খাদ্যের অভাব, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিবাদে কিউবায় যে গণজাগরণ শুরু হয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করেছে বাংলাদেশের বামপন্থি দল সিপিবি।
দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কিউবার আন্দোলনকারীদেরকে বলেছেন, ‘যা ইচ্ছা তাই করাটা স্বাধীনতা না। বরঞ্চ যা ইচ্ছা তা কেউ করতে পারবে না, সেটি নিশ্চিত করাটাই স্বাধীনতা।’
জনগণের আন্দোলনের পক্ষে বরাবর বক্তব্য রাখা সেলিম কিউবায় আন্দোলনকারীদেরকে তুলনা করেছেন রাজাকারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলেও রাজাকারও ছিল। রাজাকারের ছবি তুলে ইয়াহিয়া খানও প্রচার করেছিল, এখানে সবকিছু শান্তিপূর্ণ আছে।’
কিউবায় গণ আন্দোলনের সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও তীব্র সমালোচনা করেন সিপিবি সভাপতি। বলেন, ‘কিউবা শহরে যখন মিছিল শুরু হয়, তখন আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে একচেটিয়াভাবে মিছিলের ছবি দেখানো শুরু হলো।… অতীতে সাম্রাজ্যবাদী প্রচারণা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা গেছে। এখন আর কাউকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’
গত রোববার কিউবায় সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ছবি: এএফপি
কিউবায় আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে সিপিবি। একে তারা নাম দিয়েছে ‘সংহতি সমাবেশ’।
কিউবায় সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনকে ‘সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন’ দাবি করে সমাবেশে ‘কিউবার পাশে বাংলাদেশ’ ব্যানার প্রদর্শন করে।
সমাবেশে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র, যুব, সাংস্কৃতিক সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সেলিম বলেন, ‘কেউ পছন্দ করতে পারে বা না পারে বাংলাদেশে একদিন না একদিন সমাজতন্ত্র হবে। প্রতিষ্ঠার আগেই আমরা বলে দিচ্ছি, সমাজতন্ত্র হলে চোর, বাটপাড় যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় তাদের কোনো অধিকার বাংলাদেশে থাকবে না। সে সময় আমরা শোষককে অধিকারহীন করে তুলব।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ছবি: নিউজবাংলা
শোষিত জনগণের বিশ্ব তৈরির জন্য সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের দিকে অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে কিউবার পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে বলেও দাবি করেন সিপিবি সভাপতি৷
কিউবার আন্দোলন নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, ‘কিউবাতে অগুণতি মানুষের মিছিল বলে যেটিকে আপনারা আখ্যায়িত করেছেন তার কয়েকগুণ বেশি মানুষ আমেরিকায় কমিউনিস্ট পার্টির ঝান্ডা নিয়ে কিউবার সঙ্গে সংহতি জানানোর জন্য মিছিল করছে৷’
সারা বিশ্বে এ সংহতি আন্দোলন গড়ে তোলার ভেতর দিয়ে কিউবা বিপ্লবের স্থায়িত্ব এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যাবে বলে আশাবাদী সেলিম।
কিউবায় আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে সিপিবি। ছবি: নিউজবাংলা
সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা সামনের কাতারে দাঁড়িয়েছিলে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো তাদের মধ্যে অন্যতম। ফলে আমাদের ঐতিহাসিক দায় এবং ঋণ আছে। বাংলাদেশের মানুষ কিউবার বিপ্লবের পক্ষে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সঞ্জয় কান্তি দাশ বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের বিপর্যয়ের পর কিউবা একটি আলোক বর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র কিউবা বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। কিউবা বিপ্লবকে ধ্বংস করতে না পেরে অর্থনৈতিক অবরোধের পলিসি দিয়ে কোভিড পরিস্থিতিকে তারা কাজে লাগিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এক ধরনের এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে সে দেশের মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।’
আবু সাঈদের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ, কিউবা-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির পক্ষে মফিজুর রহমান লাল্টু, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আকরামুল হক,গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, চারণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে বিপুল কুমার দাসও।
সমাবেশের সঞ্চালনা করেন যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম।