বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কারও নির্দেশে জোট ছাড়িনি, এই হেডলাইনে নিউজ করেন

  •    
  • ১৪ জুলাই, ২০২১ ২০:১০

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। এই কথা স্বীকারও করেছেন জোট ত্যাগের ঘোষণা দেয়া জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। তবে কারও নির্দেশে এই ঘোষণা দেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।

২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার আগে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বলে তথ্য পেয়েছেন জোটের সমন্বয়ক বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। জোট ত্যাগের ঘোষণা দেয়া জমিয়ত নেতা বাহাউদ্দিন জাকারিয়াও এই বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন।

তবে ওই বৈঠকের সঙ্গে তার জোট ছাড়ার ঘোষণার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারও নির্দেশে জোট ছাড়িনি, এই হেডলাইনে নিউজ করেন।’

বুধবার দুপুরে জাকারিয়া হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে। তার দলের সাংগঠনিক শক্তি বা জনভিত্তি এমন কিছু নেই। বিএনপি এসব দলকে জোটে নিয়ে কতটা লাভবান হয়েছে, এ নিয়ে বিতর্ক সেই শুরু থেকেই।

তার পরেও কোনো শরিকের বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে আলোচিত খবর হয়। আর জমিয়ত এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের সংবাদ সম্মেলন ডাকাও প্রমাণ হয়, ঘোষণায় আলোড়ন হয়েছে জোটে।

নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয়েছে নজরুলের। তিনি সরাসরি কোনো অভিযোগ না করলেও জমিয়তের এই সিদ্ধান্তে সরকারের চাপের বিষয়টি ইঙ্গিত দেন।

জমিয়ত চলে যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান

বিএনপি নেতা বলেন, ‘শুনেছি, আজ তারা স্বরাষ্টমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করে এসে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এখন আপনারা অনুমান করে নেন।’

আপনি এই জোট ছাড়ার সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের হাত দেখছেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না আমি তা বলছি না। আমি একটা ইনফরমেশন দিলাম আরকি।’

তবে জমিয়ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু তাদের জানায়নি বলেও জানান নজরুল ইসলাম খান।

জমিয়তের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যাওয়া রাজনীতির বাইরেও অন্য হিসাব-নিকাশ আছে। গত এপ্রিল থেকে হেফাজতে ইসলামের যেসব নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে এই দলের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন আছেন।

এপ্রিলে সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর হেফাজত ও কওমিপন্থি দলের নেতাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যাতায়াত শুরু হয়

এই গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর পর হেফাজত তার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিএনপি জোটের সব নেতাকে বাদ দিয়েছে। আর নেতাদের মুক্ত করতে দফায় দফায় হেফাজতের শীর্ষস্থানীয়রা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে আসছেন।

জমিয়ত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব, শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মনির হোসেন কাসেমী, খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মোহাম্মদ উল্লাহ জামী এখন কারাগারে। গত মার্চ ও এপ্রিলে হেফাজতের সহিংসতা মামলার পাশাপাশি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর তাণ্ডবের মামলায় এদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছে পুলিশ।

‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, তবে জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত এ কারণে নয়’

জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়া জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

২০ দল ছাড়ার ঘোষণায় ওই বৈঠকের কী ভূমিকা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখা করা না করা সেটা বিষয় না। তবে আমরা কারও নির্দেশে জোট ছাড়িনি। আমরা কারও পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের দলের সিনিয়ররা আলোচনা করে তৃণমূল নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

‘তারা শরিকদের মূল্যায়ন করে না।‘

কী ধরনের মূল্যায়ন আপনারা চান?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা কারও পরামর্শ নেয় না। একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়। তাছাড়া এত আলেম গ্রেপ্তার হলেও তারা প্রতিবাদ করেনি। দুঃসময়ে পাশে না থাকলে কিসের জোট?’

বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর সংবাদ সম্মেলন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জমিয়ত নেতা বলেন, ‘জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, সম্প্রতি শরিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ, মতামত না নিয়ে তিনটি আসনের উপনির্বাচন এককভাবে বর্জনের ঘোষণা করা, বিএনপি মহাসচিবের শরিয়া আইনে বিশ্বাসী না হওয়ার বক্তব্য দেয়া, দেশব্যাপী আলেম ওলামাদের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ না করা এবং জোটের শীর্ষ নেতা জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর বিএনপির পক্ষ থেকে সমবেদনা প্রকাশ না করা এবং জানাজায় অংশগ্রহণ না করায় জমিয়তের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাই জমিয়ত মনে করে, ২০ দলীয় জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করাই জমিয়তের জন্য কল্যাণকর।’

‘জামায়াত ছাড়া অন্য দল গোনার মতো না’

২২ বছর জোটবদ্ধ থাকার পর ২০ দল ছেড়ে যাওয়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পাত্তাই দিচ্ছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার।

দুই দশকের জোটসঙ্গীর এভাবে চলে যাওয়াকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনার থেকে মাত্র শুনলাম। যদিও তারা থাকল কি থাকল না, তাতে বিএনপির এমন কোনো ক্ষতি হবে না। আসলে জামায়াত ছাড়া অন্য দল গোনার মতো না।’

তিনি বলেন, ‘তারা তো বাতাসে উড়ে, বাতাস যেদিকে থাকে, সেদিকে তারা যায়। তাদের নিজের কোনো অস্তিত্ব নেই।’

কবে জোট, কারা ছেড়ে গেল

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর মোর্চা ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে গঠিত হয় চারদলীয় জোট।

১৯৯৯ সালে জাতীয় পার্টি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে গঠন হয় চারদলীয় জোট। সে সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও এই জোটের নেতা ছিলেন। পরে দলের সংখ্যা বাড়ায় হয় ২০ দল

এই ইসলামী ঐক্যজোটের একটি শরিক ছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী।

ইসলামী ঐক্যজোট পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে। আর চারদলীয় জোট গঠনের সময় ইসলামী ঐক্যজোটের প্রধান নেতা আজিজুল হক তারও ১০ বছর আগে ২০০৬ সালেই চারদলীয় জোট ছাড়েন।

অবশ্য কোনো দল জোট ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর একই নামে অন্য দল করে ২০ দলে থেকে গেছেন কয়েকজন নেতা। এ কারণে জোটের দল কখনও কমে না।

২০১৮ সালে লেবার পার্টিও একইভাবে ২০ দল ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর দলের দুজন নেতা নিজেকে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ঘোষণা করে ২০ দলে থেকে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এ বিভাগের আরো খবর