গঠনতন্ত্রের স্বীকৃতির বাইরের কোনো সংগঠনের আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ গঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নিজ বাসভবনে রোববার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্বীকৃত সংগঠনের বাইরে কোনো মনগড়া বা হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সংগঠনকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং করার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, “দলের গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগের রয়েছে সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন উপকমিটি। স্বীকৃত সংগঠনের বাইরে যেকোনো নামের সাথে ‘লীগ’ বা ‘আওয়ামী’ শব্দ জুড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
সম্প্রতি ফেসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ছবি পোস্ট করে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠন। নামসর্বস্ব এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নাম আসে হেলেনা জাহাঙ্গীরের। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহবুব মনিরকে। তাদের নাম-সংবলিত পোস্টারে ছেয়ে যায় ফেসবুক।
পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ নিয়ে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। পরের দিনই হেলেনাকে দলের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়।
ব্রিফিংয়ে কাদের বলেন, ‘দল ক্ষমতায় থাকলে নানান সুবিধাভোগী শ্রেণি এবং বসন্তের কোকিলরা এ ধরনের চেষ্টায় লিপ্ত হয়, যুক্ত হয় নানান আগাছা-পরগাছা।
‘দলীয় সভানেত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দলের মধ্যে কারও প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে এ ধরনের কাজে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো বিতর্কিত ব্যক্তির দলে অনুপ্রবেশ ঘটলে কিংবা কারও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।’
‘পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কা ষড়যন্ত্র কি না দেখা হচ্ছে’
গত শুক্রবার পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা ষড়যন্ত্র ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘আঘাতকারী ফেরির ওজন ছিল ১২৮৪ টন। আর পদ্মা সেতুর ডিজাইন অনুযায়ী ৩০ নটিক্যাল মাইল গতিতে ৪ হাজার টন ওজনের নৌযানের ধাক্কা সামলানোর ক্যাপাসিটি রয়েছে প্রতিটি পিয়ারের।
‘ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী, কারিগরি কমিটির সদস্যগণ, পরামর্শক ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ইতিমধ্যেই ফেরির মাস্টার চালকসহ দুইজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেরির ধাক্কায় পিয়ারের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি না হলেও এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নাকি উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্রের অংশ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কাদের বলেন, ‘গর্বের এ সেতু নিয়ে আগেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এখনও যে নেই তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
‘পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালি ফসল এ সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই নানা গুজব, অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে দেশবিরোধী এবং উন্নয়নবিরোধী একটি অপশক্তি। মনুষ্যসৃষ্ট নানা বাধা ও ষড়যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
‘শনিবার পর্যন্ত পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজের অগ্রগতি শতকরা ৯৪ ভাগ। আর সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮৭ ভাগ।’