সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১২ বছর যারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে আছে, শুধু ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য তারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসকে সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করে জনগণকে ও এই প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে।’
বুধবার বিএনপির ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মাননা’ কমিটির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্স গঠন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব অভিযোগ করেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমরা যখন প্রকৃত ইতিহাসের কথা বলি তখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে। কারণ তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানে, যদি ৫০ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাস জানে আওয়ামী লীগের এদেশে রাজনীতি করার কোনো ক্ষেত্র থাকবে না। আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্য তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যারা ক্ষমতায় গায়ের জোরে আছেন, ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছেন আরও ক্ষমতায় থাকার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করছেন। জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বলছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলেছেন। যদি তাই হয় জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানের অধীনে যারা বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছিলেন, তারাও কি পাকিস্তানের চর ছিল কিনা তা এই সরকারকে জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে।’
১৯৭১ সালের ৭ জুলাই মুক্তিবাহিনীর প্রথম সামরিক বিগ্রেড জেড ফোর্স গঠন করা হয়। এই পদাতিক বিগ্রেডের নেতৃত্বে দেন ১ নং সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। জিয়াকে বিগ্রেড কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি তাকে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পদে পদোন্নতি দিয়ে ১১ নং সেক্টরেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়।
জেড ফোর্সের অন্যতম সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে আমরা সবাই একজন মহান রাষ্ট্রপতি হিসেবে জানি। তিনি যে কত কৌশলী সমরনায়ক ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সামরিক অঙ্গনে তিনি একজন তেজদীপ্ত কমান্ডার ছিলেন। আজকে বিনাভোটের এই সরকারের কারণে ক্রমাগতভাবে সেই ইতিহাস বিকৃত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জেড ফোর্স ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিগ্রেড কিন্তু এটি ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ বিগ্রেড। অন্য দুইটি যে বিগ্রেড ছিল কে ফোর্স এবং এস ফোর্স সেখানে দুটি করে পদাতিক ব্যাটালিয়ন ছিল। কিন্তু জেড ফোর্সে তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন ছিল। এই জেড ফোর্স ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শক্তিশালী একটি বিগ্রেড, যারা রণাঙ্গনে অনেক গৌরবদীপ্ত ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সাহসিকতা পদক অর্জন করেছে এই ফোর্স। আত্মদানে ও শহীদের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি এই জেড ফোর্সে।’
হাফিজ বলেন, ‘রৌমারী এমন একটি জায়গা এটি সবসময় স্বাধীন রেখেছে জেড ফোর্স। এখানে বারবার নৌপথে আক্রমণ চালিয়েছে পাকিস্তান বাহিনী। কোদালকাঠিতে যুদ্ধে হয়েছে কয়েকবার। পরে তারা রণে ভঙ্গ দেয়। এই রৌমারী সবসময় স্বাধীন ছিল।
‘রৌমারীতে জিয়াউর রহমানে সঙ্গে আমি গিয়েছি, আমাদের অন্যান্য কমান্ডাররা গিয়েছে। সেখানে আমরা ডাক চালু করেছি, একটি সিভিল প্রশাসনও চালু করেছিলাম। এই রৌমারী নয়টি মাস মুক্ত রাখার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে জেড ফোর্স।’
দলের ‘স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী মুক্তিযোদ্ধা সন্মাননা কমিটি’র আহ্বায়ক ব্যারিস্টার অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক এবং মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান।