বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে ধর্মভিত্তিক আরও একটি দল। কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামীর একাংশ জানিয়েছে, তারা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখছে না।
অবশ্য একই নামে জমিয়তের আরেক অংশ এখনও ২০ দলীয় জোটে আছে। ফলে জোটে দলের সংখ্যা একই থাকছে।
বুধবার পুরানা পল্টনে দলীয় রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
এর আগেও একাধিক দল বিএনপির জোট ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও জোটে দলের সংখ্যা একই থাকে।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় লেবার পার্টি। তবে ছোট ওই দলের দুই জন নেতা নিজেদের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ঘোষণা করে একই নামে দল নিয়ে জোটে থেকে যান।
২০১৬ সালের ৭ জুন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট। যদিও আমিনী এর আগেই মারা গিয়েছিলেন।
তখনও ইসলামী ঐক্যজোট নামেই আরও একটি অংশ থেকে যায় ২০ দলীয় জোটে।
বিএনপি শাসনামলে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে আলোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বাবা আজিজুল হকের খেলাফত মজলিস।
সে সময়ও মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বে খেলাফত মজলিস নামে আরও একটি দল গঠন হয় এবং তারা বিএনপি-জামায়াত জোটে থেকে যান।
২০ দল ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জমিয়ত নেতা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, ‘২০ দলীয় জোট ত্যাগ করা জমিয়তের জন্য কল্যাণকর। আজ থেকে জোটের কোনো কার্যক্রমে জমিয়ত থাকবে না।’
জোট ছাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি, জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, পরামর্শ না করে উপনির্বাচন এককভাবে বর্জন, আলেমদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ না করা, প্রয়াত জমিয়ত মহাসচিব নূর হোসেন কাসেমীর মৃত্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে সমবেদনা না জানানো এবং তার জানাজায় শরিক না হওয়ার কারণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এক বিশেষ পরিস্থিতিতে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য গড়ে তোলে। এর ধারাবাহিকতায় ঐক্যবদ্ধভাবে কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণ করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, সম্প্রতি শরিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ মতামত না নিয়ে তিনটি আসনের উপনির্বাচন এককভাবে বর্জনের ঘোষণা করা, বিএনপি মহাসচিবের শরিয়া আইনে বিশ্বাসী না হওয়ার বক্তব্য দেয়া, দেশব্যাপী আলেম ওলামাদের জেল জুলুমের প্রতিবাদ না করা এবং জোটের শীর্ষ নেতা জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর বিএনপির পক্ষ থেকে সমবেদনা প্রকাশ না করা এবং জানাজায় অংশগ্রহণ না করায় জমিয়তের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাই জমিয়ত মনে করে, ২০ দলীয় জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করাই জমিয়তের জন্য কল্যাণকর।’
সঙ্গীর জোট ছেড়ে যাওয়া বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা এখনও আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আমরা শুনেছি মাত্র।’
বিএনপি যখন জামায়াতের পাশাপাশি কওমিপন্থি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করে, তখন থেকেই জমিয়ত এই জোটের সদস্য। ইসলামী ঐক্যজোট মূলত কওমিপন্থি দলগুলোর একটি মোর্চা ছিল। ছোট ছোট অনেক দলের একটি ছিল জমিয়ত।
জমিয়ত এখন দুই ভাগে বিভক্ত। দুই অংশই বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক ছিল।
‘ভারপ্রাপ্ত’ হয়ে একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা জিয়াউদ্দিন ও আর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
এই অংশের সভাপতি মাওলানা আবদুল মোমিন গত বছর মারা গেলে মাওলানা জিয়াউদ্দিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান। গত বছর হেফাজতের মহাসচিব থাকাকালে নূর হোসাইন কাসেমী মারা গেলে হাসচিব হন মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী।
হেফাজতের নাশকতার মামলায় গত এপ্রিলে আফেন্দি গ্রেপ্তারের পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বাহাউদ্দিন যাকারিয়া।
জমিয়ত ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যেতে পারে, এমন গুঞ্জন কয়েকদিন ধরেই ছিল। এই দলটির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাই হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটিতে ছিলেন। আর নাশকতার ঘটনায় দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এখন কারাগারে।
গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে আছন জুনায়েদ আল হাবিব, শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মনির হোসেন কাসেমী, খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মোহাম্মদ উল্লাহ জামী।
তাদের মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে জমিয়ত নানা দেন দরবার করছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
জমিয়তের দ্বিতীয় অংশটির নেতৃত্বে রয়েছেন মনসুরুল হাসান রায়পুরী (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম (মহাসচিব)। এরা ২০ দলীয় জোটেই আছেন।