সংগঠনের সঙ্গী রাশেদ খাঁন সরকারের গোয়েন্দাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, এমন অভিযোগ ছিল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের। দাবি, গোয়েন্দারা সংগঠনে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছেন।
অবশ্য তার এই বক্তব্য সমঝোতার আগের। বিকেলে রাশেদ খাঁন বিরোধ মিটিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসানের বার্তা দেয়ার আগে নিউজবাংলাকে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন নুর।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আলোচিত হওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্তৃত্ব নিয়ে নুর-রাশেদের মধ্যে বিরোধের কথা এতদিন সামনে আসেনি।
গত রাতে হঠাৎ করেই রাশেদকে বহিষ্কার করে নুরের বিজ্ঞপ্তি আর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে রাশেদের পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইন জগতে তোলপাড়। কী হয়েছে জানতে চায় দুই জনের হাজারো ভক্ত।
রাশেদকে বহিষ্কার করে একটি বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে পোস্ট করেন নূর। এতে তিনি নিজেকে বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
নুরের এমন সিদ্ধান্তে রাশেদ চটেন। নুরকে দেন পাল্টা চিঠি। এতে কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা নিয়ে কারণ দর্শাতেও বলা হয়।
এই পাল্টাপাল্টি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে হঠাৎ ইউটার্ন নেন রাশেদ। তিনি তার ফেসবুকে স্ট্যটাস দিয়ে বলেন, তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এর অবসান হয়েছে।
তবে রাশেদের পরের বক্তব্য আসার আগে নুর কথা বলেন নিউজবাংলার সঙ্গে। তার অভিযোগ, রাশেদ খানের পেছনে গোয়েন্দা বাহিনী থাকতে পারে।
সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের গণ্ডি ছাড়িয়ে নুর এখন চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক দল গঠনের। এর অংশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ ছাত্র, যুবক ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ। এর সমন্বয়ক হিসেবে আছেন তিনি নিজে। আর রাশেদ দায়িত্ব পালন করতে থাকেন ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে।
রাশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ডালি মেলে নুর বলেন, ‘বিভিন্নভাবেই রাজনৈতিক দল ভাঙনে সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী বা সরকারের ইন্ধন থাকে৷ আমরা যেহেতু সরকার বিরোধী জায়গা থেকে রাজনীতি করি আমাদের প্লাটফর্ম ভাঙনের জন্য এখানেও গোয়েন্দা বাহিনী জড়িত থাকতে পারে।’
নুরের পোস্ট করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ সভায় সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ এর আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে কেন তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, তার কারণ দর্শাতে তদন্ত কমিটির কাছে যথাযথ ব্যাখ্যা দেয়ার কথাও জানানো হয়।
আব্দুজ জাহের নামে একজনকে এই কমিটির প্রধান করা হয়।
একই সময়ে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দেয় রাশেদ খাঁন। এতে তিনি লেখেন, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের কোনো ‘সমন্বয়ক’ পদবি নেই। তাই কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা চরম অসাংগঠনিক কার্যকলাপ।
‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহারকারী নুরের বক্তব্য জানতে চেয়ে কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জানানোর নির্দেশও দেয়া হয় এই চিঠিতে।
একই সঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের সকল বিশ্ববিদ্যালয়-জেলা-মহানগর ও উপজেলা কমিটিকে বিভ্রান্ত না হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিজ্ঞপ্তিতে আহ্বান জানানো হয়।
রাশেদ খাঁন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক৷ একজন যুগ্ম আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করতে পারে না। আমি আহ্বায়ক। আমাকেও বহিষ্কার করার এখতিয়ার সে রাখে না। আমরাই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা৷ তিনি অসাংগঠনিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আহ্বায়ককে বহিষ্কার করতে পারে না৷’
নুর বলেন, “রাশেদ খান ‘কমল বড়ুয়া’ নামের একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে সংগঠন ভাঙার চেষ্টা করছিল। সে সংগঠনের ত্যাগী নেতাদের নিয়ে নানা ধরণের বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জন্য একটা সংঘবদ্ধ গ্রুপ তৈরি করছি। এ অভিযোগে তাকে এবং সোহরাব হোসেনকে (যুগ্ম আহ্বায়ক) দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।”