তারেক রহমানকে নিয়ে কথা বললে ‘কিছু হয়ে যাওয়ার’ বিষয়ে ছাত্রদলের সহসভাপতি ওমর ফারুক কাউসার প্রকাশ্যে ‘হুমকি’ দেয়ার পর গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আক্রমণ করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। যদিও তিনি নাম উল্লেখ করেননি তার।
১৯৭১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসে নেয়ার দিনটি স্মরণে বিএনপির এক ভার্চুয়াল আলোচনায় কথা বলছিলেন তিনি।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি ইঙ্গিত করে গয়েশ্বর বলেন, ‘আজকে পত্রপত্রিকায় কিছু সুধীজন আমাদের মাঝে মাঝে কিছু কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন, আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলতে থাকেন। তাদের সবিনয়ে বলব যে, এই কথাগুলো প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদকে উৎসাহিত করে, যারা ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতায় থাকার পথটাকে প্রশস্ত করে।’
‘জনগণকে বিভ্রান্ত না করতে’ জাফরুল্লাহর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা গণতন্ত্রের, সমস্যা ফ্যাসিজমের, সমস্যা আইনের শাসনের, সমস্যাটা হলো জাস্টিস নাই।
‘আমাদের নেতেৃত্ব কিন্তু পদে পদে পরীক্ষিত, পদে পদে উত্তীর্ণ; শত নির্যাতন-অত্যাচারের কাছে বেগম খালেদা জিয়া মাথা নত করেননি; যেমনি জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের কাছে মাথা নত করেননি। তিনি বুক টান করে একটি দেশ উপহার দিয়েছেন, তেমনি আমাদের নেতৃত্বও পরীক্ষিত।'
চীনপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনেও তিনি মধ্যস্থতা করেন। আর নানা সভা-সমাবেশে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপিকে নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আসছেন। একাধিক দিন তিনি পত্রিকায় খোলা চিঠি লিখে খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করেছেন।
গত ২৭ জুন বিএনপিপন্থি একটি সংগঠনের আলোচনায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা কথা বলছিলেন। সে সময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে নামতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে তারেক রহমানকে দুই বছর চুপচাপ থেকে পড়াশোনা করতে বলেন। তিনি এও বলেন, বিএনপি এখন লন্ডন থেকে আসা ওহিতে চলছে।
এই বক্তব্য দেয়ার সময় শ্রোতার আসনে থাকা ছাত্রদল নেতা কাউসার উঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কে যে বিএনপিকে আপনার কথায় চলতে হবে?’
নাম উল্লেখ না করে বিএনপির আলোচনায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সমালোচনা করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়তারেক রহমানকে নিয়ে জাফরুল্লাহ ‘উল্টাপাল্টা’ কথা বলেন অভিযোগ করে কাউসার এও বলেন যে, ‘আপনি আমাদের নেতাকে নিয়ে কথা বলবেন না। যদি বলেন, পরবর্তী সময়ে কিছু হলে কিন্তু আমরা দায়ী না।’
সেদিনের ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে জাফরুল্লাহকে ফোন করেননি কেউ। আর কাউসারকে কিছু বলেনি ছাত্রদল। বরং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা কাউসারের সেদিনের বক্তব্য সমর্থন করেন।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিবাদকে (কাউসারের বক্তব্য) আমরা সমর্থন করি। ভবিষ্যতে ঘটলেও আমরা তাই করব। একই সঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বুজুর্গ ব্যক্তির থেকে এ রকম আচরণ আমরা আশা করি না।’
আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও বক্তব্য রাখেন।