয়। বঙ্গবন্ধু তখন সেই পতাকা তোলেন।

সেদিন শেখ হাসিনা তার বাবার হাতের নখ কেটে দিচ্ছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, ‘তোর ছেলে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করবে। তার নাম রাখবি জয়।

‘একাত্তরে জয় যখন জন্মগ্রহণ করে… জয় নামটা আব্বার দেয়া, তাই জয় রেখেছিলাম।’

জয়ের সঙ্গে সজীব রাখার কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা বললেন, জয় আসার পরে আমরা অন্তত একটা কাজ পেলাম, আমরা যেন একটু সজীব হলাম। এই সজীব নামটা কিন্তু আমার মায়ের দেয়া।’

শিশু জয়কে নিয়ে হাসপাতালে থাকার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কবি সুফিয়া কামাল এসেছেন আমাকে দেখতে। সঙ্গে সিকান্দার আবু জাফরের স্ত্রী। ওনারা যেভাবে হোক এক ফাঁকে আমার কেবিনে ঢুকে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাসদস্য এসে দরজা খুলে তাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে এবং বের করে দেয়। সেটা দেখে আমার খুব মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি ওকে ধমক দেই। আমি বললাম তুমি আমার রুমে ঢুকলা কেন? তুমি নক না করে কার পারমিশন নিয়ে ঢুকলা? বলে, এই যে এসেছে। আমি বললাম, সেটা তো তোমার ব্যাপার না, তুমি তো এভাবে ঢুকতে পারো না। আমি তাকে ধমক দিয়েছিলাম, তুমি যদি ফের আসো মুক্তিযোদ্ধা ডেকে তোমার লাশ ফেলে রাখব।

‘ও সত্যিই ভয় পেল। এরপর থেকে আর আমার রুমের সামনে দাঁড়াত না। পরে লিফটের কাছে দাঁড়াত, আর কেউ আসলে জিজ্ঞেস করত কিতনা নম্বর মে জায়েঙ্গে। কেউ বললে আর ঢুকতে দেবে না।’

হাসপাতাল থেকে ফেরার পরের কাহিনি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বন্দিখানায় আবার যখন ফিরে আসি। সেদিন এক কর্নেল এলো। আমি জয়কে কোলে নিয়ে দাঁড়ানো ছিলাম জানালার কাছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করছে তোমার ছেলে হয়েছে নাম কী? আমি বললাম, জয়।

‘আমাকে বলে ইসকা মতলব কেয়া হ্যায়। আমি বললাম, জয় মানে ভিক্টোরি। যখন বলেছি জয় মানে ভিক্টোরি, তখন তার খুব মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ঘুরে চলে যাওয়ার সময় বলছে, অর এক নামরুদ পয়দা হুয়া। মানে কত জঘন্য, মাত্র সাত দিনের একটা বাচ্চা, তাকে সে গালি দিতে দিতে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা খুব সক্রিয় ছিল। যে মুহূর্তে জয় জন্ম নেয়, তখনই তারা কতগুলো বোমা ফোটায়। তাতে আবার পাওয়ার স্টেশন উড়ে যায়। হাসপাতালও অন্ধকার হয়ে যায়।

‘আমাদের বন্দিখানায় আমাদের অবস্থাটা তখন এমন ছিল, যদি সন্ধ্যার পরে কোনো বোমা না ফুটত, গুলির আওয়াজ না হতো, তাহলে মনে হতো আমরা নাই মরে গেছি। আর হলে ভাবতাম, না, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের আশপাশে আছে। ওটাই আমাদের প্রাণশক্তি ছিল।’

এ বিভাগের আরো খবর