বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন, জি এম কাদেরের প্রশ্ন

  •    
  • ৩ জুলাই, ২০২১ ২১:৪১

জি এম কাদের বলেন, ‘অন্য জায়গা থেকে কি করোনা ছড়ায় না? শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে কতদিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, তা নির্দিষ্ট করতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে মানসিকসহ বিভিন্ন সমস্যা আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে দেশে। আত্মহত্যার প্রবণতাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে।’

অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শনিবার সকালে বাজেট অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যুক্তি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে বৈশ্বিক সংকট করোনার মধ্যে চলতে পারা যায় না। শতকরা ৫ শতাংশের নিচে সংক্রমণ নেমে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাস্থ্যসম্মত বা বিজ্ঞানসম্মত না। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের দেশ একটি মূর্খ প্রজন্মের দেশে পরিণত হবে।

‘এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কোভিড শেষ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। নাকি অন্য সব খাতেও এ যুক্তি খাটে। আমাদের দেশে সবকিছু চালু আছে এবং এই বাচ্চারাই বাবা-মায়ের হাত ধরে শপিংমলে যাচ্ছে, বাসে চড়ছে, বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করছে এবং তারা সংক্রমিত হওয়ার জন্য শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই কি করোনার আখড়া?’

তিনি বলেন, ‘অন্য জায়গা থেকে কি করোনা ছড়ায় না? শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে কতদিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, তা নির্দিষ্ট করতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে মানসিকসহ বিভিন্ন সমস্যা আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে দেশে। আত্মহত্যার প্রবণতাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ফাইল ছবি

‘স্কুলে না আসলেও তাদের যেন শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয়, এ ধরনের বিকল্প চিন্তা করা যায় কি না। তারপরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত। অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি দেশের মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবে, এটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। যারা স্কুলে যেতে চায়, তাদের সুযোগ দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা হলো এ খাতে সার্বিকভাবে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা বাড়ানো। উপজেলা ইউনিয়ন পর্যন্ত যেখানে মঞ্জুরিকৃত পদ খালি আছে, সেখানে ডাক্তার-নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারী যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ দিতে হবে। যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

‘প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কোভিডের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইউনিয়ন পর্যন্ত অক্সিজেন ও ভ্যান্টিলেশনসহ আইসিইউ সেবা চালু করতে হবে। কমপক্ষে জেলা পর্যায় পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার ব্যবস্থার আওতা বাড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষ যে শহরমুখী হয়, তার একটি বড় কারণ চিকিৎসা সুবিধা শুধু শহরেই পাওয়া যায়। গ্রামে চিকিৎসা সুবিধা বাড়লে সেখানকার মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় আমি এ কথাগুলো বলেছিলাম।

‘আজ এক বছর পরেও এ কথাগুলো আমাকে বলতে হচ্ছে। এক বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে হাল ছিল, এখনও সেই হালই রয়েছে। কোনো উন্নতি হয়নি। যদি উন্নতি হতো, তাহলে এত মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ত না।’

জি এম কাদের বলেন, ‘মৃত্যুর হার বেড়ে কোন অবস্থায় পৌঁছাবে, সেটা এখনও আমরা নিশ্চিত নই। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়ালে এবং এই হারে যদি মৃত্যু হতে থাকে, তাহলে মহামারিতে দেশ ছারখার হয়ে যাবে। ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা আমাদের চেয়ে উন্নত। সেখানে যে বিভীষিকা কোভিড তৈরি করেছে, সেখানে আমাদের নাজুক চিকিৎসাব্যবস্থায় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি এক বছর আগে থেকে কাজ শুরু করত, তাহলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত। উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অক্সিজেন-ভ্যান্টিলেশন সুবিধা পৌঁছায়নি। নেয়া হয়নি ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য জনবল। ফলে অন্য রোগীর সঙ্গে কোভিড চিকিৎসা করতে গিয়ে করোনা রোগীরা ঠিকভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বেসরকারি খাতে কিছু সুবিধা তৈরি হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয় এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রামের মধ্যবিত্তরা এই সুবিধা নিতে পারছেন না।’

নিজের বক্তৃতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কাদের বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট নিয়ে একজন সংসদ সদস্য কিছু আপত্তি উপস্থাপন করেছিলেন। সে সম্পর্কে আইনমন্ত্রী মোবাইল কোর্ট গঠন সঠিক বলে যুক্তি দিয়েছিলেন। বলতে চাই, এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গগুলোর সঙ্গে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

‘মাসদার হোসেন মামলার রায় হয়েছে এবং ১২ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা এখনও সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। এর অন্যতম উদাহরণ মোবাইল কোর্টের নামে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এখনও বিচারিক ক্ষমতা রয়ে গেছে। এই ক্ষমতা আইন ও সংবিধানবহির্ভূতভাবে তাদের হাতে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়।’

এ বিভাগের আরো খবর