আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ-কাণ্ডে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ হারানো ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর কীভাবে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়েছিলেন, তা নিয়ে জেলার নেতাদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।
তার জন্মস্থান কুমিল্লা। স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও গত ডিসেম্বরের কমিটিতে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয় তাকে।
আওয়ামী লীগের নারীবিষয়ক উপকমিটি থেকে হেলেনাকে বাদ দেয়ার পর কুমিল্লা আওয়ামী লীগও জানায়, গত মাসেই তার পদ বাতিল করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, তিনি কীভাবে ক্ষমতাসীন দলের কুমিল্লা শাখার ওই পদে স্থান পেয়েছিলেন।
গত বছর ১ ডিসেম্বর কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়। এই কমিটির সভাপতি মু রুহুল আমিন বলতে পারেননি কার বদৌলতে হেলেনা স্থান পেয়েছেন তার কমিটিতে।
তিনি কেবল বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে লবিং করায় তাকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য করা হয়।’
তবে লবিংটি কে করেছিলেন, সে বিষয়ে ‘কিছু জানি না’ বলে প্রসঙ্গটি শেষ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ পদটা মূলত তিনি লবিং করে পেয়েছেন। এ নিয়ে আমরা তেমন কিছু জানতাম না। আর বিষয়টা নিয়ে আমরা কমিটিতে যারা আছি, তাদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। কেননা এ পদ দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু না।
‘হেলেনা জাহাঙ্গীর একজন ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতাম। তিনি আমাদের কাছে পোড় খাওয়া কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিও নন।’
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার বলেন, ‘তদবিরে কমিটিতে এসেছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তিনি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দিয়ে নয়, লবিং দিয়ে এসেছিলেন।’
রোশন আলীও হেলেনার পক্ষে তদবির করা সেই ব্যক্তির নাম বলতে পারেননি।
শনিবার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দেয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে কুমিল্লায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ঝড় উঠেছে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, হেলেনা জাহাঙ্গীর দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিগত প্রচারে ব্যস্ত থাকতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার কর্মকাণ্ডে বিব্রত হতেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। বাবা আবদুল হক শরীফ মারা গেছেন। তিনি জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে তিনি বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে।১৯৯০ সালের ৫ অক্টোবর কুমিল্লার বুড়িচংয়ের জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বিয়ে হয় হেলেনার। তাদের সংসারে তিন সন্তান রয়েছে।সম্প্রতি ফেসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ছবি পোস্ট করে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠন। এতে সংগঠনের জেলা, উপজেলা আর বিদেশ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বরও দেয়া থাকে।
সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু রুহুল আমিন দাবি করেছেন, গত ১৮ জুন তারা হেলেনাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
কুমিল্লায় হেলেনার কী ভূমিকা- এমন প্রশ্নে রুহুল আমিন বলেন, ‘শুনেছি, তিনি দাউদকান্দিতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। তবে তা আমরা দেখি নাই।
‘আমি কেন্দ্র থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য গত মাসে চিঠি পেয়েছি। পরে ১৮ জুন তাকে অব্যাহতি দিই। তাকে চিঠিও পাঠাইছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কার্যক্রমে আমরা খুবই বিব্রত। সংগঠন করার কোনো এখতিয়ার তার নেই।’