কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হয়ে এক দিন পরেই অবাঞ্ছিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দীন।
এক আহ্বায়ক কমিটিতে ১৯ বছর চলার পর বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগ পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করে। তবে এক দিন পরেই সে কমিটির আহ্বায়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন দলের নেতা-কর্মীরা।
শুক্রবার দুপুরে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে নেতা-কর্মীরা কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত আহ্বায়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে লোকমুখে আহ্বায়ক কমিটি করার কথা জানতে পারেন তিনি। সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দীনকে আহ্বায়ক করা হয়। এরপর থেকে নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন কমিটির প্রতিবাদ করেন। শুক্রবার সকালে ডাকবাংলোর সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে কমিটির আহ্বায়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘তিনি পাঁচ বছর এমপি ছিলেন, তখন আমাদের আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে নির্যাতন করেছেন, এ জন্য সবাই তার প্রতি ক্ষুব্ধ।’
কিশোরগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ বলেন, সোহবার উদ্দীন দীর্ঘদিন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু দল গোছাতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
তারপর গত সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে যান। মূলত এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ তিনি রাখেননি বলেও দাবি তার।
তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর পাকুন্দিয়াতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হয় না। কমিটি না হওয়ার কারণ সাবেক সাংসদ সোহবার উদ্দীন ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু। এই দুইজনের কারণে কমিটি আটকে আছে।
জেলা আওয়ামী লীগ বর্তমান সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেই সোহরাব উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণা করেছে। আর এ জন্যই নেতা-কর্মীরা কমিটির প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ বলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সোহবার উদ্দীনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে মেনে নেবে না।
আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর, উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি বাবুল আহাম্মেদ, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম দেওয়ান, সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিপু, নারান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক, বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেলসহ অন্যরা।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ যেহেতু একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সেই হিসেবে নতুন কোনো কমিটি হলে একটু ঝামেলা হয়েই থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদের উপস্থিতিতে এই কঠোর লকডাউনের মধ্যেও জনসমাগম করেছে। এমপি সাহেব সবাইকে একত্র করে মিছিল শুরু করে দিয়ে তিনি চলে গেছেন। এমনকি প্রশাসনের লোকজনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের কেউ বাধা দেয়নি।
‘অথচ আমি কমিটি পেয়েও নেতা-কর্মীদের কোনো প্রকার মিছিল না করতে নিষেধ করেছি। লকডাউনে মিছিল-মিটিং না করে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশ প্রদান করেছি।’
কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেয়।
১৯ বছরে আহ্বায়কেই চলছে উপজেলা কমিটি
পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০০৩ সালে। তখন অ্যাডভোকেট এ এফ এম উবাইদুল্লাহকে আহ্বায়ক করে ৭৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল জেলা আওয়ামী লীগ।
সেই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন রফিকুল ইসলাম রেণু, মোতায়েম হোসেন স্বপন, আশরাফ আলী ও মো. হবিবুল্লাহ। এর মধ্যে ২০১৯ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে এই কমিটির আহ্বায়ক পদত্যাগ করেন। দুই যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ আলী ও হাবিবুল্লাহ মারা গেছেন।