করোনার টিকা নেয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জ্বর এসেছে বলে তার সঙ্গে দেখা করে এসে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার ঈদুল আজাহার দিন ফখরুলসহ দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটান। একে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় বলছেন তারা।
রাত আটটায় বাসায় গিয়ে ঘণ্টা দেড়েক সেখানে অবস্থান করেন। এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রায় এক বছর পর আমরা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। এমনিতেই কোভিড পরবর্তীতে ম্যাডাম মোটামুটি ভালো আছেন। তবে করোনার টিকা নেয়ার পর উনার শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে।
‘ওনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আমরা সব সময় বলে আসছি বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এটা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
গত এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর ১৯ জুলাই রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে গিয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেন খালেদা জিয়া। তাকে দেয়া হয়েছে মডার্নার টিকা।
কেবল করোনার নয়, যে কোনো টিকা দিলেই মানুষের জ্বর আসতে পারে। একে সাধারণ একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ বি এম আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নেয়ার পর স্বাভাবিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে জ্বর এবং টিকা নেয়ার স্থানে একটু ব্যথা অনুভব করে এটা স্বাভাবিক।’
টিকা নেয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে জ্বর আসতে পারে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তো উনার চিকিৎসায় নেই। এ মুহূর্তে বলতেও পারব না কী ধরনের রোগ আছে। ওনার চিকিৎসা যারা করাচ্ছেন, সেই চিকিৎসের কাছে জানতে পারেন।’
ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডাম দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। দেশবাসীকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া করোনার ভয়াবহতা থেকে দেশবাসীর মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পরে উচ্চ আদালত তার সাজা দ্বিগুণ করে। অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার হয়েছে ৭ বছরের সাজা।
তবে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত হলে বিএনপি নেত্রী সাময়িক মুক্তি পান। এরপর আরও দুই দফায় তার মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস করে বাড়ানো হয়েছে।
বিএনপি নেত্রী মুক্তি পাওয়ার পর সে বছর ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে বিএনপি নেতারা তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন। সে সময় রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে বলে দৈনিক যুগান্তকে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।
সাময়িক মুক্তির সোয়া এক বছরে খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি। এমনকি নেতাদের মাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো বার্তাও দেননি। জাতীয় দিবসগুলোতে কোনো বাণীও আসেনি তার পক্ষ থেকে। এমনকি ঈদের শুভেচ্ছাও দেননি। এবার মির্জা ফখরুল তার নেত্রীর হয়ে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঈদের রাতের এই বৈঠকেও কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিএনপির নেতারা কিছুই জানাননি।
বিএনপি নেত্রীর বাসায় যারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবীর খান।